বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আমাদের প্রতি নির্যাতনের জবাব হিংসায় নয়, ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা অন্যায়ের জবাব দিতে চাই। আমি ব্যক্তিগতভাবে বললে আমার ওপর নির্যাতন হয়েছে। আমরা বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। আমার মাকে নির্যাতন করা হয়েছে। আমার ভাই তাদের অত্যাচারে মারা গেছে।
তারেক রহমান আরো বলেন, আমাদের বহু সহকর্মী খুন হয়েছেন। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আমাদের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী খুন হয়েছেন। আর কোন রাজনৈতিক দলের এত মানুষ মারা গেছে কি না, জানি না আমরা। গত ১৬ বছরে আমাদের দলের বহু নেতাকর্মীর বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আমরা এই নির্যাতনের জবাব যদি তাদের মতো দিই, তাহলে তো হবে না। তারা অধম বলে আমরা অধম হবো নাকি। আমরা এর জবাব ৩১ দফা সফল করার মাধ্যমে দেব। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই তাদের জবাব দেওয়া হবে।’
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্ততা’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বুধবারের কর্মশালায় গাজীপুর মহানগর, নারায়ণগঞ্জ মহানগর ও টাঙ্গাইল জেলার বিএনপির বিভিন্ন স্থরের নেতৃবৃন্দ অংশ গ্রহণ করেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এখানে যারাই আছেন প্রত্যেকের নামে একটি হলেও গায়েবি মামলা রয়েছে। এত নির্যাতন সহ্য করে জেল খেটেছেন আপনারা, কষ্ট করেছেন। কেন আপনারা এমন কাউকে সুযোগ দেবেন যে আপনাদের সব কষ্টে পানি ঢেলে দেবে। কিছু লোক তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য আমাদের সব কষ্টে পানি ঢেলে দিচ্ছে। কেন তাদের সেই সুযোগ দেবেন আপনারা?
তিনি বলেন, মানুষ বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। আপনাদেরও জনগণের দিকে তাকাতে হবে। আপনাদেরও বুঝতে হবে কী করলে জনগণ আপনাকে আরও পছন্দ করবে। আপনার অধীনে অনেক নেতাকর্মী থাকবে। তাদের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। পরিবারের দুষ্টু বাচ্চাদের যেমন টাইট দিয়ে রাখতে হয়, তেমনি দলের ভেতরও দুষ্টুরা আছে, থাকতে পারে। আমাদের এই দুষ্টুদের টাইট দিয়ে রাখতে হবে। তারা হয়তো দলের অনেক ক্ষতি করে ফেলছে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আপনাদের মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। জনগণের আস্থা ধরে রাখতে হবে। এই আস্থা ধরে রাখার দায়িত্ব আপনার। এটি জনগণের দায়িত্ব না। আমরা নিজেদের সংযত রাখব এবং আমাদের সহকর্মীদের সংযত রাখতে চেষ্টা করব। মানুষ চায় না এমন কাজ কেন আপনি করবেন, যেখানে আপনাদের আস্থার সংকট দেখা দেবে। তিনি বলেন, স্বৈরাচার যখন জনগণকে অধিকারবঞ্চিত করে অস্ত্রের মুখে ক্ষমতা ধরে রেখেছিল, তখন আমি বলেছিলাম টেক ব্যাক বাংলাদেশ। এর অর্থ হলো, জনগণের বাকস্বাধীনতা ও জনগণের অর্থনৈতিক অধিকার জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া। বাংলাদেশে কী হবে, তা বাংলাদেশের মানুষ ঠিক করবে। টেক ব্যাক বাংলাদেশের প্রথম লক্ষ্য দেশের মানুষের সহযোগিতায় দেশের গণতন্ত্রকামী দলগুলো স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে। স্বৈরাচারের মাথা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। গত ১৬ বছর তারা নিজেদের আখের গোছাতে ভিনদেশে তাদের প্রভুকে খুশি করতে দেশের সবকিছু ধ্বংস করে দিয়ে গেছে।
রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে ৩১ দফা” ও জনসম্পৃক্তি বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় গাজীপুর মহানগরীর নেতৃবৃন্দ বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় গাজীপুর মহানগরীর রথখোলা এলাকায় বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে যুক্ত হন। এখানে এ উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়
গাজীপুরের অংশে কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকার। বক্তব্য রাখেন চেয়ারপার্সনের বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান উপদেষ্টা ড. মাহাদী আমিন, কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক শহী উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, সাবেক সংসদ সদস্য আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, সাবেক সংসদ সদস্য হাসান উদ্দীন সরকার, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়্যেদুল আলম বাবুল, সহ ত্রাণ ও পুনরবাসন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নেওয়াজ হালিমা আরলী, নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. মাজহারুল আলম, গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মঞ্জুরুল আলম রনি।