চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকা কমলাপুর আইসিডিগামী কন্টেইনার ট্রেন চলাচল ২৩ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। গত ১৮ জুলাই থেকে এ ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। একারণে চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে ৮০০ ধারণক্ষমতার স্থলে প্রায় ২৩শ কন্টেইনার আটকে রয়েছে। দ্রুত কন্টেইনার ট্রেন চালু না হলে ধারণ সক্ষমতা ও পরিচালন ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। কখন কন্টেইনার ট্রেন চালু হবে কেউ স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, চট্টগ্রাম বন্দরের আইসিডি ইয়ার্ডের ধারণ ক্ষমতা ৮শ টিইইউএস কন্টেইনার। কিন্তু বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) পর্যন্ত বন্দরের চট্টগ্রাম বন্দরের আইসিডি ইয়ার্ডে ২৩শ টিইইউএস কন্টেইনার জমা হয়েছে। তাছাড়া বহির্নোঙ্গরে আরও ঢাকার আইসিডিগামী কন্টেইনার জাহাজ বার্থিংয়ের অপেক্ষায় আছে। ঢাকা আইসিডিগামী আমদানি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছালে আইসিডি ইয়ার্ডে কনটেইনার সংরক্ষণ কঠিন হয়ে পড়েছে। মূলত ওভারওয়েট ওয়াগন স্বল্পতার কারণে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইসিডিয়ামী কন্টেইনার ঢাকা আইসিডিতে পাঠানো না গেলে ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন।
পাশাপাশি বাজারে কন্টেইনারে আমদানি করা পণ্যের দাম বৃদ্ধির ঝুঁকি ছাড়াও চট্টগ্রাম বন্দরের সার্বিক অপারেশনাল কার্যক্রম বিঘ্ন ঘটে কন্টেইনার জট সৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দর থেকে রেল কর্তৃপক্ষের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। গত ২ আগস্ট এই সংকট নিরসনে বাংলাদেশ রেলওয়ের সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ অপারেটিং সুপারিন্টেনডেন্টকে দেওয়া ওই চিঠিতে বন্দরের আইসিডি ইয়ার্ডে সম্ভাব্য অচলাবস্থা কাটিয়ে কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে রেলওয়ের পক্ষ থেকে কন্টেইনার ট্রেনের জন্য ইঞ্জিন বৃদ্ধির অনুরোধ করা হয়। পাশাপাশি ২০ ফুটের ওভারওয়েট কন্টেইনার পরিবহনে সক্ষম ওয়াগন সরবরাহকরণসহ দৈনিক ন্যূনতম ২০০ টিইইউএস ওয়াগন সরবরাহ করতে বিশেষ অনুরোধ করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের পক্ষে টার্মিনাল ম্যানেজার (কন্ট্রোল) অতীব জরুরি এই চিঠি দেন রেলওয়েকে। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশব্যাপী রাজনৈতিক সহিংসতায় এখনও ট্রেন চালাতে সংশয়ে রয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, স্বাভাবিক সময়ে (যখন পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের সময়) রেলওয়ে প্রতিদিন দুই জোড়া ট্রেন চট্টগ্রাম বন্দর-ঢাকা আইসিডিতে কন্টেইনার পরিবহন করতো। দুটি ট্রেনে করে প্রতিদিন বন্দর থেকে পণ্যবাহী কনটেইনার ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ঢাকা থেকে দুটি ট্রেনে করে খালি কনটেইনার ও রপ্তানিমুখী কন্টেইনার পরিবহন করতো। বন্দর থেকে দুটি ট্রেনে প্রতিদিন ১০০ থেকে প্রায় ১২০টি কন্টেইনার নিয়ে যাওয়া হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে বন্দরের জট কমাতে হলে প্রতিদিন ২০০টিরও বেশি কন্টেইনার পরিবহন জরুরি হলেও বন্দরের অনুরোধ রাখতে পারবে না বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, বন্দর থেকে কন্টেইনার ট্রেন চালু করতে আমরা রেল কর্তৃপক্ষের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করছি। আমাদের অপারেশনাল কাজের বিঘ্ন হচ্ছে। বন্দরে চট্টগ্রাম বন্দরের আইসিডি ইয়ার্ডের ধারণ ক্ষমতা ৮শ টিইইউএস কন্টেইনার। সেখানে প্রায় ২৩শ টিইইউএস কন্টেইনার জমা হয়েছে। বন্দর থেকে কন্টেইনার খালাস নিতে বুধবারও আমরা রেল কর্তৃপক্ষের সাথে মিটিং করেছি।
বিষয়টি জানতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ অপারেটিং সুপারিন্টেনডেন্ট মো.শহিদুল ইসলাম একাধিবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
তবে রেলওয়ে সূত্র জানায়, ট্রেন চালানো শুরু হলে সেটি দ্রুত স্বাভাবিক করার পরিকল্পনা রেলের রয়েছে। আপাতত রেলের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে রাষ্ট্রীয় উচ্চমহল থেকে নির্দেশনা ছাড়া ট্রেন চালানো ও কন্টেইনার ট্রেন বৃদ্ধির কোনও সুযোগ নেই। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, অর্থনীতি ও দেশের স্বার্থে পুলিশ, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় ১ আগস্ট থেকে শুধু কনটেইনার পরিচালনা করে রেলওয়ে। বর্তমানে দেশীয় পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন স্টেশন এলাকায় ট্রেন, কোচ, ইঞ্জিন ও রেলের সম্পদের ওপর আঘাত আসছে। এ অবস্থায় রেল ও পণ্যের নিরাপত্তার স্বার্থে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ট্রেন চলাচল সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন রেলের পরিবহন বিভাগের কর্মকর্তারা।
তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ মনে করছে, দেশব্যাপী কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে এমনিতে দেশের অর্থনীতি সংকটের মধ্যে পড়েছে। এর মধ্যে বন্দরে আমদানি হওয়া কন্টেইনার আইসিডিতে নিয়ে যেতে বিলম্ব হলে ব্যবসা বাণিজ্যের সংকট আরও তীব্র হচ্ছে। এমতাবস্থায় রেলপথের বাড়তি নিরাপত্তা দিয়ে হলেও অন্তত কন্টেইনারবাহী ট্রেন চলাচল বাড়ানো জরুরি বলে মনে করেন তারা।