শ্রীপুর(গাজীপুর)প্রতিনিধি: গাজীপুরের শ্রীপুরে মোবাইল চুরির অপবাদে ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাসানকে(১৮) নির্যাতনের অভিযোগ উঠছে ছাত্র দল নেতার বিরুদ্ধে। রাতভর নিযাতন করে মেহেদীকে স্থানীয় শৈলাট বাজারে টানা হেঁছড়া করা হয়। তাকে পিটিয়ে চোরের মতো মাটিতে বসিয়ে গান গাওয়ানো হয়। এসব দৃশ্য ভিডিও করে। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া হয় ওই ভিডিও। নির্য়াতনের শিকার মেহেদী শুক্রবার থেকে মানুষিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। সে এখন শুধু মেরে ফেলার আতংকে চিৎকার দিয়ে থাকে। বাবা-মা কাউতে চিনতে পারেনা। এ ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতার মা শিল্পী আক্তার বাদী হয়ে শনিবার বিকেলে ছাত্র দল নেতা সহ তার চার সহযোগীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন।
নির্যাতনের শিকার মেহেদী হাসারন উপজেলার ধনুয়া গ্রামের মো. কবির হোসেনের ছেলে। তিনি গাজীপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। বাবা মো. কবির হোসের একই ওয়ার্ড আওয়ামিলীগের সাধারণ সম্পাদক। অভিযুক্তরা হলেন, শৈলাট গ্রামের মো. জাফর আহাম্মদ(২৯)রুবেল(৩৫),রবিন(২৭),ইলিয়াস(২৯) এবং গাজীপুর গ্রামের মোস্তফা(২৮)। অভিযুক্ত জাফর গাজীপুর ইউনিয়ন ছাত্র দলের সাবে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
ছাত্রলীগ নেতার বাবা অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলে গত দুই এপ্রিল ছোট বোনকে নিয়ে গাজীপুর গ্রামে নানার বাড়িতে যায়। সেখানে দুপুরে তার বন্ধু জুয়েলের বাড়িতে খাবার খায়। সন্ধ্যার পর সে বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হন। রাত দশটার দিকে তার মাকে জানিয়েছে মেহেদী বাড়িতে ফিরছে। তার পর থেকে মেহেদীর সন্ধান নেই। রাতে স্থানীয়রা এসে জানায় আমার ছেলেকে মোবাইল চুরির অপবাদে শৈলাট বাজারে মারপিট করা হচ্ছে।
দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি আমারছেলে কে মারপিট করে মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে। তাকে টানা হ্যাঁছড়া করা হচ্ছিল। তাকে মাটিতে বসিয়ে ভয় দেখিয়ে গান গাওয়ানো হয়। আবার এসব দৃশ্য ভিডিও ধারণ করে আমার নিকট এক লাখ টাকা দাবী করা হয়। পরে সত্তোর হাজার,পঞ্চাশ হাজার,বিশ হাজার এক পর্যায়ে দশ হাজার টাকা দাবী করা হয়। জাফর নেতার হাতে দশ হাজার টাকা দিয়ে আমার ছেলেকে মুক্ত করে আনি। জাফর রাজনৈতিক প্রতি হিংসায় আমার ছেলের বিরোদ্ধে মোবাইল চুরির নাটক সৃষ্টি করে তাকে নির্যাতন করেছে।
পরের দিন ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া হয়। নির্যাতনের আতংকে এবং ফেসবুকে ভিডিও ছড়ানোর কারণে এখন সে মানুষিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। এখন সে কাওকে চিনতে পারেনা। শুধ চিৎকার করে আমাকে মেরে ফেলবে।
মেহেদীর মা শিল্পি আক্তার বলেন, আমার ছেলেকে জাফর ও তার লোকেরা ওই রাতে তুলে নিয়ে নির্যাতন করে। মদ পাণকরায়। খবর পেয়ে শৈলাট বাজারে ছুটে যাই। সেথানে গিয়ে দেখি পাশে পুলিশ দাড়িয়ে আছে। তাকে টানা হ্যাঁছরা করা হচ্ছে। তাকে নির্যাতন করে মাটিতে বসিয়ে গান গাওয়ানো হয়। অনেকে দাড়িয়ে ভিডিও ধারণ করছে। পরের দিন ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া হয়। নির্মম নির্যাতনের কারণে আমার ছেলে এখন মানুষিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। আমি এর বিচার চাই।
শৈলাট বাজারে নৈশ প্রহরী আ. জল্লিল জানান, ওই ছেলে অটোরিক্সা থেকে নেমে বাঁচাও বলে চিৎকার দিয়ে দৌড় দেয়। স্থানীয়রা তাকে মোবাইল চোর মনে করে আটক সকরে। এসময় ছত্রদল নেতা জাফর ও তার সহযোগীরা তাকে আটক করে। তাকে বাজারে মাটিতে বসিয়ে গান গাওয়া নো হয়। এ সময় মাওনা ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে ছিলো। পুলিশ তাকে উদ্ধারে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
মেহেদীর বন্ধু জুয়েল জানান, রাত দশটার দিকে জানতে পাই মেহেদীকে মোবাইল চুরির অপবাদে বাজারে আটকে রাখা হয়েছে। দৌড়ে সেখানে যাই। গিয়ে দেখি ছাত্রদল নেতা জাফর ও তার সহজযোগীরা মেহেদীকে মাটিতে বসিয়ে গান গাওয়াচ্ছে। পাশে পুলিশ দাড়ানো। আমি তাকে ছাড়াতে কথা বললে জাফর আমার নিকট এক লাখ টাকা দাবী করে। পরে সত্তোর হাজার সব শেষ দশ হাজার টকা দফারফ হয়। জাফরের হাতে টাকা তুলে দিয়ে বন্ধুকে ছাড়িয়ে আনা হয়।
অভিযোগ অস্বীকার কওে ছাত্রদল নেতা জাফর জানান, তিনি ওই ছেলেকে মারপিট করেননি। কোন টাকা নেননি। মোবাইল চুরির অপরাধে তাকে বাজারের লোকজন আটক করে। তাকে পরিবারের কাছে তুলে দেয়া হয়।
ঘটনার সময় পাশে, থাকা মাওনা ফাড়ির কনস্টবল শাকিল জানান, ওই ছেলেকে মোবাইল চুরির কথা বলে আটকে রাখা হয়। তাকে দিয়ে গান গাওয়ানো হয়। পরে স্বজনদের হাতে তুলে দেয়া হয়।
এবিষয়ে মাওনা ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. হাসমত উল্লা জানান, মোবাইল চুরির অপবাদে ওই ছেলেকে নির্যাতন করা হয়। পরে জেনেছি মোবাইল চুরির কোন ঘটনা কোন ঘটনা ঘটেনি। কোন বাদী নেই। ধারণা করা হচ্ছে তাকে অন্য কোথাও মারপিট করা হয়ে থাকতে পারে। ভয়ে সে বাঁচাও বাঁচাও বলে দৌড় দিয়েছিলো। ছেলেটিকে তার স্বজনদের হাতেমতুলে দেয়া হয়। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঘটনার সাথে পুলিশের সংশ্লিষ্টতা থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।