সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে নজিরবিহীন আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। একদফা দাবিতে দুই দিনের কয়েকঘণ্টার ‘বাংলা ব্লকেডে’ ঢাকাসহ দেশের অনেক অঞ্চলকেই কার্যত অচলাবস্থায় পড়তে হয়েছে। আবার দাবি আদায় না হলে আগামীকাল বুধবার থেকে সারা দেশে সর্বাত্মক ‘বাংলা ব্লকেড’র হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সেজন্য এখন বিষয়টি নিয়ে সমাধানের পথেই যেতে চাইছে সরকার। কীভাবে শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত দাবি পর্যালোচনা করে একটি সঠিক সিদ্ধান্তে আসা যায় তা নিয়েই জোর কাজ চলছে।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের চার মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। এতে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন্নাহার চাপা ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া অংশ নেন।
বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা নিয়ে আদালতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
অবশ্য কোটাবিরোধী আন্দোলনে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সংশ্লিষ্টতা ও মদদের কথাও বলেছেন সংশ্লিষ্টরা।
সোমবার (৮ জুলাই) দুপুরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কোটা আন্দোলনে রাজনীতি ঢুকে গেছে। বিএনপি প্রকাশ্যে এই আন্দোলনের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। আদালতে বিচারাধীন বিষয়ে কোনো রাজনৈতিক দল পক্ষ নিতে পারে না।
কাদের বলেন, কোটা আন্দোলনে যারা যারা যুক্ত তাতে ষড়যন্ত্র আছে কি না সেটা আন্দোলনের গতিধারায় বোঝা যাবে। সরকার বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এই রাজনৈতিক নেতা বলেন, ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে ৭ জন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রিট করেন। বিষয়টা সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন তাই রায় না হওয়া পর্যন্ত মন্তব্য করা ঠিক হবে না। আদালত কোটা বাতিলের পরিপত্র বাতিল করেছেন, তবে সরকারের পক্ষ থেকে ফের আপিল করা হয়েছে।
উচ্চ আদালতের রায় না হওয়া পর্যন্ত রাস্তাঘাট বন্ধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টির চেষ্টা পরিহার করা দরকার। কোটা আন্দোলনের ৩১ জন শিক্ষার্থী বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।
এমন অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে সমাধানের পথ খোঁজা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
নাম পরিচয় প্রকাশ না করা শর্তে একটি সূত্র ঢাকা পোস্টে জানিয়েছে, আজই আদালতের মাধ্যমে কোটার বিষয়ে একটি সমাধান আসার সম্ভাবনা রয়েছে। যেহেতু বিষয়টি কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে তাই এখন সমাধানও কোর্টের মাধ্যমে আসবে।
একইসঙ্গে এ বিষয়ে কোর্টের রায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতিফলন হতে পারে বলেও সূত্রটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোর্ট যদি ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তাহলে আমরা আলোচনা সাপেক্ষে ঘোষিত কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব। বিষয়টি নিয়ে আমরা আমাদের আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসব। পরে সমন্বয়ক কমিটির সঙ্গে আদালতের সিদ্ধান্ত ও আমাদের দাবির সামঞ্জস্যতা বিবেচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।