ছবি: (৪ জুন, মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে তুরাগ নদের টঙ্গী ব্রিজ থেকে তোলা ছবি)
গাজীপুর :শীতলক্ষার পর এবার তুরাগ নদের টঙ্গী ব্রিজের নিচে মৌসুমী কুচুরিপানা জমে নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে তুরাগ নদে চলমান সকল ধরনের নৌযান চলাচল করতে পারছে না। কুচুরিপানা দ্রুত অপসারণ করে নৌ চলাচল স্বাভাবিক করতে কাজ করছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার (৪ জুন) বিকেল সাড়ে ৪টায় তুরাগ তীরে টঙ্গী ব্রিজের নিচে গিয়ে এই দৃশ্য দেখা যায়।
সরেজমিন জানা যায়, সকাল থেকেই মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে তুরাগ নদের পানিতে বিচ্ছিন্নভাবে জমে থাকা কুচুরিপানার জট টঙ্গী ব্রিজের নিচে একসাথে হয়ে গেছে। এতে তুরাগ নদের টঙ্গীর পাড় থেকে উত্তরার আব্দুল্লাহপুর তীর পর্যন্ত প্রায় এক বর্গ কিলোমিটার নদীর পানি কুচুরিপানায় ছেয়ে গেছে। নদীতে শক্তভাবে আষ্টেপিষ্টে জমাটবদ্ধ হয়ে থাকা কুচুরিপানা দৈর্ঘপ্রস্থ্যে এক বর্গ কিলোমিটার নদী পথ দখল করে রেখেছে। ফলে তুরাগ নদের এই নির্দিষ্ট তলদেশ সকল ধরনের নৌযান চলাচলে অন্তরায় হয়ে পড়েছে। তুরাগ নদের টঙ্গী ব্রিজ থেকে পশ্চিম দিকে বিশ^ ইজতেমা ময়দান পর্যন্ত তুরাগ নদ এখন নৌ চলাচলের অনুপযোগি। এই কারণে রাজধানী ঢাকার চারিদিকে থাকা চারটি নদী পথে সৃষ্ট নৌরুটে নৌযান চলাচল জটিলতায় পড়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকার মিরপুর থেকে আশুলিয়া ও কামারপাড়া হয়ে কোন সাধারণ ও পণ্যবাহী নৌযান যাতায়াত করতে পারছেনা। টঙ্গীর পশ্চিমে ভাদাম, পলাশোনা, গুটিয়া, গুশুলিয়া, আন্দারুল, তিলাগাতী, গাছাসহ উজানের পন্যবাহী নৌযান টঙ্গী বাজারে আসতে পারছেনা। টঙ্গী বাজার থেকেও পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা পণ্য কিনে নৌ পথে ওই সব এলাকায় নিতে পারছেনা। তুরাগ নদের টঙ্গী ব্রিজ এলাকায় একটি নির্দিষ্ট তলদেশ নৌপথে যাতায়াতে অচলঅবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় টঙ্গীর একাংশ আব্দুল্লাহপুর-আশুলিয়াসহ বেশ কিছু এলাকায় ছোট ছোট দোকানপাট ও হাট বাজারে নিত্যপণ্যের সংকট দেখা দিতে পারে।
তুরাগ পাড়ের বাসিন্দারা জানান, বছরের বিভিন্ন সময় তুরাগ নদের বিভিন্ন স্থানে তলদেশে কুচুরিপানা জমে থাকার কারনে নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে নৌপথে যাতায়াত কিংবা পণ্য পরিবহনে প্রায়ই বিঘœ সৃষ্টি হয়।
টঙ্গীর তিলারগাতী এলাকার বাসিন্দা হাজী এসএম মনির উদ্দিন জানান, তুরাগ নদীর তীরে ফসলি জমিতে জৈব সার তৈরীর জন্য কৃষকরা কুচুরিপানার শিকড় ফসলের ক্ষেতের আইলে জমিয়ে রাখে। পরবর্তী সময়ে শিকড়গুলো পানিতে ভেসে গিয়ে চক্রাকারে পরাগায়ণ ঘটায়। ফলে নদীতে অসংখ্য কুচুরিপানার জন্ম হয়। এই সমস্যার সমাধান জরুরি।
টঙ্গীর হাজীর মাজার বস্তির বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন (৬০) জানান, আমি প্রতিদিন নদীর পাড়ে মাছের আশটে শুকিয়ে নদী পার হয়ে আব্দল্লাহপুরে বিক্রি করি। কুচুরিপানার জন্য আমার মাল (আশটে) আটকা পরেছে।
ময়মনসিংহ থেকে টঙ্গী এসে প্রায় ১০ বছর ধরে আব্দুল্লাপুর-টঙ্গী ব্রিজের উপর ফেরি করে পণ্য বিক্রি করেন আবুল কালাম (৩৫)। তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় এটাকে কচুয়াপানা বা জাম্বুনী বলে। তুরাগ নদীর মতো শীতলক্ষা নদীতেও এমন হয়।
ব্যবসায়ী জাকির হোসেন জানান, টঙ্গী ব্রিজ থেকে পশ্চিম দিকে তুরাগ নদীতে কুচুরিপানা জমে নৌ চলাচল বন্ধ রয়েছে তবে টঙ্গী ব্রিজের পূর্ব দিকে নদীতে কুচুরিপানা বিচ্ছিন্নভাবে থাকায় নৌ চলাচল এখনো স্বাভাবিক রয়েছে।
টঙ্গী নৌ বন্দরের সহকারী পরিচালক (ইনচার্জ) মো. শাহ আলম বলেন. মেীসুমী বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি বা বাতাস না থাকলে কুচুরিপানা একসাথে হয়ে এরকম অবস্থা তৈরী করে। আমি উর্ব্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে দ্রুত এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি শীতলক্ষা নদীর কালিগঞ্জের চরসিন্দু ব্রিজ থেকে কাপাসিয়া হয়ে শ্রীপুরের বরমী পর্যন্ত নদীর তলদেশে কুচুরিপানা জমে নৌ চলাচল বন্ধ হয়। বেশ কিছু দিন বন্ধ থাকার পর প্রাকৃতিক ভাবেই কুচুরিপানার জট ভেঙ্গে যায় ও নৌ চলাচল স্বাভাবিক হয়।