জান্তাপ্রধানকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানার আবেদনকে স্বাগত বাংলাদেশের

Slider সারাবিশ্ব


মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো এবং তাদের একটি বড় অংশকে বাস্তুচ্যুত করায় দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট এবং সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অংশ হ্লেইংয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন জমা পড়েছে নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের শীর্ষ কৌঁসুলি করিম আসাদ আহমেদ খান এ আবেদন জমা দিয়েছেন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে আইসিসির এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানানো হয়েছে।

বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বক্তব্যে করিম খান বলেন, ২০২২ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন তিনি। সেই সফরে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প সরেজমিনে পরিদর্শনের পাশপাশি সেখানে বসবাসরত রোহিঙ্গা কমিউনিটির বেশ কয়েক জন নেতা এবং বাংলাদেশের সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। তারপর নেদারল্যান্ডসে ফিরে আইসিসির দপ্তরে সফরের অভিজ্ঞতা বিষয়ক প্রতিবেদন এবং মিয়ানমারের জান্তাপ্রধানকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারির আবেদন জমা দেন।

“গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির জন্য আমার দপ্তর থেকে যে আবেদন করা হয়েছিল, সেখানে বলা হয়েছিল যে ২০১৬-’১৭ সালে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যত মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল এবং যেসব রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে পালাতে বাধ্য করা হয়েছিল— প্রতিটি ক্ষেত্রে মিয়ানমারের জ্যেষ্ঠ জেনারেল এবং ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট মিন অং হ্লেইংয়ে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সে সময় জেনারেল হ্লেইং সেনাপ্রধান ছিলেন এবং মূলত তার নির্দেশেই ঘটেছে এসব অপরাধ”, নিজ বক্তব্যে বলেন করিম খান।

আইসিসিসূত্রে জানা গেছে, আবেদনটি বর্তমানে আদালতের প্রি-ট্রায়াল চেম্বারের ১ নম্বর বিচারকের দপ্তরে রয়েছে। আবেদনের সঙ্গে যেসব সাক্ষ্য-প্রমাণ জমা দেওয়া হয়েছে, সেসব আমলে নিয়ে বিচারক এখন এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। পরোয়ানায় একবার তার স্বাক্ষর পড়লে জেনারেল হ্লেইংকে গ্রেপ্তারে তৎপরতা শুরু করবে আদালতের শীর্ষ কৌঁসুলির দপ্তর।

এদিকে জেনারেল হ্লেইংয়ের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদনকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেরশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। বাংলাদেশের সরকারের রোহিঙ্গা অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক মুখপাত্র খলিলুর রহমান আইসিসির শীর্ষ কৌঁসুলির এ পদক্ষেপের প্রশংসা করে তুরস্কের রাষ্টায়ত্ত সংবাদসংস্থা আনাদোলু এজেন্সিকে বলেন, “এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্যোগ এবং মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং রোহিঙ্গাদের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার প্রাথমিক পদক্ষেপ।”

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইন রাজ্যের বেশ কয়েকটি সেনা ছাউনি ও পুলিশ স্টেশনে একযোগে বোমা হামলা ঘটে। পরে এই হামলার দায় স্বীকার করে সশস্ত্র রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা)।

এ হামলার পরপরই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। ভয়াবহ সেই সেনা অভিযানে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের মুখে টিকতে না পেরে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। এখনও কক্সবাজারের টেকনাফ জেলার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে রয়েছে তারা।

সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *