টঙ্গীতে অগ্নিকান্ডের পর থেকে বন্ধ শতাধিক রাসায়নিক দোকান

Slider বাংলার মুখোমুখি
Exif_JPEG_420

ছবি( টঙ্গী স্টেশন রোডে বন্ধ সমবায় কমপ্লেক্স মার্কেট, আজ বেলা ১২ টায় তোলা ছবি)

গাজীপুর: সোমবার বিকেলে টঙ্গীর সাহারা মার্কেটে ফেমাস নামের রাসায়নিক গুদামে ড্রাম বিস্ফোরণের পর থেকে বন্ধ রয়েছে টঙ্গীর রাসায়নিক মার্কেট খ্যাত সমবায় কমপ্লেক্স। আবাসিক এলাকায় প্রতিষ্ঠিত শতাধিক রাসায়নিক দোকানের পাইকারী এই মার্কেট ঘিরে এখন চলছে জল্পনা কল্পনা। কোন দূর্ঘটনা হলে আবাসিক বাসিন্দারা কতটুকু নিরাপদ থাকতে পারবেন তা সৃষ্টি হয়েছে উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা।

আজ বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে এই তথ্য জানা যায়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, টঙ্গী স্টেশন রোডে অবস্থিত সমবায় কমপ্লেক্স মার্কেট। আবাসিক এলাকা লাগুয়া তিন তলা বিশিষ্ট এই ভবনে শতাধিক রাসায়নিক দোকান রয়েছে। টঙ্গী শিল্পাঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে থাকা শতাধিক রাসায়নিক গুদাম থেকে এই মার্কেটে রাসায়নিক আসে। এই সকল দোকান থেকে পাইকারী দরে বিক্রি হচ্ছে রাসায়নিক। দোকানগুলোর একাধিক কর্মচারীর সাথে পরিচয় গোপন করে কথা বলে জানা গেছে, কোন দোকানেই অভিজ্ঞ কর্মচারী বা কর্মকর্তা নেই। কোন রাসায়নিক কি ভাবে বহন বা সরবরাহ করতে হয়, সে সম্পর্কে কিছুই জানেন না তারা।

টঙ্গীর সমবায় কমপ্লেক্সের রাসায়নিক মার্কেটের একাধিক সূত্র জানায়, ২২ সেপ্টেম্বর সোমবার টঙ্গীতে বৃষ্টি হয়। বৃষ্টির মধ্যে এক গাড়ি ভর্তি কয়েক টন রাসায়নিক আসে ফেমাস কেমিক্যালের গোডাউনে। রাসায়নিক মাল ভর্তি গাড়ি টঙ্গীর সাহারা মার্কেটের ফেমাস কেমিক্যালের সামনে আসার পর বৃষ্টি নামে। মাল নামানোর আগেই বৃষ্টিতে ভিজে গাড়িতে থাকা রাসায়নিক।

জানা গেছে, সোমবার টঙ্গীর সাহারা মার্কেটের ফেমাস কেমিক্যালে বিস্ফোরণের পর থেকে সমবায় কমপ্লেক্স মার্কেট বন্ধ রয়েছে। তবে কৌশলে রাসায়নিক দোকানের ক্ষতিকর দাহ্য পদার্থ সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। এই সরানোর কাজ শেষ হলে মার্কেটটি খোলা হবে।

টঙ্গী সমবায় কমপ্লেক্স মার্কেট বা কেমিক্যাল মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আল মদিনা কেমিকেলের মালিক জলিলুর রহমান বলেন, পার্শ্ববর্তী ফেমাস কেমিক্যালে দূর্ঘটনার কারণে শোক প্রকাশ করা হচ্ছে। শোক পালনের অংশ হিসেবে মার্কেট বন্ধ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কেমিক্যাল ব্যবসায়ী জানায়, বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে অসাবধানতার কারণে দূর্ঘটনা ঘটে। গত সোমবার বৃষ্টির মধ্যে ফেমাস কেমিক্যালের এক গাড়ি হাইড্রোস ও সালফার আসে। বৃষ্টির মধ্যে এই সকল মাল পানিতে ভিজে যায়। এই কারণেই বিস্ফোরণ কি না! তা বিশেজ্ঞরা বলতে পারবেন।

ঘটনার দিন রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের দেয়া প্রেস ব্রিফিং এ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক
ছালেহ উদ্দিন বলেন, গুদামটিতে সোডিয়াম বাই কার্বোনেট, স্ট্রোন, সোডা, ব্লিসিং পাউডার, মেটা হাইড্রোসহ—এমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু কেমিক্যাল ছিল। এসব কেমিক্যাল যেভাবে রাখা প্রয়োজন অর্থাৎ হাউজ কিপিং করা ছিল না। আমরা মালিকপক্ষ বা ভাড়াটিয়া যারা রয়েছে তাদের খুঁজছি, তাদের পেলে আমরা ভেতরের সব কেমিক্যাল সম্পর্কে তথ্য পেতাম ।

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সোয়া তিনটায় টঙ্গী বিসিকের রেল স্টেশন রোডের পাশে সাহারা মার্কেট টিনশেড সেমিপাকা ভবনে অবস্থিত ফেমাস কেমিক্যাল গোডাউনে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিটের ৫৩ জন সদস্য আগুন নিয়ন্ত্রণে করে। এসময় প্রতিষ্ঠানটিতে থাকা কেমিক্যালের ড্রাম বিস্ফোরণে ফায়ার সার্ভিস এর ৪ জন ও স্থানীয় একজন সহ ৫ জন অগ্নিদ্বগ্ধ সহ ৮জন আহত হয়। এর মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার
বিকেল ৩ টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফায়ার ফাইটার শামীম আহমেদ মারা যায়।

এই আগুনের ঘটনায় দ্বগ্ধরা হলেন—ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক জান্নাতুল নাঈম (৪৩) ৪২%, ফায়ার ফাইটার মো. শামীম (৪৫) ১০০%, মো. নুরুল হুদা (৪৫) ১০০%, ও মো. জয় হাসান (২৫) ৫% ও দোকান কর্মচারী বাবু হাওলাদার (২০), ৮০ % দ্বগ্ধ হয়েছেন। এদের মধ্যে শামীম আহমেদ মারা গেছেন।

আহত হয়ে টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি আছেন টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো: শাহিন আলম (৪২), পথচারী আশিক(১৭) ও গোডাউন কর্মচারী লিটন (৪০)। এই ঘটনার পর রাসায়নিক ব্যবসাখ্যাত টঙ্গীতে সাধারণ মানুষ ও এই ব্যবসা ঘেঁষা আবাসিক এলাকায় আতংক দেখা দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *