‘আগামীকাল থেকেই শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়নে কাজ শুরু হবে’

Slider শিক্ষা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক নাসির উদ্দীন বলেছেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের যে যৌক্তিক দাবি রয়েছে, সেগুলো যাতে বাস্তবায়ন করা যায় সেই লক্ষ্যে আগামীকাল (মঙ্গলবার) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবি আগামীকাল থেকে বাস্তবায়ন শুরু হয়ে যাবে।

সোমবার (১১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সচিবালয়ে ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন তিনি।

অধ্যাপক নাসির উদ্দীন বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে আমরাও আছি। দাবি পূরণ না হলে আমরাও আন্দোলনে অংশ নেব। শিক্ষার্থীদের আবাসনের সমস্যা রয়েছে, সেনাবাহিনীর হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করে শিক্ষার্থীদের এই কষ্ট দূর করা হবে।

তার বক্তব্যের পর শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের সামনে থেকে অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন। সেখান থেকে তারা সরে গেলে সচিবালয়ের সামনের সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন তথ্য উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি আগামী তিন দিনের মধ্যে দাবি পূরণের আশ্বাস দেন। তবে শিক্ষার্থীরা তা মানতে নারাজ, তারা এক কর্মদিবসের মধ্যে দাবি মেনে নেওয়ার তাগিদ দেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা ছাত্র আন্দোলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান ভুলে যাইনি। আমাদের একটাই কষ্ট, এখনো শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের জন্য রাস্তায় নামতে হয়। আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, আপনাদের সব দাবি আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে মেনে নেওয়া হবে।

এসময় শিক্ষার্থীরা তিন কর্মদিবসের বিষয়ে অস্বীকৃতি জানালে নাহিদ ইসলাম বলেন, হলের সমস্যা তো আর একদিনের মধ্যে সমাধান সম্ভব নয়। আমরা আপনাদের দাবির বিষয়টা দেখছি। আর ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ সেনাবাহিনীর হাতে হস্তান্তরের বিষয়টা আমি আজই দেখছি।

উপদেষ্টা বলেন, আপনাদের দাবিগুলো যৌক্তিক। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থাকবে না, হল থাকবে না, এটা হতে পারে না। আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, দ্রুত এসব দাবি মেনে নেওয়া হবে।

এসময় শিক্ষার্থীরা একদিনের মধ্যে লিখিত প্রতিশ্রুতি চান। পাশাপাশি অসহযোগিতামূলক আচরণ করার জন্য শিক্ষা সচিবকে ক্ষমা চাইতে বলেন।

তখন নাহিদ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দলকে সচিবালয়ের ভেতরে যাওয়ার আহ্বান জানান। পরে ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সচিবালয়ের ভেতরে প্রবেশ করেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থী একেএম রাকিব বলেন, শিক্ষা সচিবকে ক্ষমা চাইতে হবে এবং দাবি মেনে নেওয়ার বিষয়টি লিখিতভাবে দিতে হবে। তা না হলে আমরা এখান থেকে যাব না।

তিনি জানান, তাদের ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল দাবি জানিয়ে শিক্ষা সচিবকে স্মারকলিপি দিতে সচিবালয়ে প্রবেশ করেছিল। কিন্তু সচিব তাদের সঙ্গে দেখা করেননি।

এর আগে সোমবার দুপুর থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সচিবালয় অবরুদ্ধ করে রাখেন।

তারা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দ্বিতীয় ক্যাম্পাসসহ পাঁচ দফা দাবি উপস্থাপন করে আন্দোলন করছিলেন। সেগুলো হলো–

১. স্বৈরাচার আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রজেক্ট ডিরেক্টরকে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং সাত দিনের মধ্যে সেনাবাহিনীর দক্ষ অফিসারদের হাতে জবির নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণের দায়িত্ব অর্পণ করতে হবে।

২. শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা ঘোষণা করতে হবে যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

৩. অবিলম্বে বাকি ১১ একর জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং পুরাতন ক্যাম্পাস নিয়ে স্বৈরাচার সরকারের আমলের সব চুক্তি বাতিল করতে হবে।

৪. সম্প্রতি ইউজিসি ঘোষিত পাইলট প্রকল্পে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

৫. বিশ্ববিদ্যালয়ের বাৎসরিক বাজেট বরাদ্দ সর্বনিম্ন ৫০০ কোটি টাকা হতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস. এম. এ. ফায়েজের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছে ব্রিটিশ কাউন্সিলের একটি প্রতিনিধি দল।

সোমবার (১১ নভেম্বর) ইউজিসিতে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, ইউজিসি সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পরিচালক জেসমিন পারভীনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিটিশ কাউন্সিলের চার সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন প্রতিষ্ঠানটির কান্ট্রি ডিরেক্টর স্টিফেন ফোর্বস। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সাক্ষাৎকালে ট্রান্সন্যাশনাল হায়ার এডুকেশন মডেলের আওতায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা কীভাবে সামাজিক ও আর্থিক সুবিধাপ্রাপ্ত হবে তার বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। এ বিষয়ে একটি পলিসি ডায়ালগ আয়োজনের ওপর তারা গুরুত্বারোপ করেন।

সাক্ষাৎকালে স্টিফেন ফোর্বস ট্রান্সন্যাশনাল হায়ার এডুকেশনের আওতায় দেশের উচ্চশিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাজ করার আগ্রহ ব্যক্ত করেন। এক্ষেত্রে জয়েন্ট ডিগ্রি, ডুয়াল ডিগ্রি, কোয়ালিটি অ্যাসিওরেন্স সেন্টার, টিচিং-লার্নিং ও গবেষণা সহযোগিতা প্রদানে তিনি আশ্বাস দেন।

দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিকীকরণ, শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি, উচ্চশিক্ষা খাতে একাডেমিক অংশীদারিত্ব তৈরি এবং উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন বিষয়ে এসময় আলোচনা করা হয়।

সাক্ষাৎকালে প্রফেসর ফায়েজ বলেন, ইউজিসি মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে কাজ করছে। উচ্চশিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ব্রিটিশ কাউন্সিলের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও জোরদার করা হবে বলে তিনি জানান।

প্রফেসর তানজীমউদ্দিন খান বলেন, ট্রান্সন্যাশনাল হায়ার এডুকেশনের আওতায় বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠিত হলে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অর্থ ব্যয়ের একটা অংশ দেশের সীমানার ভেতরে থাকবে। এক্ষেত্রে অর্থের একটা অংশ বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও পাবে। মানসম্মত উচ্চশিক্ষায় ভূমিকা গ্রহণের জন্য তিনি ব্রিটিশ কাউন্সিল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।

প্রফেসর আনোয়ার হোসেন বলেন, মানসম্মত উচ্চশিক্ষা ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সংলাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চশিক্ষার সঙ্গে সমাজ, প্রকৃতি ও সাধারণ মানুষের সংযোগ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। একইসঙ্গে শিক্ষার আন্তর্জাতিকীকরণে মেধা পাচার যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *