রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা পেরিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে চলছে রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রম। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিদ্যমান সংকট থেকে উত্তরণে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সহ রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠানের সংস্কারকাজ চলমান রয়েছে। কঠিন এ সময়েও দুর্নীতিবাজদের দুর্নীতির প্রসার থেমে নেই।
অন্যদিকে বিপ্লব পরবর্তী সময়ে ২০২৪ সালের শেষ দিকে বিগত সরকারের দুর্নীতিবাজদের লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা হলেও কূটকৌশলে স্বীকৃত অনেক দুর্নীতিবাজ পার পেয়ে গেছেন।
২০০৪ সালে গঠিত কমিশনের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন বিচারপতি সুলতান হোসেন খান। এরপর যথাক্রমে সাবেক সেনাপ্রধান হাসান মশহুদ চৌধুরী, গোলাম রহমান, মো. বদিউজ্জামান, ইকবাল মাহমুদ ও মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ যুগের অবসান হয়েছে। কিন্তু দুদকের ভাবমূর্তির তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। সর্বশেষ গত ১১ ডিসেম্বর ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের নেতৃত্বাধীন কমিশনের যাত্রা শুরু হয়েছে।
৫ আগস্টের পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান, অনুসন্ধান ও তদন্তে ব্যস্ত সময় পার করতে হয়েছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটিকে। চলতি বছরে দায়ের করা মামলা কমলেও বেড়েছে দায়মুক্তি বা অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি। যদিও আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে হঠাৎ আওয়ামী সরকারের মন্ত্রী-এমপিসহ আড়াই শতাধিক ভিআইপি ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান নিয়ে আলোচনায় আসে দুদক।
হঠাৎ সরব দুদক, জালে মন্ত্রী-এমপিসহ আড়াই শতাধিক ব্যক্তি
টিম টিম করে চলা রাষ্ট্রীয় সংস্থা দুদক পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হঠাৎ নড়েচড়ে বসে। আওয়ামী সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই বিগত সরকারের অন্তত ১০০ মন্ত্রী-এমপি, সাবেক শীর্ষ আমলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ব্যবসায়ী, পুলিশের শীর্ষ কর্তা ব্যক্তিদের দুর্নীতির খোঁজে মাঠে নামে দুদক। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম দুই মাসে সংস্থাটির অনুসন্ধানের তালিকায় ১৮০ জনের নাম থাকলেও তৃতীয় মাসে তা দুইশ ছাড়িয়ে যায়। এ তালিকার বেশিরভাগই আওয়ামী দলীয় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-এমপি এবং বিগত সরকারের ঘনিষ্ঠজন। শুধু তাই নয়, তাদের নামে-বেনামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ফ্রিজ চলমান রয়েছে। অনুসন্ধান কাজ আরও গতিশীল করতে অর্ধশত ব্যক্তির বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। যদিও এরই মধ্যে অনেকে দেশত্যাগ করেছেন। আবার কিছু শীর্ষ নেতাকর্মী গ্রেপ্তারও হয়েছেন। তাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধেই অভিযোগ, ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ গ্রহণ, ব্যাংকের ঋণ নিয়ে লুটপাট, অর্থ পাচার, নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, কমিশন বাণিজ্য, সরকারি ও বেসরকারি জমি-সম্পত্তি দখল, লুটপাটসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন।
তবে দুর্নীতি অনুসন্ধানের তালিকায় আওয়ামী সরকারের প্রায় সব মন্ত্রীর নাম থাকলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কোনো অনুসন্ধান শুরু হয়নি। যদিও গত ২৯ অক্টোবর মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর নেতৃত্বাধীন কমিশনের পদত্যাগের পর প্রায় দেড় মাস দুদকের সব কর্মকাণ্ডই স্থবির ছিল।
অনুসন্ধানে গতি এলেও পিছিয়ে নেই দায়মুক্তি
