কুয়াশা ভেজা সকাল জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি


প্রকৃতিতে এখন ঋতুবদলের পরশ। ভোরের শিশির আর কুয়াশা যেন জানিয়ে দিচ্ছে শীত আসছে। শরৎ শেষে হেমন্তের আগমন, আর সেই রূপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে মাগুরার গ্রামবাংলার প্রকৃতিতে। ভোর হতেই মাঠের ঘাসে জমে উঠছে মুক্তার মতো ঝিকিমিকি শিশিরবিন্দু, বাতাসে লাগছে হালকা হিমেল ছোঁয়া।

দিনের বেলায় রোদের তাপ কিছুটা অনুভব করা গেলেও, রাত নামলেই প্রকৃতি হয়ে উঠছে স্নিগ্ধ ও শীতল। গভীর রাতে বইছে ঠান্ডা হাওয়া, আর ভোরে চারপাশ ঢেকে যাচ্ছে কুয়াশার চাদরে। দূর থেকে তাকালে মনে হয়- মাটির বুকে ছড়িয়ে আছে এক পাতলা সাদা আস্তরণ।

এ সময় মাঠে দোল খাচ্ছে সোনালি ধানের শীষ, কৃষকের মুখে ফুটছে তৃপ্তির হাসি। কাশফুল, ধানের সুবাস আর শিশির ভেজা সকালের বাতাসে বাংলার গ্রামীণ প্রকৃতি হয়ে উঠেছে আরও স্নিগ্ধ, আরও প্রাণবন্ত। ষড়ঋতুর এই দেশে ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় প্রকৃতির রূপ। দূর্বাঘাস, ধানের পাতা আর ফুলের পাপড়িতে জমে থাকা শিশিরবিন্দু জানান দিচ্ছে শীত আসতে আর খুব বেশি দেরি নেই। প্রকৃতি যেন প্রস্তুত শীতকে স্বাগত জানাতে।

মাগুরার শালিখা উপজেলার পুকুরিয়া গ্রামের শিক্ষক ও কবি ইমদাদুল মোল্যা বলেন, হেমন্ত এলেই মনে হয়, নবান্নের আমেজ দরজায় কড়া নাড়ছে। নতুন ধানের চাল আর পিঠার সুবাসে ঘরে ঘরে শুরু হবে উৎসবের প্রস্তুতি। হালকা শীতের হাওয়া যেন মনে জাগায় প্রিয়জনের স্মৃতি।

মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার ভ্যানচালক বাটু জানান, পেটের দায়ে প্রতিদিন ভোরবেলাতেই ভ্যান নিয়ে বের হতে হয়। এখন কুয়াশা পড়ে, ঠান্ডা লাগে। তাই আস্তে আস্তে ভ্যান চালাই।

শ্রীপুরের তারাউজিয়াল গ্রামের বাসিন্দা রেজওয়ানা ফেরদৌস বলেন, দিনে গরম থাকলেও গভীর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত কুয়াশা দেখা যাচ্ছে। ফ্যান বন্ধ রাখতে হয়। মনে হচ্ছে, শীত একেবারেই দরজায়।

শীতের এই আগমনী বার্তা গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে এনে দিয়েছে এক নতুন আমেজ। পাতলা কাঁথা, চাদর আর কম্বল ফিরে পেয়েছে খাটের জায়গা। দিনের রোদ কিংবা সন্ধ্যার জ্যোৎস্না শেষে রাত নামলেই বাড়ছে হালকা শীতের অনুভূতি।

প্রকৃতির এই পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সজীব হয়ে উঠছে গ্রামীণ অর্থনীতিও। নতুন ধান কাটা, গুড় তৈরি, বাজারে কৃষিপণ্য বিক্রি সব মিলিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ।

হেমন্তের এই প্রভাতে তাই বাংলার গ্রাম যেন নতুন করে সাজছে। কুয়াশা-ভেজা সকাল, সোনালি ধানের গন্ধ আর শিউলি-বেলির সুবাসে ভরে উঠেছে রূপসী বাংলার প্রকৃতি। চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে এক অনির্বচনীয় শান্তি ও প্রশান্তির সুর যা জানিয়ে দিচ্ছে, শীত ধীরে ধীরে, মৃদু পায়ে এগিয়ে আসছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মাগুরার উপপরিচালক মো. তাজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রকৃতিতে শীতের আগমন জানান দিচ্ছে। ১৫ই অক্টোবরের পর থেকে স্বাভাবিকভাবে ঠান্ডা পড়া শুরু করেছে। আজ শুক্রবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আস্তে আস্তে ঠান্ডা বাড়তে থাকবে। ইতিমধ্যে জেলার বিভিন্ন বাজারে শীতকালীন ফসল আসতে শুরু করেছে। সবজির জন্য সবচেয়ে ভালো সময় হলো শীতকাল। শীতকালীন শাকসবজিতে রয়েছে মানবদেহের জন্য উপকারী ভিটামিন এ, বি, সি এবং ক্যালসিয়াম, লৌহ, আয়োডিন প্রভৃতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *