যারা বৈষম্য সৃষ্টি করেছে, মানুষকে হত্যা করেছে তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবেনা-ডাঃ শফিকুর রহমান

Slider রাজশাহী


মাসুদ রানা সরকার, বগুড়া জেলা প্রতিনিধি :ফ্যাসিবাদমুক্ত বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ গড়তে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে আমীরে জামায়াত ডা: শফিকুর রহমান ২৬অক্টোবর/২৪,শনিবার জনসভায় বলেছেন, দল-ধর্ম যার যার, এই বাংলাদেশ সবার। আমরা এমনটা বাংলাদেশ গড়তে চাই যেখানে কোন বৈষম্য থাকবেনা। যেই তারুণ্যের বুকের রক্তের বিনিময়ে জাতি ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে আমরা সেই তারুণ্য নির্ভর, মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। একজন শিশু জন্মের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সে একজন নাগরিকের পূর্ন অধিকার ভোগ করবে। বিতাড়িত ফ্যাসিবাদ সাড়ে ১৫ বছরে দেশের মানুষকে শুধু খুন, গুম উপহার দিয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তাদেরকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। যারা অপরাধ করেছে, দূর্নীতি করেছে, লুটপাট করেছে, বৈষম্য সৃষ্টি করেছে, মানুষকে হত্যা করেছে, লাশের মিছিল তৈরি করেছে, আয়নাঘর বানিয়েছে তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবেনা। তিনি শনিবার বিকেলে জামায়াতে ইসলামী বগুড়া শহর শাখার আমির অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেলের সভাপতিত্বে ঐতিহাসিক আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে জামায়াতে ইসলামী বগুড়া শহর ও জেলা শাখা আয়োজিত এক বিশাল সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।আমীরে জামায়াত বলেন, আওয়ামীলীগ বিচারের নামে প্রহসন করে আমাদের প্রথম সারির এগারো জন নেতাকে ঠান্ডা মাথায় খুন করেছে। আমাদের কেন্দ্রিয় অফিসসহ সারাদেশের সকল অফিস বন্ধ করে দিয়েছিল। সাড়ে ১৩ বছর আমরা আমাদের অফিসে বসে কোন কাজ করতে পারিনি। গারে জোরে আমাদের নিবন্ধন এবং প্রতীক কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। বুলডোজার দিয়ে আমাদের বাড়ী-ঘর মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছিল। চব্বিশের ছাত্রজনতার আন্দোলনে দিশেহারা হয়ে শেষ পর্যন্ত জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা শুধু ক্ষমতা ছাড়েনি, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ভয়ে দেশ ছেড়েই পালাতে বাধ্য হয়েছে। তিনি বলেন, যারা দেশের মানুষের বুকে গুলি চালিয়েছিল সেই জনগণের কাছে ভোট চাওয়ার নৈতিক অধিকার তাদের নেই। তাদের নাম বাংলাদেশের জনগন শুনতে চায় না। তাদের কথা বলে জাতিকে ভয় দেখাবেন না। জাতিকে বোকা ভাববেন না। দেশের মানুষ যাদের গুলিকে ভয় করে নাই সেইসব দূর্ধর্ষ খুনিদেরকে এদেশের মানুষ কখনোই আসতে দিবেনা। আগে তাদের বিচার হবে উল্লেখ করে আমীরে জামায়াত বলেন, যেই আদালতে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদেরকে অন্যায় ভাবে ফাঁসী দেওয়া হয়েছে এখন সেই আদালতেই তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। আমরা চাই তাদের প্রতি যেন ন্যায় বিচার করা হয়। তারা যেন উপযুক্ত শাস্তি পায়।সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রিয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন ও বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহ-সভাপতি গোলাম রব্বানী। আমন্ত্রিত অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামী জয়পুরহাট জেলা শাখার আমীর ডা: ফজলুর রহমান সাঈদ, সিরাজগঞ্জ জেলা আমীর মাওলানা শাহীনুর আলম।এর আগে সকালে প্রবল বর্ষন উপেক্ষা করে একই ভেন্যুতে বগুড়া শহর ও জেলা শাখার রুকন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। রুকন সম্মেলনে আমীরে জামায়াত বলেন, ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তির আন্দোলনের কোন একক মাষ্টার মাইন্ড নেই। দেশের মানুষ আন্দোলনে শামিল হয়েছিল। আন্দোলনের নেতৃত্বের কৃতিত্ব যুবসমাজের। যাদের জীবনের বিনিময়ে আমরা জুলুম থেকে মুক্তি পেয়েছি সেইসব বীর শহীদদের কে জামায়াতে ইসলামী দলীয়ভাবে বিবেচনা করেনা। তাঁরা জাতীয় বীর। তিনি বলেন, জনগণ বিভক্ত জাতি দেখতে চায় না। তারা ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চায়। আমরাও দল-মতের ঊর্দ্ধে উঠে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে চাই। দল-মতের ভিন্নতা থাকলেও দেশের জন্য সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।বিগত ৫ আগষ্টের/২৪, পট পরিবর্তনের পর বহু আগাছা-পরগাছা মাথা চাঁড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। এদেরকে প্রতিহত করতে হবে। আমীরে জামায়াত বলেন, চব্বিশের আন্দোলনের শেষের দিনগুলো মোটেও সহজ ছিলোনা। আন্দোলনকারীদের জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। তারা একসাথে বসে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলোনা। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই তারা লড়াই করে জাতিকে মুক্তি এনে দিয়েছে। হাজারো প্রানের বিনিময়ে, হাজার হাজার আহতদের আর্তনাদের বিনিময়ে বিজয় এসেছে। সকল শহীদ এবং আহতদের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী সাধ্যমত সকল শহীদ এবং আহতদের পাশে থাকবে। তিনি বগুড়ায় আন্দোলনে আহতদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে নির্দেশনা প্রদান করেন। আমীরে জামায়াত বলেন, আমাদের দেশ বিপুল সম্ভাবনার দেশ। জাতি একটি ইনসাফপূর্ন সমাজ চায়। গোটা জাতি আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। জাতিকে হতাশ করা যাবেনা। তাদেরকে আশাবাদী করতে হবে। সবার ঘরে ঘরে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে। তিনি রুকনদেরকে ব্যক্তি ও পরিবার গঠনে দায়িত্ববান হওয়ার আহ্বান জানান। সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন বগুড়া অঞ্চলের টীম সদস্য মাওলানা আব্দুর রহীম ও অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, জয়পুরহাট জেলা আমির ডা: ফজলুর রহমান সাঈদ, সম্মেলনে নবনির্বাচিত বগুড়া শহর আমির অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেল ও বগুড়া জেলা আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল হক সরকারকে শপথ বাক্য পাঠ করান আমীরে জামায়াত। বগুড়া শহর ও জেলা শাখার ৪ হাজার ৪৭ জন রুকন সম্মেলনে অংশগ্রহন করেন। বগুড়া শহর সেক্রেটারি আ,স,ম আব্দুল মালেক সম্মেলনের প্রস্তবনা পাঠ করেন শোনান। উপস্থিত রুকনবৃন্দ সর্বসম্মতভাকে প্রস্তাবনা অনুমোদন করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *