চিহ্নিত হলে ৫ কোটি জরিমানা, সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড

Slider ফুলজান বিবির বাংলা


হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একদিনে দুটি হামলার হুমকি পাওয়া গিয়েছিল। তবে সেগুলো ছিল ভুয়া। তবুও বার্তাগুলো আমলে নিয়ে বিমানবন্দরে তল্লাশি চালানো হয়। তাতে অবশ্য বিস্ফোরক কিংবা হুমকিস্বরূপ কিছু পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বলছে, সাধারণত কোনো হুমকি বা হামলার তথ্য পেলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বৃদ্ধি করতে হয় ও তল্লাশি করতে হয়। এক্ষেত্রেও একই কাজ করা হয়েছে। তবে হামলার বিন্দুমাত্র আলামত পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে কেউ ব্যক্তিগতভাবে স্বার্থ হাসিলের জন্য অথবা দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য এমন ভুয়া বার্তা ছড়িয়ে থাকতে পারে। যারা এ ধরনের কাজ করেছে তাদের চিহ্নিত করতে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

এদিকে, হুমকি বা হামলার বার্তাগুলোর একটি পাকিস্তান ও অপরটি মালয়েশিয়ার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে বিমানবন্দরে কর্মকর্তা এপিবিএনের ডিউটি অফিসারের নম্বরে পাঠানো হয়। তবে পরে যোগাযোগ করে এ দুই নম্বরে কাউকে পাওয়া যায়নি। বার্তা পাঠানো নম্বরের মালিককে খুঁজতে কাজ করে যাচ্ছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২২ জানুয়ারি সকালে যখন পাকিস্তানের নম্বর থেকে বার্তা এসেছে তখনই গোয়েন্দা সংস্থা হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টধারীর পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা শুরু করে। হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টধারী বাংলাদেশ নাকি পাকিস্তান অথবা মালয়েশিয়া থেকে বার্তা পাঠিয়েছেন সে নিয়েও তারা সন্দেহে আছেন। গোয়েন্দারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কূটনৈতিক চ্যানেলে পাকিস্তান ও মালয়েশিয়া থেকে হুমকির ভুয়া বার্তা প্রদানকারীর তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছে। এছাড়াও সাইবার পুলিশ ‘হোয়াটসঅ্যাপ’ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে। তবে এখনো সাড়া পাননি তারা।

বিমানে বোমা হামলার বার্তা আসে পাকিস্তানি নম্বর থেকে

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যেহেতু হামলার বিন্দুমাত্র আলামত মেলেনি। তাই ধারণা করা হচ্ছে কেউ বা কোনো মহল ইচ্ছাকৃতভাবে গুজব ছড়িয়ে ফ্লাইট চলাচলে বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করেছে। তাদের বিরুদ্ধে বিমান-নিরাপত্তা বিরোধী অপরাধ দমন আইন-১৯৯৭ ও বেসামরিক বিমান চলাচল আইন-২০১৭ এর অধীনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।

বিমান-নিরাপত্তা বিরোধী অপরাধ দমন আইন-১৯৯৭ এর ১৩ এর খ ধারায় এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এতে বলা হয়, কেউ যদি এমন কোনো কাজ করেন যাতে বিমান উড্ডয়নে থাকাকালে বিমানটির নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে, সেক্ষেত্রে তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।

এছাড়াও বেসামরিক বিমান চলাচল আইন- ২০১৭ এর ২৯ ধারায় বিমান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড অথবা ৫ কোটি টাকা জরিমানা, ক্ষেত্রবিশেষে উভয়ই হতে পারে।

এ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে অথবা বেপরোয়াভাবে এরূপ কোনো কার্য করেন যাহাতে নির্বিঘ্নভাবে বিমান পরিচালনায় অসুবিধা সৃষ্টি হয় এবং উহা দ্বারা কোনো মানুষের জীবন ঝুঁকির সম্মুখীন হয় তাহা হইলে উহা হইবে একটি অপরাধ এবং তজ্জন্য তিনি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং অনধিক ৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।’

এ আইনের ৩৫ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি এ আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করেন বা উক্ত অপরাধ সংঘটনে ষড়যন্ত্র করেন বা প্ররোচনা দেন এবং উক্ত ষড়যন্ত্র বা প্ররোচনার ফলে অপরাধটি সংঘটিত হয়, তাহা হইলে উক্ত সহায়তাকারী, ষড়যন্ত্রকারী বা প্ররোচনাদানকারী উক্ত অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।’

জানতে চাইলে এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বলেন, হুমকির কোনো বার্তা পেলেই এসওপি অনুযায়ী নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও তল্লাশি হয়। তবে কেউ যদি হামলার বিষয়ে তথ্য দিয়ে গুজব সৃষ্টি করে থাকে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক ঢাকা পোস্টকে বলেন, একইদিনে দুইটা হুমকির বার্তা এসেছে। হুমকি পাওয়ার পরপরই গোটা বিমানবন্দর ও ফ্লাইটে সুইপিং করা হয়েছে। তেমন কিছুই মেলেনি। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে এমন বার্তা দিয়ে প্লেন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করেন তার বিরুদ্ধে বেবিচক আইন ও বিমান-নিরাপত্তা বিরোধী অপরাধ দমন আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এয়ারলাইন্স ও বিমানবন্দরে ভুয়া বোমা হামলার হুমকির বিষয়টি নতুন কিছু নয়। ভারতের উপ বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী মুরলীধর মহল পার্লামেন্টে জানিয়েছিলেন, গত বছরের ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত দেশটির বিভিন্ন এয়ারলাইন্স ও বিমানবন্দর ৯৯৯টি ভুয়া বোমা হামলার হুমকি পেয়েছে।

ভুয়া হুমকির কারণে একাধিক ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে, আবার কিছু ফ্লাইটের রুট পরিবর্তন করতে হয়েছে। যেমন– অক্টোবরে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের একটি ফ্লাইটের জন্য সিঙ্গাপুরের বিমানবাহিনী দুটি যুদ্ধবিমান পাঠায়। একই মাসে এয়ার ইন্ডিয়ার আরেকটি ফ্লাইট নয়াদিল্লি থেকে শিকাগো যাওয়ার সময় কানাডার একটি দুর্গম বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করতে বাধ্য হয়।

বোমা হামলার হুমকি পেয়ে ভারতীয় বিমানবন্দরগুলো তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়। বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল, শনাক্তকারী কুকুর, অ্যাম্বুলেন্স এবং পুলিশ মোতায়েন করা হয়। যাত্রীদের প্লেন থেকে নামিয়ে আবার তল্লাশি চালানো হয়। এসব পদক্ষেপ ফ্লাইট চলাচলে বিলম্ব সৃষ্টি করে এবং এয়ারলাইন্স ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *