চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের জেরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট বাজারের পূর্বসীমা থেকে পূর্বদিকে রেলগেট পর্যন্ত রাস্তার উভয়পাশে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন।

রোববার (৩১ আগস্ট) দুপুর ২টায় হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ১৪৪ ধারা জারির তথ্য জানানো হয়। আজ দুপুর ২টা থেকে আগামীকাল ১ সেস্টেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত এই ১৪৪ ধারা জারি থাকবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যেহেতু অদ্য ৩১ আগস্ট ২০২৫ তারিখে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলাধীন ফতেপুর ইউনিয়নের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট বাজারের পূর্ব সীমা থেকে পূর্বদিকে রেলগেট পর্যন্ত রাস্তার উভয়পাশে সকাল আনুমানিক বেলা সাড়ে ১১টায় স্থানীয় জনসাধারণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরস্পর মুখোমুখী ও আক্রমণাত্মক হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং বর্তমানে পক্ষসমূহ আক্রমণাত্মক অবস্থায় রয়েছে।

সেহেতু, আমি মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আমার ওপর অর্পিত ক্ষমতাবলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, জনসাধারণের জীবন ও সম্পদ রক্ষা ও শান্তি শৃঙ্খলা স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলাধীন ফতেপুর ইউনিয়নের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট বাজারের পূর্বসীমা থেকে পূর্বদিকে রেলগেট পর্যন্ত রাস্তার উভয়পার্শ্বে রোববার দুপুর ২টা থেকে আগামীকাল সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টার পর্যন্ত ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ১৪৪ ধারার আদেশ জারি করলাম।

ওই সময়ে উল্লিখিত এলাকায় সব প্রকার সভা সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, গণজমায়েত, বিস্ফোরক দ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র ও সব প্রকার দেশীয় অস্ত্র ইত্যাদি বহনসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় ৫ বা ততোধিক ব্যক্তির একত্রে অবস্থান কিংবা চলাফেরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করলাম।

এদিকে রোববার (৩১ আগস্ট) দুপুর আড়াইটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে জরুরি বিভাগের সামনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি বাস এসে থামে মেডিকেলের জরুরি বিভাগের সামনে। বাস থেকে একে একে নামানো হয় আহত শিক্ষার্থীদের। এদের অনেককে স্ট্রেচারে করে জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়, আবার স্ট্রেচার ছাড়াও শিক্ষার্থীরা কোলে করে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে মেডিকেলে। আহতদের অনেকের মাথাসহ শরীর বিভিন্নভাবে ব্যান্ডেজ দেখা গেছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এখন আহত ৪০ জনের মতো শিক্ষার্থীকে মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে।’

আহতদের সঙ্গে থাকা চবি ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি মামুন উর রশীদ মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল ভর্তি হয়েছেন। বাসে করে এখনও আহতদের আনা হচ্ছে।’

এদিকে শনিবার রাতের পর আজ রোববার দুপুর ১২টার পর ফের সংঘর্ষে জড়ান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ অনেকে আহত হন।

টানা ২ ঘণ্টা সংঘর্ষের পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হলো।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের এক নারী শিক্ষার্থী ২ নম্বর গেটের মাছ বাজার সংলগ্ন শাহাবুদ্দিনের বাসায় ভাড়া থাকেন। তিনি রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাসায় ঢুকতে চাইলে দারোয়ানের সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে দারোয়ান ওই ছাত্রীকে মারধর করেন। ওই শিক্ষার্থী তার এক ছেলে বন্ধুকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানান।

খবর পেয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী একত্রিত হয়ে ওই দারোয়ানকে ধরতে গেলে ওই এলাকায় উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়রা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে স্থানীয়রা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে জড়ো হন এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরাও চবির সোহরাওয়ার্দী হলের মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।

চবি মেডিকেলের চিকিৎসক ডা. মুহাম্মদ টিপু সুলতান বলেন, বহু শিক্ষার্থী আহত অবস্থায় মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন। আমরা তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি। যাদের অবস্থা গুরুতর আমরা তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *