এক চোখে পুলিশের গুলি অন্য চোখে বুটের আঘাত, অন্ধত্বের পথে শ্রাবণ

Slider জাতীয়

এক চোখে বুলেটের দুটি স্প্রিন্টার আরেক চোখে পুলিশের বুটের আঘাতের ক্ষত নিয়ে দুঃসহ জীবনযাপন করছেন ময়মনসিংহ নগরীর পুলিশ লাইন কাশর লাকীবাড়ীর শিক্ষার্থী মো. মেরাজ উদ্দিন শ্রাবণ (২১)। এতে চিরতরে তার এক চোখের আলো হারানোর শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে শ্রাবণ ও তার পরিবারের।

এই অবস্থায় শ্রাবণের চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি কোনও ধরনের সহযোগিতা নিয়ে পাশে দাঁড়ায়নি কেউ। এতে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশ নগরীর ঐতিহ্যবাহী আনন্দ মোহন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী শ্রাবণ।

জানা যায়, নগরীর পুলিশ লাইন কাশর লাকীবাড়ীর বাসিন্দা মিনহাজ উদ্দিনের ছেলে শ্রাবণ। তার বাবা একজন গার্মেন্টসকর্মী। পরিবারের অভাবের কারণে নিজের পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য বাবার সঙ্গে নিজেও গাজীপুর এলাকার একটি পোষক কারখানায় মেকানিকের কাজ করতেন। সেখানে গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেয় শ্রাবণ। এ সময় কোনাবাড়ি এলাকায় পুলিশের ছররা গুলিতে আহত হন তিনি। তার ডান চোখ, মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে গুলিবিদ্ধ হলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ সময় আহত অবস্থায় পুলিশ তাকে লাঠিপেটা করে চোখে বুটের আঘাত করে পিষে মারার চেষ্টা করে। বর্তমানে শ্রাবণ নিজ বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইন্সটিটিউট হাসপাতালে। সপ্তাহে একবার তাকে ঢাকায় হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে হয়।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গুলিবিদ্ধ শ্রাবণের শরীর থেকে গুলির স্প্রিন্টার বের করা হয়েছে। কিন্তু এখনো তার চোখের অভ্যন্তরে দুটি ও মাথায় চারটি গুলির স্প্রিন্টার রয়ে গেছে, সেগুলো বের করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে গুলিবিদ্ধ চোখে এখন তার দৃষ্টি নেই। সে দৃষ্টি ফিরবে কি না তাও এখনই বলা যাচ্ছে না।

এই অবস্থায় শ্রাবণকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠাতে চান বাবা মিনহাজ উদ্দিন। কিন্তু অর্থ সঙ্কটে তা তার পক্ষে সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন।

মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ছেলের দুঃসহ জীবন আমার ভালো লাগে না। ডাক্তাররা বলেছেন- তাকে সুস্থ করতে হলে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা করতে হবে। কিন্তু আমার সেই সামর্থ্য নেই। সরকারিভাবে আমি আমার ছেলের চিকিৎসা চাই।

শ্রাবণের মা সান্তনা ইসলাম বলেন, আমার ছেলে দেশের জন্য আন্দোলনে গিয়ে এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। কিন্তু কেউ আমার ছেলে খোঁজ নেয় না।

মেরাজ উদ্দিন শ্রাবণ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা জাতীর উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে বলেছেন আন্দোলনে আহত ও নিহতদের পরিবারের পাশে থাকবেন। আহতদের জন্য উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু সরকার, প্রশাসন বা আন্দোলনের কোনও সমন্বয়ক এখনো আমার খোঁজ নেয়নি। কাকে বলব এসব কথা। চিকিৎসার জন্য প্রতি সপ্তাহে ঢাকায় যাওয়া আসা আর ওষুধের অনেক খরচ। আমার দরিদ্র বাবা-মা কষ্ট করেই এসব ব্যবস্থা করছেন।

জানি না ভবিষ্যতে আল্লাহ আমার কপালে কি রেখেছেন— বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া এই তরুণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *