সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের একটি ছবি পাওয়া গেছে। যেখানে মৃত এ সংসদ সদস্যকে বিবস্ত্র করে একটি চেয়ারের সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় দেখা যায়।
ডিবি সূত্র জানিয়েছে, এমপি আনারকে হত্যার আগে রাসায়নিক ক্লোরোফর্ম দিয়ে অচেতন করে খুনিরা। এরপর তাকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়।
ঢাকা পোস্টের কাছে থাকা ছবিতে দেখা গেছে, খুনিরা আনারের মরদেহ চেয়ারে বসিয়ে মুখ, হাত-পা বেঁধে রাখে। এছাড়াও তার গলায় ছিল লাল রঙের একটি গামছা। তার মুখ সাদা কাপড় দিয়ে বেঁধে রেখেছিল খুনিরা। কালো কাপড় দিয়ে মাথা ছিল চেয়ারের সঙ্গে বাঁধা। এ সময় এমপি আনোয়ারের শরীরে কোনো কাপড় ছিল না। তার দুটি চোখ সামান্য খোলা অবস্থায় দেখা গেছে।
আনার হত্যার তদন্তে গত ২৬ মে কলকাতায় যায় ডিবি পুলিশের একটি দল। গ্রেপ্তার হওয়া জিহাদকে সঙ্গে নিয়ে সঞ্জীবা গার্ডেনসের সেই ফ্লাটেও যান তদন্তকারীরা। এ সময় আনার হত্যায় কে কীভাবে জড়িত ছিল, কার কী ভূমিকা ছিল, হত্যার পর কীভাবে আনারের দেহ টুকরো টুকরো করে বিভিন্ন স্থানে ফেলা হয়, সবই স্বীকার করে জিহাদ। জিহাদের স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিওটি ঢাকা পোস্টের হাতে এসেছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, কলকাতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া আনার হত্যার অভিযুক্ত কসাই জিহাদ পুলিশকে হত্যাকাণ্ডের নানা তথ্য দিচ্ছেন। সেই দিন কলকাতার সঞ্জীবা গার্ডেনের সেই ট্রিপ্লেক্স ফ্ল্যাটে ঠিক কি ঘটেছিল তা পুলিশকে একে একে বর্ণনা দিচ্ছেন জিহাদ।
ভিডিওতে আরও দেখা যায়, কলকাতা পুলিশসহ কলকাতায় যাওয়া ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল কসাই জিহাদকে কলকাতার সঞ্জীবা গার্ডেনের সেই ট্রিপ্লেক্স ফ্ল্যাটে নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে কসাই জিহাদ স্বীকারোক্তি দিয়ে জানাচ্ছে, বালিশ চাপা দিয়ে আনারকে হত্যা করার পর ওই ফ্ল্যাটের বাথরুমে তার মরদেহ টুকরো টুকরো করে ফ্ল্যাশ করা হয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, জিহাদ পুলিশকে জানাচ্ছে, ট্রিপ্লেক্স সেই ফ্ল্যাটের বসার ঘরে আনারকে স্বাগত জানান শিলাস্তি। পরে আসে জিহাদ। পুলিশ জিহাদকে নিয়ে ফ্ল্যাটের নিচে নামার পর সে দেখায় কোথায় বালিশ চাপা দিয়ে আনারকে হত্যা করা হয়েছিল।
বুধবার (১২ জুন) বিকেলে রাজধানীর মিন্টু রোডে ডিবির নিজ কার্যালয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা এমপি আনার হত্যায় ডিজিটাল অ্যাভিডেন্স পেয়েছি। বিভিন্ন ঘটনাস্থল আমরা পরিদর্শন করেছি। তারা যে ঠান্ডা মাথায় তাকে হত্যা করেছে এবং পৈশাচিক কায়দায় নৃশংসভাবে এই লাশটা গুম করার উদ্দেশ্যে যাতে তার কোনোদিন মৃতদেহের কোন অংশ না পাওয়া যায় সেই জন্য তারা জিহাদ ও সিয়ামকে ব্যবহার করেছে। পাশাপাশি খুনিরা কাটআউট পদ্ধতি ব্যবহার করেছে।
তিনি বলেন, তারা কাউআউট পদ্ধতি ব্যবহার করেছে যাতে কারো তথ্য কারো কাছে না থাকে। যখন বাংলাদেশের কোনো লোক তাকে খুঁজে পাচ্ছে না। আমরা তার নিখোঁজ খবর পেয়েছি। তখন কিন্তু ভারতীয় পুলিশও তার তথ্য পাচ্ছে না। সেই মুহূর্তে আমরা বাংলাদেশে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছি। এর মধ্যে যে মূল কিলার শিমুল ভুঁইয়াসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করি। তারা কিন্তু তিনজনই আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। তারা আদালতে বলেছে, কীভাবে হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে। তারা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও দিয়েছে।
এর আগে ১২ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যান এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার। সেদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে কলকাতায় তার পারিবারিক বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের সঙ্গে দেখা করতে যান। পরের দিন, ১৩ মে চিকিৎসক দেখাতে হবে জানিয়ে দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে গোপালের বাড়ি থেকে বের হন আনার। সন্ধ্যায় ফিরবেন বলেও জানান তিনি। পরে বিধান পার্কের কাছে কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে থেকে ট্যাক্সিতে উঠেছিলেন তিনি। চলে যাওয়ার পর সন্ধ্যায় আজীম তার বন্ধু গোপালকে জানান, তিনি দিল্লি যাচ্ছেন এবং সেখানে পৌঁছে তাকে ফোন করবেন। পরে তার সঙ্গে ভিআইপিরা আছেন জানিয়ে বন্ধু গোপালকে ফোন না দেওয়ার জন্য সতর্ক করেছিলেন।
গত ১৫ মে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তায় এমপি আনার বন্ধু গোপালকে জানান, তিনি দিল্লি পৌঁছেছেন এবং ভিআইপিদের সঙ্গে আছেন। তাকে ফোন করার দরকার নেই। একই বার্তা পাঠান বাংলাদেশে তার ব্যক্তিগত সহকারী রউফের কাছেও।
১৭ মে আনারের পরিবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে গোপালকে ফোন করেন। ওই সময় তারা গোপালকে জানান, তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না তারা। পরিবারের পক্ষ থেকে ওই দিন ঢাকায় থানায় অভিযোগ করা হয়। এরপর থেকে এমপি আনারের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
২০ মে এমপি আনারের খোঁজ করতে গিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তার মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করে। তারা জানতে পারেন, কলকাতায় বন্ধুর বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর তার মোবাইলের লোকেশন একবার পাওয়া গিয়েছিল সেখানকার নিউমার্কেট এলাকায়। এরপর ১৭ মে তার ফোন কিছুক্ষণের জন্য সচল ছিল বিহারে। পরে ২২ মে ভারতের এনডিটিভির খবরে বলা হয়, কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জীবা গার্ডেন্সের একটি ফ্লাটে এমপি আনারকে খুন করা হয়েছে।