চলতি বছরের ১১ মাসে (জানুয়ারি-নভেম্বর পর্যন্ত) বিভিন্ন অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে ৪৩৯টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য আমলে নেওয়া হয়। ২২৭টি অভিযোগের পরিসমাপ্তি (অভিযোগ থেকে অব্যাহতি) হয় এবং ৪৮টি মামলা থেকে আসামিদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। এসময়ে ৩২৮টি মামলা ও ৩৪৫টি মামলার চার্জশিট দিয়েছিল দুদক। এরই মধ্যে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে অর্থাৎ আওয়ামী সরকারের পতনের পর আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে রেকর্ডসংখ্যক অনুসন্ধান শুরু হলেও হঠাৎ চেয়ারম্যানসহ দুই কমিশনারের পদত্যাগে ছন্দপতন ঘটে। ওই তিন মাসে ৩১, ১০০ ও ৭৩টি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হলেও নভেম্বরে কোনো অনুসন্ধান শুরু করতে পারেনি সংস্থাটি।
অন্যদিকে ২০২৩ সালে অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে ৮৪৫টি অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছিল। ওই সময়ে ৪০৪টি মামলা ও ৩৬৩টি মামলার চার্জশিট হয়। সেসময়ে পরিসমাপ্তি বা অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছিল ১৩ হাজার ৫৭৯টি অভিযোগ। অর্থাৎ এসব অভিযোগে দুর্নীতি খুঁজে পায়নি দুদক অনুসন্ধান বিভাগ।
আলোচিত বেনজীর ও মতিউর কাণ্ড
চলতি বছরে আরও আলোচিত বিষয় ছিল পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের অঢেল সম্পদের বিষয়টি। বেনজীরসহ পরিবারের সদস্যদের অবৈধ সম্পদের অভিযোগ আমলে নিয়ে চলতি বছরের ২২ এপ্রিল অনুসন্ধান করে দুদক। অভিযোগ অনুসন্ধান পর্যায়ে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ৬২৭ বিঘা জমি জব্দ করা হয়। ওই সম্পদের বাইরে রাজধানীতে দুটি বাড়ি ও ৪০ বিঘা জমিও জব্দ করে দুদক। অভিযোগ অনুসন্ধান পর্যায়ে বেনজীর আহমেদকে ৬ জুন ও স্ত্রী জীশান মীর্জা ও দুই মেয়েকে ৯ জুন তলব করা হলেও তারা কেউই হাজির হননি। তাছাড়া অনুসন্ধান শুরু হওয়ার পরও তাদের ব্যাংক হিসাব থেকে ১৩ কোটি টাকা উত্তোলন হয়। প্রশাসন ও দুদকের অবহেলায় বেনজীর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতেও সক্ষম হন। সর্বশেষ গত ১৫ ডিসেম্বর বেনজীর, তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের বিরুদ্ধে ৭৪ কোটি ১৩ লাখ ৩৯ হাজার টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগে চার মামলা দায়ের করে দুদক।
অভিযোগ রয়েছে, সাবেক মহাপরিদর্শক তার স্ত্রী জিশান মির্জা, বড় মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর এবং ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন। এর মধ্যে ছয়টি কোম্পানি, রাজধানীর উচ্চবিত্ত এলাকায় দামি ফ্ল্যাট ও বাড়ি, বেস্ট হোল্ডিংয়ে শেয়ার, ফাইভ স্টার হোটেল- লা মেরিডিয়ান ঢাকার শেয়ার, গোপালগঞ্জের ‘সাভানা ইকো রিসোর্ট’, সেন্টমার্টিন দ্বীপে ৪১৮ ডেসিমালের বিশাল জমি। এসব সম্পদ বেনজীর, তার স্ত্রী এবং কন্যাদের বৈধ আয়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
অন্যদিকে, ঈদুল আজহার আগে ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কিনতে গিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হন মুশফিকুর রহমান (ইফাত) নামের তরুণ। সেই সূত্রে ধরেই তার বাবা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আলোচিত সাবেক সদস্য মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা সম্পদের খোঁজে নামে দুদক। সর্বশেষ গত ১৫ ডিসেম্বর মতিউর রহমান ও তার দ্বিতীয় স্ত্রীর বিরুদ্ধে ১১ কোটি ১৮ লাখ ৮৬ হাজার ১২০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দুটি মামলা দায়ের করে দুদক।
অভিযোগ অনুসন্ধান পর্যায়ে চলতি বছরের ২৪ জুন মতিউর রহমান, তার স্ত্রী লায়লা কানিজ ও ছেলে আহম্মেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে আদালতের নির্দেশনায় মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী সন্তানদের শেয়ারবাজারের ২৩টি বিও হিসাব ও ১১৬টি ব্যাংক হিসাবের প্রায় ১৩ কোটি টাকা, ২৩৬৭ শতাংশ জমি এবং ৪টি ফ্ল্যাট জব্দ করা হয়েছে। যদিও এর আগে গত দুই যুগে তার বিরুদ্ধে চারবার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করেছিল দুদক। প্রতিবারই অব্যাহতি পান তিনি।
আলোচিত সাদিক অ্যাগ্রো
আলোচিত ছাগল-কাণ্ডে এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত ১৫ লাখ টাকা মূল্যের ছাগল সাদিক অ্যাগ্রো থেকে কিনে এক লাখ টাকা অগ্রিম পরিশোধ করেছিলেন। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমের খবরের সূত্র ধরে ছাগলটি খামার থেকে আর নেওয়া হয়নি। এ ঘটনার পর সাদিক অ্যাগ্রো নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এরপর দুদক ও এনবিআরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুসন্ধানে সাদিক অ্যাগ্রোর অনিয়ম ও দুর্নীতি বেরিয়ে আসতে থাকে।
গত জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে দুদকের অভিযান ও অনুসন্ধানে নিষিদ্ধ ১৫টি ব্রাহমা জাতের গরুসহ ৪৪৮টি গবাদিপশু কোনো ধরনের নিলাম ছাড়া সাদিক অ্যাগ্রোর মাধ্যমে জবাই করে ৬০০ টাকা কেজি দরে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে বিক্রি, গোপনে ব্রাহমা গরু বিক্রি ও গরুর সিমেন (বীজ) বিক্রিসহ বিভিন্ন অনিয়মের প্রমাণ পায় সংস্থাটি। যে অভিযোগে গত ১৬ জুলাই জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নিষিদ্ধ ব্রাহমা গরু আমদানি, বিক্রি ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের দুই পরিচালক ও সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেনসহ সাত জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। যার তদন্ত চলমান রয়েছে।
অন্যদিকে এনবিআরের তদন্তে উঠে আসে– আলোচিত গরুর খামার সাদিক অ্যাগ্রো ১০ কোটি টাকার বিক্রির তথ্য গোপন করেছিল। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহের প্রতিষ্ঠানটির গুলশান, তেজগাঁও, মহাখালী ও মোহাম্মদপুরের চার দোকানে চালানো অভিযানে ১ কোটি ৩১ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উদঘাটিত হয়।
প্রধান উপদেষ্টার আলোচিত মামলা ও অব্যাহতি
চলতি বছরের ১১ আগস্ট শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের করা মামলা থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ আসামিকে খালাস দেওয়া হয়। মামলা প্রত্যাহারে দুদকেরই করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক মো. রবিউল আলমের আদালত থেকে আসামিদের খালাস দেওয়া হয়। অথচ গত ১ ফেব্রুয়ারি আদালতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছিল।
২০২৩ সালের ৩০ মে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক। পরে চার্জশিটে নতুন করে একজন আসামি যোগ করা হয়েছিল।
দুদক সংস্কার কমিশন
বিদায় নেওয়া ২০২৪ সালের আরও একটি আলোচিত ঘটনা হচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারে কমিশন গঠন। গত ৩ অক্টোবর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানকে প্রধান করে আট সদস্যের কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন– ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধ্যাপক মোস্তাক খান, ব্যারিস্টার মাহদীন চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফারজানা শারমিন ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধি। আর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ কমিশনকে সাচিবিক সহায়তা দিচ্ছে। এর মধ্যে গত ২২ অক্টোবর সংস্কার কমিশনের সদস্য হিসেবে সাবেক মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মাসুদ আহমেদের পরিবর্তে আরেক সাবেক মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক আহমেদ আতাউল হাকিমের নাম যুক্ত করা হয়। ইফতেখারুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন সংস্কার কমিশনের আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের সংস্কার প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
