জঙ্গিগোষ্ঠী আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) দেশের বাইরে থাকা বাংলাদেশী ব্লগারদের একটি হিটলিস্ট প্রকাশ করেছে। গতকাল বৃটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়। নতুন এ হিটলিস্টের ব্লগারদের মধ্যে বৃটেনে আছেন ৯ জন, জার্মানিতে ৭ জন, যুক্তরাষ্ট্রে ২ জন এবং কানাডা ও সুইডেনে আছেন একজন করে ব্লগার। এ বছর ইতিমধ্যে ৪ জন ব্লগারকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে অনেক ব্লগার দেশ ছেড়ে বিদেশ পাড়ি দিয়েছেন। এছাড়া ব্লগারদের অনেকের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে। কেউ কেউ পশ্চিমা দেশের নাগরিক। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম অনলাইনে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে হিটলিস্টটি প্রকাশ করেছে। তবে কোন ওয়েবসাইটে বিবৃতিটি প্রকাশ করা হয়েছে তা বলা হয়নি। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইসলামের শত্রু, নাস্তিক, ধর্মভ্রষ্ট, অবিশ্বাসী, ইসলাম-বিরোধী ব্লগার, ভারতের এজেন্টদের বাংলাদেশী নাগরিকত্ব বাতিল করুন… অন্যথায় সর্বশক্তিমান আল্লাহর দুনিয়ায় তাদের যেখানেই পাওয়া যাবে সেখানেই হত্যা করা হবে।’ গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে এ-ও বলা হয়েছে, নতুন তালিকার উৎস স্পষ্ট নয়। এটা প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ থেকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের বিবৃতি কিনা তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকে। হয়তো এ তালিকা ইউকে বা পশ্চিমা অন্য কোন দেশ থেকে তৈরি করা বা প্রকাশ করা হয়েছে। নতুন এ তালিকার অনেকে গার্ডিয়ানকে বলেছেন, তারা লেখা আর ব্লগিং চালিয়ে যাবেন। এবিটি দেশের বাইরে থাকা ব্লগারদের টার্গেট করছে এমন কোন ইঙ্গিত আগে ছিল না। কাজেই নতুন এ তালিকা ইউরোপ ও আমেরিকার নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তালিকার বৃটিশ ভিত্তিক ব্লগাররা বিবৃতি প্রকাশের পর লন্ডনে ও অন্য শহরগুলোতে পুলিশের শরণাপন্ন হন। তারা জানিয়েছেন, হামলার শিকার হওয়ার ঝুঁকি কমাতে কর্তৃপক্ষ তাদের সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন। বিভিন্ন দেশে এমন হামলা পরিচালনা করার মতো সামর্থ্য এবিটির আছে কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে এমন আহ্বান অনেক ব্যক্তিবিশেষকে স্বপ্রণোদিত হামলা চালাতে অনুপ্রাণিত করতে পারে। মার্চ মাসে ঢাকায় ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান হত্যার ঘটনায় পুলিশ এবিটির এক সংগঠক এবং চার সমর্থকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করে। কর্তৃপক্ষের ধারণা, আল কায়েদার দক্ষিণ এশিয়ার অঙ্গসংগঠন আনসার উল ইসলামের সঙ্গে এবিটি’র সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক মুখপাত্র বলেন, ‘ব্লগারদের বিরুদ্ধে হুমকি নিয়ে পুলিশের কাছে অভিয়োগ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ শুধু তাদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে তাই নয় বরং তারা এর পরিবর্তে সেলফ-সেন্সরশিপ চর্চার পরামর্শ দিয়েছে। এটা হতাশাজনক।’ গার্ডিয়ানের ওই প্রতিবেদনের শেষে বলা হয়, এ সপ্তাহে তারা বাংলাদেশের সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক বার মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করলেও কোন জবাব পায়নি।