আঞ্চলিক প্রতিনিধি গাজীপুর: নিরাপত্তা চেয়ে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আহত এক ছাত্রের বাবা ও মামলার বাদী সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন।
রবিবার(৮ ডিসেম্বর) বিকেলে টঙ্গীর চেরাগাআলী এলাকায় একটি রেস্টুরেন্টে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলন ৪ আগস্ট উত্তরার বিএনএস টাওয়ারের সামনে আহত টঙ্গী সফিউদ্দিন সরকার একাডেমী এন্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির মোধাবী ছাত্র আব্দুল্লাহ আল মামুনের পিতা আহসান উল্লাহ ও তার আইনজীবী এডভোকেট জিয়াউল হাসান স্বপন উরফে জিএস স্বপন বক্তব্য রাখেন।
সম্মেলনে বলা হয়, টঙ্গী সফিউদ্দিন সরকার একাডেমী এন্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির মোধাবী ছাত্র আব্দুল্লাহ আল মামুন গত ৪ আগস্ট উত্তরা বিএনএস টাওয়ারের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনে যোগ দেন। এসময় পুলিশ, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতাকর্মীরা এবং ফ্যাসিবাদ সরকারের অন্যান্য দোসররা ছাত্রদের ওপর চারদিক থেকে আক্রমন চালায়। এতে আব্দুল্লাহ আল মামুন চোখসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে গুলিবিদ্ধ হন। তাকে প্রথমে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও পরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হামলায় অন্ধত্ববরণকারী আব্দুল্লাহ আল মামুন এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আব্দুল্লাহ ভবিষ্যতে আমাদের মাঝে হয়তো ফিরে আসলেও সে আর পৃথিবীর আলো দেখতে পারবে না, আজীবন পরিবারের বোঝা হয়ে থাকবে।
সম্মেলনে অভিযোগ করে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণতান্ত্রিক মিছিলে হামলাকারী, উস্কানিদাতা, মদদদাতা তথা ফ্যাসিবাদের দোসরদের ব্যাপারে আমাদের চেয়ে অবশ্যই আপনারা বেশি অবগত। আওয়ামী লীগ ও এর প্রত্যেকটি অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা এবং তাদের পরিবারের প্রত্যেকটি সক্ষম সদস্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর সর্বাত্মভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আওয়ামী লীগ পরিবারের কিশোর ছাত্র-অছাত্ররাও চিহ্নিত সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদ সরকারের সৈনিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল। গত ৪ আগস্ট উত্তরা বিএনএস টাওয়ারের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিলে অংশগ্রহনকারী মেধাবী ছাত্র আব্দুল্লাহ আল মামুনের ওপর হামলাকারী ও ইন্দনদাতাদের ব্যাপারে যথা সম্ভব তথ্য সংগ্রহ করেই আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা দায়ের করি। ওই দিনের হামলায় আওয়ামী পরিবারের একাধিক কিশোর সদস্যও অংশ নিয়েছিল। আমরা তাদের মধ্যে একজন কিশোরের নাম-পরিচয় সনাক্ত করে মামলার এজাহারে উল্লেখ করি। ওই কিশোরকে তার বাবার (আওয়ামী লীগ নেতা) সাথে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে দেখেছেন এমন একাধিক সাক্ষীও আছে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, ওই কিশোরকে মামলায় আসামী করার অজুহাতে অন্যান্য আসামীরা মামলাটিকে মিথ্যা প্রমাণের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে এবং বাদীপক্ষকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে। এমনকি বাদীপক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবীকে নিয়েও ফ্যাসিবাদের দোসররা পরিকল্পিত অপপ্রচারে নেমেছে। মেধাবী ছাত্র আব্দুল্লাহ আল-মামুনসহ ছাত্র-জনতার রক্তের দাগ মূছতে না মূছতেই ফ্যাসিবাদের দোসররা একের পর এক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। মামলায় একজন কিশোর অপরাধীকে আসামী করায় তারা জনমনে সহানুভূতি সৃষ্টির নানা অপকৌশল নিয়েছে। অথচ একজন মেধাবী ছাত্র অন্ধত্ববরণ করলেও এব্যাপারে তাদের কোন আপসোস বা ভ্রুক্ষেপ নেই। বিগত ফ্যাসিবাদ সরকারের সময় কবরবাসী মৃতব্যক্তি, হাসপাতালে ভর্তি গুরুতর রোগী ও বিদেশে অবস্থানরত বিরোধী দল ও ভিন্ন মতের অসংখ্য মানুষের বিরুদ্ধে বহু মিথ্যা মামলা হলেও তখন আমাদের দেশের অধিকাংশ মিডিয়া চুপ ছিল। এখন আমাদের ভুল ধরার জন্য মিডিয়ার অভাব নেই। হয়তো আমাদের মামলার এজাহারে বর্ণিত ২০৩ জন আসামীর মধ্যে তথ্যগত ভুলের কারণে কারোর নাম আসতেই পারে। স্বাক্ষ্য-প্রমাণ বা তদন্তেই ঘটনায় আসামীদের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হবে। কিন্তু দু’একটি নাম নিয়ে পরিকল্পিত বিতর্ক সৃষ্টি করে পুরো মামলাটিকে মিথ্যা প্রমাণের জন্য আসামীদের সাম্প্রতিক অপতৎপরতা খুবই রহস্যজনক।
সম্মোলনে মামলার বাদী ও আইনজীবী সহ বাদী পক্ষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আসামীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার দাবী করা হয়।