৯ জেলায় হামলা-সংঘর্ষে আরো ৯৭ জনের মৃত্যু

Slider সারাদেশ


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ ও মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ঘিরে সংঘর্ষ ও হামলায় রাজধানীসহ ৯ জেলায় গতকাল সোমবার ৯৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩৫ জনের লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পদত্যাগের পর যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন হোটেল দ্য জাবির যশোরে অগ্নিসংযোগ করে ‘বিজয় মিছিলে’ থাকা লোকজন। এতে দগ্ধ হয়ে ১৩ জন নিহত ও ২০ জন গুরুতর আহত হয়।

আর ৯৭ মৃত ব্যক্তির মধ্যে কয়েকজন আগের দিন রবিবারের সংঘর্ষে আহত হয়েছিল। ওই দিনের হামলা-সংঘর্ষেও ৯৭ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল।

যশোরে শাহীন চাকলাদারের হোটেলে আগুন, নিহত ১৩

গিয়ে দেখা যায়, বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে যশোর শহরে বিজয় মিছিল বের করে ‘ছাত্র-জনতা’। মিছিল থেকে লোকজন চিত্রা মোড়ে হোটেল দ্য জাবির যশোরে ভাঙচুর শুরু করে।

দ্বিতীয় দফায় ৪টার দিকে তারা অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় হোটেলের নিচ থেকে ১২, ১৩ ও ১৪ তলায় আগুন জ্বলতে দেখা যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভাতে যান। এ সময় হোটেলে আটকা পড়া কয়েকজন ১৪ তলার বারান্দায় গিয়ে উদ্ধারের জন্য হাত নেড়ে ও নিশানা উড়িয়ে আকুতি জানায়।

উদ্ধারকারী একটি হেলিকপ্টার হোটেলের ছাদে ল্যান্ড করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এ সময় আটকা পড়া এক ব্যক্তি ছাদে গিয়ে দাঁড়ালে হেলিকপ্টার তাঁকে উদ্ধার করে।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ গতকাল রাত ৯টার দিকে কালের কণ্ঠকে জানান, জাবির হোটেলে অগ্নিদগ্ধ পাঁচজনের মরদেহ হাসপাতালের মর্গে আনে ফায়ার সার্ভিসের টিম। পরে আরো আটজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক।

ফায়ার সার্ভিস যশোরের উপপরিচালক, যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোছাইনের ফোনে যোগাযোগ করা হলেও কেউ ফোন ধরেননি।

এদিকে শাহীন চাকলাদারের হোটেল ছাড়াও তাঁর শহরের কাজীপাড়া কাঁঠালতলার বাসভবন, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, শহরের বকুলতলায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, শেখ রাসেলের ভাস্কর্যসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। শহরের চাঁচড়ায় যশোর-১ আসনের এমপি শেখ আফিল উদ্দিনের বিভিন্ন ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।

গাজীপুরে নিহত ৯

গাজীপুরে গতকাল সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় ৯ নিহত হয়েছে। এর মধ্যে শ্রীপুরে বিজিবির গাড়ি অবরোধ করলে গুলিতে ছয়জন, কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর আনসার ভিডিপি একাডেমিতে আন্দোলনকারীরা হামলার সময় গুলিতে দুজন ও গাজীপুর মহানগরের বাসন থানায় হামলার সময় গুলিতে একজন (অজ্ঞাতপরিচয়) নিহত হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারী। এ সময় শ্রীপুরে বিজিবির তিনটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। বাসন থানায় আগুন দেওয়া হয়।

শ্রীপুরে নিহতরা হলেন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার সিফাতউল্লাহ (২২), শ্রীপুরের দারগারচালা গ্রামের শরীফ আহমেদ (২০), ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার কাওসার (২৮), নান্দাইল উপজেলার জুয়েল মৃধা (৩০) ও অজ্ঞাতপরিচয় দুজন। কালিয়াকৈরে নিহতরা হলেন ইলিন শিকদার (৫০) ও অন্তর (২৫)।

ঝিনাইদহে প্রাণ গেল ৬ জনের

ঝিনাইদহে বিক্ষোভকারীদের হামলায় এক আওয়ামী লীগ নেতাসহ অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছে। গতকাল দুপর ২টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত জেলা শহর ছাড়াও আশপাশের এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পোড়াহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম হিরন রয়েছেন। তাত্ক্ষণিকভাবে অন্যদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর শোনার পর থেকেই বিক্ষোভকারীরা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করতে থাকে। দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ছয়জনকে কুপিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করে।

