জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের একটি অংশ থেকে ইসরায়েলি বাহিনী চলে যাওয়ার পর ক্ষয়ক্ষতি বোঝার চেষ্টা করছে ফিলিস্তিনিরা। বৃহস্পতিবারের ছবি
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বর্বর হামলায় ২৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে উপত্যকাটির রাফা শহরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১২ ফিলিস্তিনি। এছাড়া পৃথক তিনটি হামলায় গাজায় আরও ১২ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। শুক্রবার (৩১ মে) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী বৃহস্পতিবার দক্ষিণ গাজার রাফাতে বিমান হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ১২ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে বলে গাজার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এছাড়া উপকূলীয় এই ভূখণ্ডের আরও বেশ কয়েকটি এলাকায় লড়াই চলছে।
গাজা উপত্যকা এবং মিসরের মধ্যে নিকটবর্তী সীমান্ত বরাবর একটি বাফার জোনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কথা জানানোর একদিন পর ইসরায়েল রাফাতে এই আক্রমণ চালাল। সীমান্ত বরাবর অবস্থিত এই বাফার জোন ফিলাডেলফি করিডোর নামে পরিচিত এবং এটি দখলে নেওয়ার মাধ্যমে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের সমগ্র স্থল সীমান্তের ওপর কার্যকর কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ পেয়েছে ইসরায়েল।
গাজার চিকিৎসা সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় নিহত ১২ ফিলিস্তিনির সকলেই বেসামরিক নাগরিক। হামলায় আরও অনেক অনির্দিষ্ট সংখ্যক আহত হয়েছেন। রাফা শহরের কেন্দ্রস্থলে বেসামরিক এক ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধারের চেষ্টা করার সময় ইসরায়েল এই বিমান হামলা চালায় এবং এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এছাড়া ঘনবসতিপূর্ণ এই ভূখণ্ডের উত্তরে গাজা শহরের পশ্চিমে আল-শাতি শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলায় আরেক ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
ইসরায়েল দক্ষিণ, মধ্য এবং উত্তর গাজায় সংঘর্ষের খবর দিয়েছে কিন্তু রাফাতে প্রাণঘাতী হামলা চালানোর বিষয়ে তারা তাৎক্ষণিকভাবে কোনও মন্তব্য করেনি। মূলত ইসরায়েলি হামলা থেকে বাঁচতে লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি এই শহরেই আশ্রয় নিয়েছেন।
ফিলিস্তিনি টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি জাওয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাফা শহরে যোগাযোগ পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলের হামলা ইতোমধ্যেই গাজার এই শহরে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করেছে। এছাড়া হামলার জেরে ভূখণ্ডের বেশিরভাগ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং সেখানে মানবিক বিপর্যয় ও ব্যাপক ক্ষুধাও সৃষ্টি হয়েছে। ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা অবশ্যই রাফাতে হামাসের শেষ অবশিষ্ট ব্যাটালিয়নগুলোকে নির্মূল করবে।
মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।
এদিকে আল জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বুরেইজ শরণার্থী শিবিরে আল-হুর পরিবারের বাড়িতে হামলা চালিয়ে কমপক্ষে চারজনকে হত্যা করেছে বলে স্থানীয় মিডিয়া রিপোর্ট করছে।
এছাড়া ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বুরেইজ শরণার্থী শিবিরে আল-সুস পরিবারের বাড়িতে বোমা হামলা চালিয়ে নারী ও শিশুসহ পাঁচজনকে হত্যা করে। পরে ওই হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭ জনে পৌঁছায়।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি এই আক্রমণের ফলে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৩৬ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং আরও ৮১ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।
এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।