সৌদি আরবের বর্তমান বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজকে সরাতে রাজপরিবারের মধ্যে একটি বিদ্রোহের খবর এসেছে গণমাধ্যমে।
সৌদি আরবের ১২ যুবরাজের আটজনই বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজকে সরানোর পক্ষপাতি বলে তাদের একজন দাবি করেছেন।
যুক্তরাজ্যের দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্টকে তিনি বলেছেন, তারা ৭৯ বছর বয়সী সালমানকে হটিয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স আহমেদকে সিংহাসনে বসাতে চান।
“উলামা এবং ধর্মীয় নেতারা আহমদকেই পছন্দ করেন। সবাই নয়, তবে ৭৫ শতাংশ তো হবেই,” বলেন ওই যুবরাজ।
সৌদি আরবে ধর্মীয় নেতাদের মতামত সবসময়ই গুরুত্ব পায়। ধর্মীয় এবং রাজতন্ত্রের নানা সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা-সমালোচনারও এখতিয়ার থাকে তাদের।
নিরাপত্তার কারণে নিজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই যুবরাজের বক্তব্য সৌদি রাজতন্ত্রের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে চলমান গুঞ্জনকে বাস্তব ভিত্তি দিল মনে করছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
প্রিন্স আহমেদ বিন আবদুল আজিজ
বিষয়টি নিয়ে লন্ডনে সৌদি দূতাবাসে কথা বলার চেষ্টা করলেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি বলে যুক্তরাজ্যের দৈনিকটি জানিয়েছে।
আব্দুল আজিজ আল সউদ ১৯৩২ সালে সৌদি আরবের বর্তমান রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার পর তার বড় ছেলে সউদ বিন আব্দুল আজিজকে পরিবারের বিদ্রোহে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হয়েছিল ভাই ফয়সলের কাছে।
১৯৬৪ সালের মতো ঘটনা এবারও ঘটতে পারে, ইন্ডিপেন্ডেন্টকে বলেন আল সউদের নাতি এই যুবরাজ।
তিনি বলেন, বর্তমান অবস্থায় বাদশাহ সালমানের কাছে দুটি পথ খোলা আছে।
“এক হতে পারে তিনি দেশ ছেড়ে চলে যাবেন, তাকে সম্মান এবং শ্রদ্ধার চোখে দেখা হবে। নতুবা প্রিন্স আহমদকে পূর্ণ ক্ষমতাসহ ক্রাউন প্রিন্স ঘোষণা করা যেতে পারে। তখন তিনি তেল, অর্থনীতি, সমরাস্ত্র, অভ্যন্তরীণ, গোয়েন্দা বিভাগ- অর্থ্যাৎ এ টু জেড সবকিছুই দেখবেন।”
ভাই আবদুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজের মৃত্যুর পর এ বছরের শুরুতে সালমান বাদশাহর দায়িত্ব নেওয়ার পর পর থেকে রাজপরিবারের বিদ্রোহের গুঞ্জন চলছে।
সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি রাজপরিবারে নেতৃত্ব পরিবর্তন নিয়ে দুটো চিঠি বেশ আলোড়ন তুলেছে। ইন্ডিপেন্ডেন্টের সঙ্গে কথা বলা যুবরাজই ওই চিঠি দুটি লিখেছেন।
বর্তমান বাদশার ভাতুষ্পুত্র এই যুবরাজ বলেন, শাসক হিসেবে সালমানের কিছু সিদ্ধান্তে তার ‘কাছের লোকেরাও’ অসন্তুষ্ট।
নিজের ছেলে ৩০ বছর বয়সী মোহাম্মদ বিন সালমানকে ‘ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স’ বানানো, ইয়েমেনে যুদ্ধে জড়ানো এবং সাম্প্রতিক হজ ব্যবস্থাপনা সালমানকে আরও অ-জনপ্রিয় করে তুলছে বলে তার মন্তব্য।
তিনি বলেন, “ওই পদ দেওয়ার মধ্য দিয়ে মোহাম্মদকে কার্যত প্রতিরক্ষামন্ত্রী করার পথ। ওই পদ পাওয়ার পর মোহাম্মদ অনেক সম্পদ গড়েছেন। তাকে না ধরলে এখন বাদশাহর কাছে ভেড়াই দায়।”
বাদশার ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমান
যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফ
এই যুবরাজ বলেন, বাদশার কাছের লোক হিসেবে পরিচিত তার ভাতুষ্পুত্র ৫৬ বছর বয়সী ‘ক্রাউন প্রিন্স’ মোহাম্মদ বিন নায়েফও রাজবংশে বেশ ‘অ-জনপ্রিয়’।
৭৩ বছর বয়সী প্রিন্স আহমেদ ২০১২ সালে অভ্যন্তরীণ মন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পাঁচ মাসের মধ্যে তা ছেড়ে দিলে নায়েফকে ওই পদে বসানো হয়। আহমেদের ইচ্ছায়ই ওই পদক্ষেপ নেওয়া হয় বলে জানানো হলেও তা নিয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই যুবরাজ বলেন, সৌদি আরবে চিন্তার স্বাধীনতা দান, আইনি ব্যবস্থা সংস্কার এবং সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত নয় এমন বন্দিদের ছেড়ে দেওয়া নিয়ে সৃষ্ট বিরোধে আহমেদ দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন।
“২০০১ সালেরও আগে থেকে বন্দি আছেন- এমন অনেককে ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন প্রিন্স আহমেদ, যাদেরকে ভিন্ন মতের জন্য আটক করা হয়েছিল।”
রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক প্রিন্স আহমেদ ছিমছাপ জীবনযাপন ও কর্মদক্ষতার জন্য রাজপরিবার ও ধর্মীয় নেতাদের ‘পছন্দের শীর্ষে’ বলে ভিন্নমতাবলম্বী ওই যুবরাজের দাবি।
“তিনি ধার্মিক হলেও খোলামনের। তিনি ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী এবং প্রতিনিয়ত বিশ্বসংবাদ অনুসরণ করেন। জুয়া, নারী, মদের নেশায় তিনি আসক্ত নন বলে অন্য ভাইরাও তাকে বেশ পছন্দ করেন।”
প্রিন্স আহমেদ সৌদি রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা আল সউদের সর্বকনিষ্ঠ (৩১তম) সন্তান। তার মা হাসা বিনতে আহমাদ আল সুদাইরি বাদশা সউদের সবচেয়ে প্রিয়পাত্র ছিলেন বলে বলা হয়। বর্তমান বাদশাহ সালমান তার বাবার ২৫তম সন্তান।
ভিন্নমতাবলম্বী যুবরাজ ইন্ডিপেন্ডেন্টকে বলেন, কঠোর ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্যে পরিচালত সৌদি আরবে আইনের শাসন দেখতে চান তারা।
“আমরা সৌদি আরবে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কার দেখতে চাই। এখানে চিন্তার স্বাধীনতা ও আইনের শাসন দেখতে চাই।রাজবন্দিদের মুক্তি চাই এবং সত্যিকারের ইসলামী শরিয়াহ প্রতিষ্ঠা করতে চাই।”