সিরাজগঞ্জে দুই পুলিশসহ আরো ৭ জনের প্রাণহানি

রবিবার সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলা এবং সিরাজগঞ্জ-২ আসনের এমপি জান্নাত আরা হেনরীর বাসায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যসহ আরো সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মৃতের সংখ্যা হলো ২৯। সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) আব্দুল হান্নান মিয়া জানান, রবিবার এনায়েতপুর থানায় হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আহত পুলিশের একজন এসআই ও একজন কনস্টেবলের গতকাল সকালে রাজারবাগের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এ ঘটনায় ১৫ পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হলো।

এদিকে গতকাল শহরে বেশ কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।

অন্যদিকে এনায়েতপুর থানায় হামলার সময় আহত তিন আন্দোলনকারীর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা হলেন এনায়েতপুরের গোপরেখী গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে কলেজছাত্র সিয়াম (১৭), আজুগড়া গ্রামের শফি উদ্দিনের ছেলে কলেজছাত্র সিয়াম (১৭) ও খুকনী গ্রামের শাহজাহান আলীর ছেলে ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইয়াহিয়া (৩০)।

রবিবার দুপুরে আন্দোলনকারীরা সিরাজগঞ্জ-২ আসনের এমপি জান্নাত আরা হেনরীর শহরের মুজিব সড়কের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছিল। রাত ১০টার দিকে ওই আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে ফায়ার সার্ভিস। এরপর বাসার বাথরুমের ভেতর থেকে দুই ব্যক্তির দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে।
আরো পড়ুন

লক্ষ্মীপুরে নিহত বেড়ে ১২

লক্ষ্মীপুরে রবিবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় আরো দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ১২ জনের মৃত্যু হলো। তাদের মধ্যে আটজন ছাত্রলীগ-যুবলীগের এবং চারজন আন্দোলনকারী। এ ছাড়া আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপুর বাসা থেকে ২৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। তবে উপজেলা চেয়ারম্যান ও জীবিত উদ্ধারকারীরা কে কোথায় আছে তা জানা যায়নি। গতকাল দুপুরে সদর হাসপাতালের আরএমও অরূপ পাল বলেন, মরদেহগুলো মর্গে রয়েছে।

নিহত শিক্ষার্থীরা হলো রায়পুর উপজেলার ওসমান গণি, সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর গ্রামের কাওসার ওয়াহেদ, শরীফপুর গ্রামের ছাবির হোসেন ও জেলার পৌর বাস টার্মিনাল এলাকার পাওয়ারী।

নিহত ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা হলেন তাওহিদ কবির রাফি, আকিবুল হাসান সিফাত, হারুনুর রশিদ, আহমেদ শরীফ, মো. রাসেল ও অজ্ঞাতপরিচয় তিনজন।
আরো পড়ুন

সাতক্ষীরায় নিহত ৯

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগরে গতকাল আন্দোলনকারী, আওয়ামী লীগ নেতাসহ ৯ জনকে গুলি করে এবং কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

সদর থানা ভস্মীভূত, নিহত ৫

কুষ্টিয়া শহরে গতকাল দুপুর থেকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় গুলিতে পাঁচজন নিহত এবং তিন শতাধিক আহত হয়েছে। নিহতরা হলেন আশরাফুল ইসলাম (২৬), বাবলু শেখ (৪৫), আব্দুল্লাহ (১৪), ইউসুফ (৫৫) এবং অজ্ঞাতপরিচয় এক রিকশাচালক (৪৫)।

এ ছাড়া বিক্ষুব্ধ লোকজন শহরে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের এমপি মাহবুবউল আলম হানিফের বাড়িতে হামলা করে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং কুষ্টিয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য কামারুল আরেফিনের দুটি বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।
আরো পড়ুন

ফরিদপুরে গুলিতে নিহত ১

ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানায় হামলার সময় অবরুদ্ধ পুলিশ সদস্যরা থানা থেকে বের হওয়ার সময় টিয়ার গ্যাসের শেল ও গুলি ছুড়লে একজন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছে। পরে থানা ভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে ও সন্ধ্যায় এসব ঘটনা ঘটে। নিহত গাড়িচালক সামচু ফরিদপুর শহরের পূর্ব খাবাসপুরের বাসিন্দা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *