সমশের মবিন চৌধুরীর পদত্যাগের পর বিএনপির ভাঙন এখন ‘সময়ের ব্যাপার মাত্র’ বলে মন্তব্য করেছেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।
শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সভায় তিনি বলেন, ”বিএনপির শুভ বুদ্ধিমানরা খুব তাড়াতাড়ি দল ছাড়বেন। আর এর জন্য বিএনপির ভাঙন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।”
বিএনপি নেতৃত্ব ‘বিপদের মুখে থাকায়’ দলটির অনেক নেতা এখন মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল।
“বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট এবং ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা নিষ্পত্তির পথে। দলের নেত্রীর এই বিপদ দেখে বিএনপির অনেক নেতা দল ছাড়ছেন, আরও ছাড়বেন,” বলেন তিনি।
সরকারবিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা করতে ব্যর্থতার মধ্যে বিএনপির কঠিন সময়ে বৃহস্পতিবার হঠাৎ করেই দল থেকে পদত্যাগ করে অবসরের ঘোষণা দেন সদ্য বিদায়ী ভাইস চেয়ারম্যান সমশের মবিন চৌধুরী।
শারীরিক অসুস্থতাকে কারণ দেখিয়ে অবসরে ঘোষণা দেওয়ার পর সাবেক কূটনীতিক সমশের মবিন বলেছিলেন, বিএনপি এখন আর জিয়াউর রহমানের পথে নেই। তবে অন্য কোনো দলে যাওয়ার পরিকল্পনা তার নেই।
এর প্রতিক্রিয়ায় ওই দিন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আরও অনেকেই এখন বিএনপি থেকে বের হয়ে আসবেন বলে তার বিশ্বাস। আর আওয়ামী সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের সমশেরের পদত্যাগকে দেখছেন ‘বিএনপির অভ্যন্তরীণ কলহের করুণ পরিণতি’ হিসেবে।
বর্ধিত সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, “আমি আগেই বলেছিলাম, বিএনপি মুসলিম লীগ হয়ে যাবে। এখন শমসের মবিনের বিএনপি ছাড়ার মাধ্যমে তা প্রমাণ হতে যাচ্ছে। দেরিতে হলেও মবিন সাহেবের শুভ বুদ্ধির উদয় হয়েছে।”
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজ সভাপতিত্ব করেন।
সভায় বক্তব্যে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সমালোচনা করে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল বলেন, তারা বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর অর্থে পরিচালিত হচ্ছে।
“টিআইবি ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশানাল বিএনপি-জামায়াতের অর্থের কাছে নিজেদের বিবেক-বুদ্ধি বন্ধক দিয়েছে। যেমন অর্থ দেয় তেমন প্রেসক্রিপশন দিচ্ছে টিআইবি ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যশানাল।”
গত ২৫ অক্টোবর বিএনপিবিহীন দশম সংসদের কার্যক্রম নিয়ে ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ’ প্রতিবেদন প্রকাশ করে জার্মানভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ চ্যাপ্টার টিআইবি।
প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “বর্তমান সংসদ ক্ষমতাসীন দলের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের ভুবনে পরিণত হয়েছে। সংসদের বাইরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার প্রাতিষ্ঠানিক ফোরামে পরিণত হয়েছে।”
অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের রিভিউ শুনানির আগে ২৭ অক্টোবর গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে তাদের মুক্তি দাবির পাশাপাশি বাঙালির স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামকারী মুক্তিযোদ্ধাদের বিচারের কথা বলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, “স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিগুলোও গুরুতর অপরাধ করেছিল। তবে তাদের কারও বিরুদ্ধে তদন্ত হয়নি বা কাউকে বিচারের আওতায় আনা হয়নি।”
এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে অ্যামনেস্টিকে তা প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে বলেছে যুদ্ধাপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চ।
এ বিবৃতির মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটি কার্যত মানবতাবিরোধীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বলে মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেছেন।