গাজীপুর: বুধবার টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা মাঠে দুই পক্ষের সহিংসতায় ৪ জন নয় ৩ জন নিহত হয়েছেন। বর্তমানে মাঠ ফাঁকা। আশপাশে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ইজতেমা মাঠের সামনে কামারপাড়া সড়ক সেনাবাহিনী গতকাল দুপুর ১২টায় ব্যারিকেড তুলে নিয়েছে। নিহতের ঘটনায় এখনও কোন মামলা হয়নি। সার্বিক বিষয়ে দুই পক্ষই সাংবাদিক সম্মেলন করেছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) ইজতেমা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে ও ময়দান ঘুরে এই তথ্য জানা গেছে।
পুলিশ ও বিবদমান দুই পক্ষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার বিশ্ব ইজতেমা মাঠে তাবলীগ জামাতের দুই গ্রুপের মধ্যে সহিংসতায় ৩ জন নিহত ও শতাধিক মুসল্লি আহত হয়। নিহতরা হলেন, কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানার এগারসিন্দু গ্রামের মৃত উসমান মিয়ার ছেলে আমিনুল হক ওরফে বাচ্চু (৭০)। ঢাকার ভাটারা থানার বেড়াইদ এলাকার আব্দুস সামাদের ছেলে বেলাল হোসেন (৬০)। তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর জেলায়। আরেকজন বগুড়া জেলা সদরের সবগ্রাম নাড়–লির বাসিন্দা তাজুল ইসলাম (৬০)।
নিহত আমিনুল হক ওরফে বাচ্চুর নাম কোথাও আমিনুল হক আবার কোথাও বাচ্চু বলে বলা হয়েছে। একটি নামকে খন্ডিত করে দুটি নাম ভুলে বলায় নিহতের সংখ্যা তিনের ক্ষেত্রে চার বলা হয়েছে। তবে নিহতরা কোন পন্থি তা দুই পক্ষ দাবি করলেও সরকারী ভাবে স্পষ্ট কোন মন্তব্য করা হয়নি। এসব ঘটনায় এখনও কোন মামলা হয়নি। মামলা হওয়ার পর বাদির সাথে কথা বলে নিহতরা কোন পন্থি ছিলেন তা জানা যাবে।
সরেজমিন ইজতেমা মাঠ ঘুরে দেখা যায়, ইজতেমা ময়দানের প্রধান ফটকের সামনে টঙ্গী-কামারপাড়া বন্ধ সড়ক খোলে দিয়েছে সেনাবাহিনী। এর আগে বুধবার দুপুর থেকে জলকামানসহ দাঙা প্রতিরোধের সরকারি সরঞ্জাম সড়কে দৃশ্যমান ছিল। তবে মাঠের ভেতরে ও বাইরে পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে আছে। এদিকে ইজতেমা মাঠে জুবায়েরপন্থি কিছু লোককে দেখা গেছে। তারা বলছেন, রেখে যাওয়া মালামাল গোছগাছ করতে তারা ইজতেমা মাঠে এসেছেন।
এবিষয়ে শুরায়ে নেজামের (জুবায়েরপন্থি) মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, আমাদের কেউ মাঠে নেই। তবে মাঠের টিনসেড মসজিদ আমরা ও তুরাগের পশ্চিম পাড়ে বেলাল মসজিদ সাদপন্থিরা সারা বছর ব্যবহার করতে পারবে বলে সরকারি সিদ্ধান্ত আছে। তাই আমরা মাঠে নেই মাঠের মসজিদে আছি। ভিতরে যারা আছে তারা মালামাল গোছানোর কাজ করছেন।
বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনের বিষয়ে হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিহত আমিনুল হক ওরফে বাচ্চুর নাম ভুলে দুই বার উচ্চারণ করায় একজনকে দুই জন বলা হয়েছে। আসলে আমিনুল হক ও বাচ্চু একই ব্যাক্তি, দুই ব্যাক্তি নয়। ফলে নিহতের সংখ্যা চার নয় তিন।
ঘটনাস্থল এলাকা টঙ্গী পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইসকান্দার হাবিবুর রহমান বলেন, ময়দানে সংঘর্ষের ঘটনায় তিন জন নিহত হয়েছেন। কিছু লোক এসে তাদের মালামাল গোছানোর জন্য এসেছে যার অনুমতি রয়েছে। তবে মাঠ আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। তিন জন নিহতের ঘটনায় এখনো কোন মামলা হয়নি।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ দক্ষিণ) এন এম নাসিরুদ্দিন বলেছেন, বুধবার ভোররাতে সাদপন্থি ও জুবায়েরপন্থিদের মধ্যে সংঘর্ষে তিনজন নিহতের খবর আমরা নিশ্চিত হয়েছি।