আমার সন্তানদের তুমি দেখে রেখো আর আমাকে মাফ করে দিও

Slider বাধ ভাঙ্গা মত


ঢাকা: ‘আমার সন্তানদের তুমি দেখে রেখো আর আমাকে মাফ করে দিও’ মৃত্যুর আগে স্ত্রী মনিরা আক্তারকে এ কথা বলেছিলেন আইসিইউতে থাকা ফাইটার শামীম আহমেদ।

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে এ কথা জানান মৃত ফায়ার ফাইটার শামীমের স্ত্রী মনিরা আক্তার।

তিনি বলেন, আমরা টঙ্গী ফায়ার স্টেশনের কোয়ার্টারে থাকি। গতকাল টঙ্গী এলাকায় কেমিক্যাল গোডাউনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে টঙ্গী ফায়ার স্টেশন থেকে আগুন নিভাতে গিয়ে কেমিক্যাল গোডাউনের বিস্ফোরণে আমার স্বামী অগ্নিদগ্ধ হন। পরে তাকে উদ্ধার করে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। তার শরীরের পুরাটাই পুঁড়ে গিয়েছিল। দুপুরে তার সঙ্গে শেষবারের মতো আমার কথা হয় আইসিইউর ভেতরে। তখন আমার স্বামী আমাকে বলেছিলেন তুমি আমার সন্তানদের দেখে রেখো আমি বাঁচবো না আর আমাকে মাফ করে দিও। মৃত্যুর আগে এটাই ছিল আমার স্বামীর সঙ্গে আমার শেষ কথা। এরপর আমার স্বামী বিকেল ৩টায় মারা যান। আমি এই তিন সন্তানকে নিয়ে কীভাবে কি করব।

শামীমের স্ত্রী মনিরা আরও বলেন, আমার বড় ছেলে নাবিল আহমেদের বয়স ১২ বছর। একটি মাদরাসায় নাজেরা পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। দ্বিতীয় মেয়ে হুমাইরা আট বছর সে একটি মহিলা মাদরাসার দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। আর ছোট মেয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে তার এখন প্রায় পাঁচ বছর বয়স। সে তার বাবাকে অনেক ভালোবাসতো এখন তাকে কীভাবে বোঝাবো তার বাবা আর বেঁচে নেই। আমার তো সব শেষ হয়ে গেল কিছুই বাকি রইল না। বার্ন থেকে মরদেহ নিয়ে জানাজা শেষে গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায় দাফন করা হবে বলে জানান তিনি।

নিহত শামীমের বৃদ্ধ মা রাজ বানু বলেন, আইসিইউতে শামীমকে দেখতে গিয়েছিলাম শামীম বলল ‘মা আইছো আমি আর বাঁচতাম না’। এটাই ছিল আমার শামীমের সঙ্গে শেষ কথা। আমার ৬ ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে শামীম ছিল ছয় নম্বর। তার বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন।

নিহত শামীম আহমেদ নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানার রায়পুর পাইজাহাটি গ্রামের মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে।

এদিকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. সাওন বিন রহমান জানান, গতকাল বিকেলের দিকে টঙ্গী এলাকায় কেমিক্যাল গোডাউনের আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিস সদস্য শামীম আহমেদসহ চারজন দগ্ধ হন। পরে তাদের উদ্ধার করে বার্ন ইউনিটের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। তার শরীর ১৫ শতাংশ দগ্ধ ছিল। আজ বিকেল ৩টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আইসিইউতে মারা যায় ফায়ার ফাইটার শামীম আহমেদ।

বর্তমানে ১০০ শতাংশ দগ্ধ নিয়ে নুরুল হুদা এবং খন্দকার জান্নাতুল নাঈম ৪২ শতাংশ দগ্ধ ও পাঁচ শতাংশ দগ্ধ নিয়ে জয় হাসান হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এর আগে সোমবার বিকেলে গাজীপুরের টঙ্গীর সাহারা মার্কেট এলাকার কেমিক্যাল গোডাউনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে করে শামীম আহমেদ, খন্দকার জান্নাতুল দগ্ধ নুরুল হুদা ও জয় হাসান দগ্ধ অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জায়েদ কামাল এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে তাদের দেখতে আসেন এবং তাদের চিকিৎসার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *