গাজীপুর: বিশ্ব ইজতেমার ৪২ দিন পূর্বেই জোড় ইজতেমা নিয়ে বিবদমান দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে তিনজন নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। ইজতেমা ময়দানের শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, এপিবিএনসহ সশস্ত্র বাহিনীর প্রায় এক হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক ময়দান খালি করে তিন কিলোমিটারের মধ্যে একের অধিক ব্যাক্তি চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়েছে।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) ভোররাত থেকে থেমে থেমে বিকেল পর্যন্ত বিচ্ছিন্নভাবে সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) অপরাধ দক্ষিণ বিভাগের উপকমিশনার এন এম নাসিরুদ্দিন কালের কন্ঠকে তিনজন নিহতের সংবাদ নিশ্চিত করেন।
নিহতরা হলেন, কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানার এগারসিন্দু গ্রামের মৃত উসমান মিয়ার ছেলে আমিনুল হক বাচ্চু (৭০), ঢাকার ভাটারা থানার বেড়াইদ এলাকার আব্দুস সামাদের ছেলে বেলাল হোসেন (৬০) ও আরেকজন হলেন বগুড়া জেলার তাজুল ইসলাম (৭০)। তবে দুই পক্ষের দাবির প্রেক্ষিতে নিহতের সংখ্যা ৬ জন হলেও ৩ জনের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে এবং তিনজনকেই দুই পক্ষ নিজেদের লোক বলে দাবী করছেন।
আহতদের মধ্যে যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন, খোরশেদ আলম (৫০), বেলাল (৩৪) কেরানীগঞ্জ, আনোয়ার (৫০) নারায়ণগঞ্জ, আবু বক্কর (৫৯) নারায়ণগঞ্জ, আরিফুল ইসলাম (৫০), আনোয়ার (২৬) সাভার, আনোয়ার (৭৬) নোয়াখালী সদর, ফোরকান আহমেদ (৩৫) সাতক্ষীরা, আ. রউফ (৫৫) বি বাড়িয়া, মজিবুর রহমান (৫৮) ময়মনসিংহ, আ. হান্নান (৬০) গাজীপুর, ঢাকা মেডিকেল, জহুরুল ইসলাম (৩৮) টঙ্গী, আরিফ (৩৪) গোপালগঞ্জ, ফয়সাল (২৮) সাভার, তরিকুল (৪২) নরসিংদী, সাহেদ (৪৪) চট্রগ্রাম, উকিল মিয়া (৫৮) নরসিংদী, পান্ত (৫৫) টঙ্গী, খোরশেদ আলম (৫০), বেলাল (৩৪) কেরানীগঞ্জ, আনোয়ার (৫০) নারায়ণগঞ্জ, নুর আলম (৫০) খুলনা সদর, নুরুল হাকিম (৩০), শাহজাহান (৪৫) কিশোরগঞ্জ সদর, মো: হান্নান (৫০)। হতাহতদের ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, রাত সোয়া তিনটার দিকে সাদপন্থিরা তুরাগ নদীর পশ্চিম তীর থেকে কামারপাড়া ব্রীজসহ বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে ইজতেমা ময়দানে প্রবেশ করতে থাকে। এসময় ময়দানের ভেতর থেকে জুবায়েরপন্থিরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। জবাবে সাদপন্থিরাও পাল্টা হামলা চালায়। একপর্যাায়ে সাদপন্থিরা ময়দানে প্রবেশ করলে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে তিনজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। ইজতেমা ময়দানে সংঘর্ষের ফলে হতাহতদের টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নেয়া হয়। সংঘর্ষকালে সিডিএল ভবনের সামনে মুসল্লিবাহী বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
আজ সকাল ১১টার দিকে সাদপন্থিরা ইজতেমা ময়দানে এক সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সম্মেলনে মুয়াজ বিন নূর বলেন, গতকাল সারাদেশ থেকে আমাদের সাথীরা ইজতেমা ময়দানের তুরাগ নদীর পশ্চিম পাড়ে অবস্থান নেয়। রাত ২ টার পর ইজতেমা ময়দান থেকে জুবায়েরপন্থিরা মশাল হাতে নিয়ে আমাদের সাথীদের উপর ঝাপিয়ে পড়লে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এরপর জুবায়েরপন্থিরা ময়দান ছেড়ে গেলে আমাদের সাথীরা ময়দানে প্রবেশ করেন। বর্তমানে আমাদের এক লাখ সাথী ময়দানে আছে এবং ময়দানের পুরো নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে রয়েছে।
এদিকে সকাল ১০টার পর টঙ্গী শহিদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে দুই সাংবাদিক আহত হয়। দুপুরে একই হাসপাতালে বিবদমান দুই গ্রুপের মধ্যে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ হয়। এতেও কয়েকজন আহত হয়। বেলা ১২টায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের একাধিক জায়গায় জুবায়েরপন্থিরা মহাসড়ক অবরোধ করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের সরিয়ে দেয়।
বেলা দেড়টার দিকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ এক গণ বিজ্ঞপ্তি জারী করে। বিজ্ঞাপ্তিতে বলা হয়, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ আইন ২০১৮ এর ৩০ ও ৩১ ধারায় পুলিশ কমিশনারকে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে অদ্য ১৮/১২/২০২৪ তারিখ ১৪:০০ ঘটিকা হতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ব ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশের ০৩ (তিন) কিলোমিটার গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ এলাকায় যে সব আদেশ বলবৎ থাকবে। তা হলো: ক) বিশ্ব ইজতেমা মাঠে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হলো। খ) পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা মায়দানসহ আশপাশের ০৩ (তিন) কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ০২ (দুই) বা ততোধিক ব্যক্তি একত্রে ঘোরাফেরা জমায়েত এবং কোন মিছিল সমাবেশ করতে পারবে না। গ) কোন প্রকার অস্ত্র-শস্ত্র, ছুরি, লাঠি, বিস্ফোরক দ্রব্যাদি বা এ জাতীয় কোন পদার্থ বহন করতে পারবে না। ঘ) কোন প্রকার লাউড স্পীকার বা এ জাতীয় কোন যন্ত্র দ্বারা উচ্চস্বরে কোন শব্দ করতে পারবে না। জনস্বার্থে জারি করা এই গণ বিজ্ঞপ্তি অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানানো হয়। এসংক্রান্তে জনসাধারণকে অবহিত করতে মাইকিং করা হয়। বিকেল ৪টায় এই রিপোর্ট লেখার সময় ইজতেমা ময়দান থেকে সাদপন্থি মুসল্লিদের দলে দলে বের হয়ে চলে যেতে দেখা যায়।