ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার তিন আসামির আরও পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তারা হলেন- শিমুল ভূইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভূইয়া ওরফে আমানুল্যা সাইদ, তানভীর ভূইয়া ও শিলাস্তি রহমান।
শুক্রবার (৩১ মে) আট দিনের রিমান্ড শেষে তাদেরকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের আরও আট দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ওয়ারী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহফুজুর রহমান।
শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শান্ত ইসলাম মল্লিকের আদালত এ আদেশ দেন।
প্রসঙ্গত, গত ১২ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যান এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার। সেদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে কলকাতায় তার পারিবারিক বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের সঙ্গে দেখা করতে যান। পরের দিন, ১৩ মে চিকিৎসক দেখাতে হবে জানিয়ে দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে গোপালের বাড়ি থেকে বের হন আনার। সন্ধ্যায় ফিরবেন বলেও জানান তিনি। পরে বিধান পার্কের কাছে কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে থেকে ট্যাক্সিতে উঠেছিলেন তিনি।
চলে যাওয়ার পর সন্ধ্যায় আজিম তার বন্ধু গোপালকে জানান, তিনি দিল্লি যাচ্ছেন এবং সেখানে পৌঁছে তাকে ফোন করবেন। পরে তার সঙ্গে ভিআইপিরা আছেন জানিয়ে বন্ধু গোপালকে ফোন না দেওয়ার জন্য সতর্ক করেছিলেন।
গত ১৫ মে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তায় এমপি আনার বন্ধু গোপালকে জানান, তিনি দিল্লি পৌঁছেছেন এবং ভিআইপিদের সঙ্গে আছেন। তাকে ফোন করার দরকার নেই। একই বার্তা পাঠান বাংলাদেশে তার ব্যক্তিগত সহকারী রউফের কাছেও।
এজলাসে সেই শিমুল তানভীর শিলাস্তি
১৭ মে আনারের পরিবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে গোপালকে ফোন করেন। ওই সময় তারা গোপালকে জানান, তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না তারা। পরিবারের পক্ষ থেকে ওই দিনই ঢাকায় থানায় অভিযোগ করা হয়। এরপর থেকে এমপি আনারের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
২০ মে এমপি আনারের খোঁজ করতে গিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তার মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করে। তারা জানতে পারে, কলকাতায় বন্ধুর বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর তার মোবাইলের লোকেশন একবার পাওয়া গিয়েছিল সেখানকার নিউমার্কেট এলাকায়। এরপর ১৭ মে তার ফোন কিছুক্ষণের জন্য সচল ছিল বিহারে।
পরে ২২ মে ভারতের এনডিটিভির খবরে বলা হয়, কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিভা গার্ডেন্সের একটি ফ্লাটে এমপি আনারকে খুন করা হয়েছে। খুনের পর মরদেহ টুকরো টুকরো ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও জানানো হয়। এনডিটিভি বলে, ১২ মে কলকাতায় আসার পর নিখোঁজ হওয়া এমপি আনারের খোঁজে তল্লাশি শুরুর পর ২২ মে সকালে তার খুনের ব্যাপারে নিশ্চিত হয় পুলিশ।
এদিকে, সেদিনই ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় খুন করার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। এমপি আনার সংসদ ভবন এলাকায় থাকতেন। সেখান থেকে তিনি ভারতে গেছেন। তাই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) প্রধান হারুন-অর-রশিদের পরামর্শে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা দায়ের করেন তার মেয়ে।
এ ঘটনায় তদন্তে নামে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি ও ডিবি পুলিশ। তদন্তে জানা যায়, ব্যবসায়িক লেনদেনের সম্পর্কে কিছু বিষয়ে এমপি আনারের ওপর ক্ষোভ ছিল তার বন্ধু ও হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনের। ২০০ কোটি টাকার ভাগাভাগি নিয়ে আনারকে খুন করা হয়। আগেও একাধিকবার এমপি আনারকে খুনের হুমকি দিয়েছিলেন শাহীন।
এমপি আনারের দেহাংশ উদ্ধারের তথ্য নেই ডিবির কাছে
সবশেষ গুলশান এবং কলকাতার নিউমার্কেটে দুই দফায় হত্যার ছক কষা হয়। এরপর গত ১২ মে এমপি আনার কলকাতায় চিকিৎসা করাতে গেলে পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্যাংয়ের সদস্য শিলাস্তির মাধ্যমে তাকে ‘হানিট্র্যাপে’ ফেলা হয়। এরপর নিউটাউনের ফ্ল্যাটে এনে ১৩ তারিখ রাতে আনারকে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় বাংলাদেশ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকা আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও তানভীর ভূঁইয়াসহ তিনজনকে। তাদের তিনজনকে আট দিন করে রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।
অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গ থেকে হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে জিহাদ হাওলাদার নামের এক অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশ। জিহাদের দেওয়া তথ্যমতে কলকাতার ওই ফ্ল্যাটটির সেপটিক ট্যাংক থেকে বেশ কিছু মাংসের টুকরো উদ্ধার করে কলকাতা পুলিশ। সেগুলো এমপি আনারের মরদেহের টুকরো বলেই ধারণা করা যাচ্ছে।