নীলফামারীর চাড়ালকাটা নদীতে জমে থাকা কচুরিপানা এখন যেন ‘ভাসমান সেতু’। আর এই সেতুর ওপর দিয়েই নদী পার হচ্ছে মানুষ। কৌতূহলবশত এই দৃশ্য দেখতে ছুটে আসছেন আশপাশের এলাকার হাজারো মানুষ। কেউ দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ করছেন ফেসবুক লাইভ। নদীর মাঝখানে কচুরিপানার আস্ত স্তূপের ওপর দিয়ে দিব্যি হেঁটে যাচ্ছে শিশু, কিশোর, এমনকি প্রাপ্তবয়স্করাও। কেউ কেউ মাঝ নদীতেই দাঁড়িয়ে ফুটবল খেলছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তিন দিন আগে উজান থেকে ভেসে আসা কচুরিপানা নদীর কচুকাটা সেতুর পাশে এসে আটকে যায়। ধীরে ধীরে জমাট বেঁধে তা রীতিমতো পায়ে হাঁটার উপযোগী হয়ে গেছে। নদীর ওই অংশে পানির গভীরতা ১০ থেকে ১২ ফুট। নিচ দিয়ে পানির স্রোত থাকলেও ওপরের কচুরিপানা নড়ছে না। সেতুর দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা উৎসুক জনতা, রিকশা-ভ্যান আর মোটরসাইকেলের সারি-সব মিলিয়ে এলাকাটি যেন এক দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। তবে এ আনন্দের মাঝেও রয়েছে ভয়। কারণ, যে কোনো সময় কচুরিপানা সরে যেতে পারে। আর তাতেই ঘটে যেতে পারে বড় দুর্ঘটনা।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে তারা সতর্ক রয়েছে। তবে এলাকাবাসীর এমন ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ রোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
জেলা শহরের পাঁচমাথা থেকে কচুরিপানার ভাসমান সেতু দেখতে আসেন জাকির হোসেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পেরে দেখতে এসেছি। সবাই কচুরিপানার ওপর দিয়ে হাঁটছে, কিন্তু আমি হাঁটিনি। আমার কাছে এটা বিপদজনক মনে হয়েছে । যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এর আগেও নীলফামারীতে এমন ঘটনা ঘটেছিল কিন্তু সময়ের কারণে যেতে পারিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা জহুরুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটা অনেক বিপদজনক। তবে কেউই কথা শুনছে না। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করবো দ্রুত কচুরিপানাগুলো ভাঙার ব্যবস্থা করা হোক। না হলে যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
জেলা সদরের টেঙ্গনমারী পোড়াকোট গ্রামের গৃহবধূ আর্জিনা খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটা জীবনে প্রথম দেখলাম। কচুরিপানার ওপর দিয়ে মানুষ নদী পার হচ্ছে-দেখার মতোই ঘটনা। তাই ছুটে এলাম।
কচুকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, খবর পেয়ে আমি নিজেই ঘটনাস্থলে যাই। দেখি, শত শত মানুষ কচুরিপানার ওপরে হাঁটছে, অনেকে নদীর মাঝখানে দাঁড়িয়ে খেলছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে সবাইকে সতর্ক করি। এটা কোনো স্থায়ী বা নিরাপদ সেতু নয়। যে কোনো সময় কচুরিপানা সরে গেলে তখন বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এটি খুবই বিপজ্জনক। দ্রুত কচুরিপানার স্তূপ ভেঙে দেওয়ার কাজ শুরু করা হবে।