দুদক কমিশনের আকস্মিক পতন
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর নেতৃত্বাধীন কমিশনের পদত্যাগের গুঞ্জন চলছিল। ৫ আগস্টের পরের দুইদিন অফিসে না আসায় গুঞ্জন আরও ডালপালা ছড়ায়। যদিও পরের দুই মাস তারা দায়িত্ব পালন করেছেন। দায়িত্ব পালনকালে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপিসহ আড়াইশ ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরুর সিদ্ধান্ত দেন। এরপর গত ২৯ অক্টোবর আকস্মিকভাবে বিগত আওয়ামী সরকারের আজ্ঞাবহ মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর নেতৃত্বাধীন কমিশনের পতন হয়। দুদক চেয়ারম্যানসহ কমিশনার (তদন্ত) জহুরুল হক ও কমিশনার আছিয়া খাতুন (অনুসন্ধান) ওইদিন দুপুরে পদত্যাগপত্র জমা দেন। গত ৩১ অক্টোবর তাদের পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়। দুদক আইন ২০০৪ এর ১০ ধারা অনুযায়ী তারা রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র দাখিল করেন।
কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই নীরবে চলে যায় পুরো কমিশন। এমনকি সেদিন সকালেও দুদকের অধিকাংশ কর্মকর্তা বিষয়টি অনুমান করতে পারেননি। শুধু তাই নয়, অপেক্ষমাণ গণমাধ্যমকর্মীদের চোখ ফাঁকি দিতেও সক্ষম হয়েছেন তারা। দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনার আছিয়া খাতুন প্রধান ফটক দিয়ে বের হলেও অপর দুদক কমিশনার জহুরুল হক বের হন পেছনের ফায়ার সেফটির লাল গেট দিয়ে।
দুদক চেয়ারম্যান হিসেবে মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ দায়িত্ব পান ২০২১ সালের ৩ মার্চে। ওই বছরের ১০ মার্চ কমিশনার জহুরুল হকসহ তিনি যোগদান করেন। এর দেড় বছর পর আছিয়া খাতুনকে কমিশনার (অনুসন্ধান) মোজাম্মেল হক খানের জায়গায় নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের পদত্যাগের ঘটনা দুদকের ইতিহাসের তৃতীয় উদাহরণ।
অভিযোগ রয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মঈনুদ্দিন কমিশন দুই শতাধিক আওয়ামী মন্ত্রী-এমপিকে দায়মুক্তি দিয়েছে। একইভাবে ৫ আগস্টের পর অর্ধশতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীকেও দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
নতুন কমিশনের যাত্রা
গত ২৯ অক্টোবর মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর নেতৃত্বাধীন কমিশনের বিদায়ের পর আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে দীর্ঘ ৪২ দিন কমিশনহীন ছিল দুদক। এরপর বছরের শেষ সময়ে এসে ১০ ডিসেম্বর সদ্য পদত্যাগ করা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনকে চেয়ারম্যান এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহ্সান ফরিদকে কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রজ্ঞাপনের পর ১১ ডিসেম্বর চেয়ারম্যান ও কমিশনার আজিজী যোগদান করেন। কর্মস্থলে যোগদান করেই নতুন কমিশন জনপ্রত্যাশা পূরণ করবে বলে আশ্বস্ত করেন নতুন চেয়ারম্যান মোমেন। একইসঙ্গে রাজনৈতিক কিংবা অন্য কোনো মতাদর্শে প্রভাবিত হয়ে বড় ধরনের দুর্নীতিবাজ শেষ পর্যন্ত যেন ছাড় না পায়, সেই প্রচেষ্টার কথাও জানান তিনি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সংস্থাটির মহাপরিচালক আক্তার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগামীতে তরুণ প্রজন্ম নেতৃত্ব দেবে। সৎ ও নৈতিক জ্ঞান সম্পন্ন তরুণ প্রজন্ম তৈরি করা গেলে দুর্নীতির লাগাম টেন ধারা সহজ হবে। আমরা দুর্নীতিমুক্ত ও বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন দেখি। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সবার সব স্তরের মানুষের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। সময়ের পরিক্রমায় দুর্নীতির ধরন পরিবর্তন হয়েছে। শুধু দুদকের পক্ষে দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধ সম্ভব নয়। সবাইকে একসঙ্গে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে।