আদেশের পর কাদের সিদ্দিকীর আইনজীবী ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র বাতিলের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন এবং রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি তার মনোনয়নপত্র গ্রহণেরও নির্দেশ দিয়েছেন কোর্ট। এখন তার নির্বাচনে অংশ নিতে আইনগত কোনো বাধা নেই।’ তিনি বলেন, ‘আগামী রোববার আদালতের এ আদেশ টাঙ্গাইলের রিটার্নিং অফিসারের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে। পরে রিটার্নিং অফিসার ব্যবস্থা নেবেন।’
অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে। আপিলে রায় বহাল থাকলে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন। কিন্তু আপিল বিভাগ যদি তা বাতিল করেন, তবে কাদের সিদ্দিকী নির্বাচন করতে পারবেন না।’
এ আসন থেকে দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন কাদের সিদ্দিকীর বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী। নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে পবিত্র হজ, তাবলিগ জামাত ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে কটু মন্তব্য করায় দল থেকে বহিষ্কার ও সংসদ সদস্যপদ ছাড়তে হয় তাকে। গত ১ সেপ্টেম্বর লতিফ সিদ্দিকী পদত্যাগ করায় আসনটি শূন্য ঘোষণা করে ৩ সেপ্টেম্বর গেজেট প্রকাশ করে সংসদ সচিবালয়। এরপর নির্বাচন কমিশন এ আসনে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। সে মোতাবেক আগামী ১০ নভেম্বর এ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এ আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী হিসেবে কাদের সিদ্দিকী ও তার স্ত্রী নাসরিন সিদ্দিকী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। কিন্তু ঋণখেলাপির অভিযোগে গত ১৩ অক্টোবর (মঙ্গলবার) রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলীমুজ্জামান তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন। মনোনয়নপত্র বাতিলের কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, সোনার বাংলা প্রকৌশলী সংস্থার নামে অগ্রণী ব্যাংকে ১০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে। কাদের সিদ্দিকী এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান এবং নাসরিন কাদের সিদ্দিকী পরিচালক।
এরপর গত ১৬ অক্টোবর শুক্রবার এই দুই নেতা রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইসিতে আপিল আবেদন করেন। রোববার (১৮ অক্টোবর) বিকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন কাদের সিদ্দিকীর আপিল খারিজ করে রায় দেন। নির্বাচন কমিশন ও রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে রোববার কাদের সিদ্দিকী হাইকোর্টে রিট করেন।
বুধবার এ রিটের ওপর শুনানি হয়। রিটের পক্ষে শুনানি করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খোরশেদুল আলম। এ সময় নির্বাচন কমিশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট তৌহিদুল ইসলাম।
শুনানিতে কাদের সিদ্দিকীর আইনজীবীরা আদালতে বলেন, তার সঙ্গে স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের যে ঋণ, সেই ঋণ ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে পুনঃতফসিল করা হয়েছে। যেহেতু তার ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে, সেহেতু তিনি ঋণখেলাপি নন। তাই তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা যাবে না।
আদেশের পর আদালত থেকে বেরিয়ে কাদের সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ দেশে যুদ্ধাপরাধীদেরও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমাকে নির্বাচন কমিশন সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করেছে। হাইকোর্ট আমাকে সেই সুযোগ দিয়েছেন। আমি ন্যায়বিচারে বিশ্বাসী। হাইকোর্টে ন্যায়বিচার পেয়েছি। এখন জনগণের কাছে যেতে চাই তাদের রায়ের জন্য। আদালত আমাকে সুযোগ করে দিয়েছেন।’
অনধিকার চর্চা করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল : কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র গ্রহণের নির্দেশের ‘রাষ্ট্রপক্ষ’ আপিল করবে বলে ঘোষণা দিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম অনধিকার চর্চা করেছেন বলে দাবি কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের। রিটের শুনানি চলাকালে অ্যাটর্নি জেনারেলের ভূমিকার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে দলটি। বুধবার বিকালে গণমাধ্যমে পাঠানো কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ নিন্দা জানানো হয়।