শেখ হাসিনা-কাদের-নিজাম হাজারীসহ ৬৬২ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

Slider বাংলার আদালত


ফেনীর মহিপালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আসামি করে মামলা হয়েছে। মামলায় দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ১৬২ জনের নাম উল্লেখ এবং আরও ৪০০-৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাতে মহিপালে হত্যাকাণ্ডে নিহত শিক্ষার্থী মাহবুবুল হাসান মাসুমের (২৫) ভাই মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় এ মামলা করেন। মহিপালে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এ নিয়ে পৃথক সাতটি হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ ২ হাজার ৫৮৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।

গুলিতে নিহত মাসুম সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া এলাকার নোমান হাসানের ছেলে। তিনি ছাগলনাইয়া আবদুল হক চৌধুরী ডিগ্রি কলেজ থেকে অনার্স চতুর্থ বর্ষের ফলপ্রার্থী ছিলেন।

এ মামলায় উল্লেখযোগ্য অন্য আসামিরা হলেন—ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী, ছাগলনাইয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি করতে প্ররোচনা, উসকানি ও নির্দেশনার অভিযোগে তাদের আসামি করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ফেনী মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মুশফিকুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ ঘটনায় দায়েরকৃত পৃথক সাতটি মামলায় পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মামলায় অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন—দাগনভূঞা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সভাপতি দিদারুল কবির রতন, পরশুরাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার সাবেক মেয়র নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাজেল, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার সাবেক মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকন, ছাগলনাইয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. মোস্তফা, সোনাগাজী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন, যুবলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম পিটু, জিয়া উদ্দিন বাবলু প্রমুখ।

এর আগে, এ ঘটনায় দায়েরকৃত ছয়টি মামলায় জেলার অন্তত অর্ধশতাধিক জনপ্রতিনিধিসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়।

প্রসঙ্গত, গত ৪ আগস্ট অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর মহিপাল এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছিলেন আন্দোলনকারীরা। একইসময়ে শহরের ট্রাংক রোডে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দুপুর ২টার দিকে মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মহিপাল ফ্লাইওভারের দিকে এগোতে থাকলে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। এ সময় মুহুর্মুহু গুলি, ককটেল বিস্ফোরণে চারপাশ প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। বিকেল ৫টা পর্যন্ত থেমে থেমে সেখানে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে মহিপালের পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হওয়া ছাড়াও ইটপাটকেলের আঘাতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, পথচারী ও সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৯ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।

দুই বছর আগে মরণব্যাধি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান জামালপুর শহরের পালপাড়া এলাকার মৃত নুরুল মেম্বারের ছেলে সফিকুল ইসলাম (৫০)। গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন ও মারধরের ঘটনায় জামালপুরের সদর থানার একটি মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে। সফিকুল ইসলাম পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ছিলেন।

গত মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) জামালপুর সদর থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলার বাদী পৌর শহরের ফুলবাড়িয়া দড়িপাড়ার মো. সুরুজ আলীর ছেলে হায়দার আলী।

জামালপুরের সাবেক পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন ছানু ও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফারহান আহমেদসহ ৮৩ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত ১৬০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মৃত সফিকুল ইসলামের নাম ৭৮ নম্বরে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর বিকেলে হায়দার আলী নামে ওই ব্যক্তি জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল থেকে ফেরার সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছানোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় অস্ত্র, বাঁশের লাঠি নিয়ে তার সঙ্গে থাকা তরিকুলের ওপর আক্রমণ করে জখম করে এবং ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। এ সময় তার ১২৫ সিসির একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে তাতে আগুনে দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তার সঙ্গে থাকা তরিকুলের পকেট থেকে নগদ ৩৮ হাজার টাকা এবং গলায় থাকা ১৪ আনা ওজনের স্বর্ণের চেইন ছিনতাই করা হয় এবং খুন করার হুমকি দেয়।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মৃত সফিকুল ইসলামের ছোট ভাই রফিকুল জানান, তার বড় ভাই সফিকুল ইসলাম ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বরে ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিনি অনেক আগে পৌর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ছিলেন। পরে রাজনীতি করেননি, ব্যবসা করতেন। সফিকুলের একটি মেয়ে রয়েছে। তাকে নিয়ে তার স্ত্রী বাড়িতেই থাকেন।

সফিকুল ইসলামের পরবারের পক্ষ থেকে দেওয়া মৃত্যু সনদপত্র অনুযায়ী সফিকুলের মৃত্যুর তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২। পেশায় ব্যবসায়ী ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুর কারণ ক্যানসার উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে মামলার বাদী হায়দার আলী বলেন, কারো সঙ্গে আমার বিরোধ নেই। তারা আমার গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। আমি সেখানে জিম্মি ছিলাম। আর মামলার এজাহারে যা লেখা আছে তাই আমার বক্তব্য।

জামালপুর সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মহব্বত কবির বলেন, গতকাল হায়দার আলী বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় মৃত মানুষের নাম থাকলে অধিকতর তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *