প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কোরবানির পশুর কৃত্রিম সংকট ঠেকানোর পাশাপাশি কেনাবেচায় ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত এবং পশুবাহী যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে সতর্ক নজরদারি করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মঙ্গলবার (১১ জুন) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ‘ঈদুল আজহার প্রস্তুতিমূলক সভায়’ পশু ক্রয়-বিক্রয়ে অনলাইন মার্কেটে মনিটরিং জোরদার করাসহ কোরবানির পশুর সহজলভ্যতা, পরিবহন, হাট ও অনলাইন মার্কেট ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং কোরবানির পশুর চামড়া ব্যবস্থাপনা বিষয়ে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বুধবার (১২ জুন) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এসব সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে সভায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, বিজিএমইএর প্রতিনিধি, বিভিন্ন দপ্তর/সংস্থার প্রধান ও প্রতিনিধি সভায় অংশগ্রহণ করেন।
সভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানায়, এ বছর কোরবানিযোগ্য পশুর যথেষ্ট জোগান রয়েছে। উদ্বৃত্ত পরিমাণ কোরবানির পশুর সরবরাহ থাকায় কোনো সংকট সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা নেই। বাজার ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে পরিচালিত হলে যৌক্তিক মূল্যে কোরবানির পশুর ক্রয়-বিক্রয় হবে বলে প্রত্যাশা করা যায়। কোনরূপ কৃত্রিম সংকট যেন তৈরি না হতে পারে সেলক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
কোরবানির পশুর সহজলভ্যতা, পরিবহন, হাট ও অনলাইন মার্কেট ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা বিষয়ে সিদ্ধান্তসমূহ:
১. কোরবানির পশুর সহজলভ্যতা এবং ক্রয়-বিক্রয়ে যৌক্তিক মূল্য নিশ্চিত করতে সতর্ক নজরদারি অব্যাহত রাখতে হবে। অনলাইন মার্কেটের মনিটরিং জোরদার করতে হবে।
২. কোরবানির পশুবাহী যানবাহনের চলাচল সুশৃঙ্খল ও নির্বিঘ্ন রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এলক্ষ্যে মাঠ প্রশাসনসহ আন্ত:দপ্তর সমন্বয় জোরদার করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সরেজমিন তদারকি অব্যাহত রাখতে হবে।
৩. নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানির পশুর হাট স্থাপন এবং যত্রতত্র হাট গড়ে ওঠার প্রবণতা রোধকল্পে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ পুলিশ বিভাগের সাথে প্রয়োজনীয় সমন্বয় সাধন করবে।
৪. কোরবানির পশুর হাট ব্যবস্থাপনা যথাযথভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করবে।
৫. কোরবানির পশুর হাটসহ পশু পরিবহন, ক্রেতা-বিক্রেতার নিরাপত্তা এবং যেকোনো ধরনের প্রতারণারোধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্ভাব্য সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানি ও আবর্জনা অপসারণ বিষয়ক সিদ্ধান্ত:
১. স্থানীয় সরকার বিভাগ হতে সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদকে নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানির বিষয়ে যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেছে তা সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
২. ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে প্রত্যক্ষ ও সরেজমিন তত্ত্বাবধানে স্বল্পতম সময়ে শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করতে হবে এবং পূর্ব থেকেই পরিকল্পনামাফিক পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং বর্জ্য পরিবহনকারী গাড়িসহ প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সিদ্ধান্তসমূহ:
১. স্থানীয় প্রশাসন ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা করে চামড়ার মূল্য নির্ধারণসহ চামড়া সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার বিষয় সার্বিকভাবে বিবেচনা করে স্থানীয় বাস্তবতার নিরিখে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
২. দেশের সকল প্রান্ত হতে ঢাকায় একত্রে সকল চামড়া প্রবেশ করে পচে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি না হয় সেজন্য ঈদ পরবর্তী ন্যূনতম ১০ দিন কোনোপ্রকার চামড়া ঢাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। চামড়া সংরক্ষণে স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
৩. সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তর চামড়া সংরক্ষণের বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালাবে।
এছাড়াও এ সভায় আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করা, ঈদ ফিরতি যাত্রাসহ সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি, কার্যক্রম ও আন্ত:দপ্তর নিবিড় সমন্বয়, ঈদপূর্ব সময়ে নিত্যপণ্যের সরবরাহ, মজুদ ও মূল্য নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়।