ভিক্ষার টাকায় জমি কিনে বাড়ি বানাইছি জোর করে কোম্পানি নিয়া যাইতে চায়

Slider বাংলার মুখোমুখি


রমজান আলী রুবেল, শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি: আল্লঅহ্ তুমি দেহ। আমার ভিটে মাটি সব নিয়া যাইতেছে। আমারে দেহার কেউ নাই। এমই করে বাড়ির আঙ্গীনায় মাটিকে গড়াগড়ি করে আহাজারী করছিলেন ষাটোর্ধ আফেলা খাতুন। এক টুকরো বশত ভিটে জবরদখলের হাত থেকে রক্ষা করতে মাটিতে পড়ে আল্লার কাছে সাহায্য চাইছিলেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা গাজীপুর ইউনিয়নের উত্তর নয়াপাড়া গ্রামে। দুই হাতে বুক চাপড়ে হাওমাও করে আফেলা বলেন,“ আল্লাহ্ আমার বাড়ি রক্ষা কর। আমার কেউ নাই। দেশে কি বিচার নাই ? আমিকি বিচার পামু না ?
সিলমুন কোম্পানীর লোকজন দাও লাঠি নিয়া আসে। বাড়ি ছাড়তে হুমকি দেয়। আমি পুলা মাইয়া লইয়া কোনে যামু।” নিজের বশত ভিটা জমি রক্ষা করতে শুধু আফেলা নয় এমন অভিযোগ ওই গ্রামের নাজমুল,রফিক,ফিরুজা ও হামিদের। ১২ অক্টোবর শনিবার দুপুরে সরেজমিনে গেলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগে উঠে আসে এমন তথ্য।

ভূক্তভোগী দের অভিযোগ সাবেক ইউনিভার্সাল বর্তমানে সিলমুন কোম্পানী কতৃপক্ষ আমাদের মালিকানার জমি জবরদখল করে সীমানা বেড়া দিচ্ছে। আমাদের কে জমি ছেড়ে চলে যেতে প্রতিনিয়ন হুমকী দিচ্ছে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছি।

স্থানীয়রা জানান,ইউনিভার্সাল কোম্পানী দীর্ঘ দিন যাবত আমাদের জমি অন্য লোকের নিকট থেকে ক্রয়করে আমাদের উচ্ছেদের চেষ্টা করছে। গত পাঁচ আগষ্ট ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর ওই কোম্পানী ও তাদের নাম পাল্টে ফেলে। রাতারাতি ইউনিভার্সাল কোম্পানী হয়ে গেলো সিলমুন। এখন সিলমুন কোম্পানীর নামে সাইনবোর্ড দিয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আমাদের বশত ভিটা থেকে উচ্ছেদের অভিযান চালাচ্ছে।

আফেলা খাতুন আরো বলেন, ভিক্ষার টাকায় জমি কিনে বাড়ি বানাইছি। বহু বছর যাবৎ একটি মাটির ঘরে প্রতিবন্ধী স্বামী সন্তান নিয়া আছি । আমাদের বাড়ির চারপাশে টিন দিয়ে বেড়া দিচ্ছে। সন্ত্রাসীর আইসা হুমকি দিচ্ছে বাড়ি ছাইরা চইলা যাইতে। অহন কই জামু।
আব্দুল হামিদ বলেন, আমরা ভালো নেই, ক্ষমতা খাটিয়ে আমাদের ভিটেমাটি ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে সব সময়। বাড়ির চারপাশে টিনের বেড়া দিয়েছে সিলমুন কারখানার সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। জমি ছাড়তে প্রতিনিয়ত হুমকি ধমকি দেয়া হচ্ছে। আমরা স্ত্রী সন্তান নিয়ে চরম আতঙ্কে আছি।

নাজমুল জানান, আমার মালিকানা জমি সিলমুন কারখানার কতৃপক্ষ জবরদখল করেনিয়েছে। আমরা কোন জমি বিক্রি করিনাই ওরা কার কাছথেকে জমি কিনে দখল করেছে তা জানা নেই।

গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, শিল্প মালিকের সঙ্গে আমাদের কোন পাত্তা নেই। এতো অসহায় মানুষের জমি নিয়ে যাচ্ছে। ওরা এখন কি করবে? জমি জবরদখল হচ্ছে জানার পরও কিছু করতে পারছি না।

ইনিভার্সাল বর্তমানে সিলমুন কারখানার মানব সম্পদ কর্মকর্তা এচইআর এডমিন রবিউল আওয়াল বলেন, ২০১৭ সালে কারখানার জমি কেনা হয়। একটি অংশে কারখান চলমান আছে। বাকী জমি বিক্রেতাদের দখলে ছিলো। এখন নতুন কারখানা স্থাপনের জন্য বাকী জমি মেপে নির্মান কাজ শুরু করেছি। যে পরিবারটি জমির বিষয়ে অভিযোগ দিচ্ছে সে জমির মালিক কারখানা কতৃপক্ষ। এখানে কারো জমি জবর দখল করা হচ্ছেনা। কারো চলার রাস্তা বন্দ করা হচ্ছেনা। যারা জমি দাবী করছে তাদের মালিকানা যাচাইকরে মিমাংসার ব্যবস্থা করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *