গাজীপুর: শীতলক্ষ্যা নদীতে কচুরিপানার কারণে নৌচলাচল বিঘিœত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। কালিগঞ্জের চরসিন্দুর থেকে শ্রীপুরের বরামা পর্যন্ত ১৫টি খেয়াঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। এতে কয়েকশত খেয়া নৌকার মাঝির সংসার অনটনে পড়েছে, বিঘিœত হয়ে গেছে নদীপথে যাতায়াত ব্যবস্থা।
গতকাল শুক্রবার(২৪ মে) সকাল দশটায় শীতলক্ষ্যা নদীর কালিগঞ্জের চরসিন্দুর, কাপাসিয়া ও গোসিংগা খেয়াঘাট সহ একাধিক খেয়াঘাটে গিয়ে এই তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়,কচুরিপানা জটের কারণে শীতলক্ষ্যা নদীর বরমী থেকে চরসিন্দুর পর্যন্ত সকল ঘাট বন্ধ। এরমধ্যে বরমী, সিংশ্রী, বরামা, রায়েদ, পেলাইদ, গোসিংগা,খালের ঘাট, তালতলা, নারায়নপুর, কাপাসিয়া, সাফাইশ্রী, ইকুরিয়া, রানীগঞ্জ, তারাগঞ্জ, চর-সিন্দুর ঘাটে নৌকা চলাচল বন্ধ রয়েছে। একেক ঘাটে ৪০/৫০ টি করে নৌকা চলে। এতে হাজারো মাঝি দিন রাত নৌকা পারাপারের কাজ করে। কচুরিপানার জন্য যাতায়ত বন্ধ থাকায় মাঝিরা নৌকা চালাতে পারছে না। আয় রোজগার না থাকায় তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। একই নদীর বিভিন্ন স্থানে কচুরিপানার জন্য আটকা পড়েছে অনেক নৌযান।
কচুরিপানা জটের কারণে শতবর্ষী কাপাসিয়া খেয়াঘাটে শীতলক্ষ্যা নদীতে নৌকা চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে নদীর ঘাটের ৪৫ মাঝিসহ বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
কাপাসিয়া খেয়াঘাটে মাঝিদের প্রধান রবিউল ইসলাম(৪০) জানান, আজ(গতকাল)সকাল থেকে এই ঘাটে নৌকা চলাচল বন্ধ রয়েছে। কচুরিপানার জন্য আমাদের ৪৫টি খেয়া নৌকা বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা কি খাব তাই ভাবছি।
মাঝি কাজল মিয়া,মোতালিব, ছাত্তার মোল্লা বলেন, চার মাস ধরে ঠিকমতো কাজ করতে পারিনা।পৌষ মাস থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত নৌকা চলাচল প্রায়ই বন্ধ থাকে।
ডেন্টিস্ট এমদাদুল হক জানান,আজকে দেখেছি, ইজারা ঘর বন্ধ। নদীর মাঝ খানে বাঁশ বোঝাই নৌকা আটকে আছে। যাত্রী নৌকাগুলো নদীর উত্তর ঘাটে সারিবদ্ধ ভাবে রাখা হয়েছে।
শিক্ষক বোরহান উদ্দিন বলেন,এক সময় এ নদীতে পালতোলা নৌকা চলতো। এখন নৌকাই চলেনা।এতে জনদুর্ভোগ বেড়ে গেছে। অনেক শিক্ষার্থী স্কুল কলেজে আসা যাওয়া বন্ধ রয়েছে।
গোসিংগা খেয়া ঘাটের মাঝি সজল জানান, ৪০/৫০টি নৌকা চলত। কচুরিপানার কারনে এখন বন্ধ রয়েছে পারাপার।
কাপাসিয়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এ কে এম লুৎফর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে ফান্ড দিয়ে কচুরিপানা জট সরানো সম্ভব নয়। এসব সরাতে বিআইডব্লিউটিএর সহযোগিতা প্রয়োজন।
বিআইডব্লিউটিএ নরসিংদীর ঘোড়াশাল বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা নূর স্বপন জানান, শীতলক্ষ্যা নদীর নারায়ণগঞ্জ থেকে চরসিন্দুর পর্যন্ত নদীর ক্যানেল চলাচলে উপযোগী রয়েছে। চরসিন্দুর থেকে বরমী পর্যন্ত নৌ চলাচল বন্ধের বিষয়টি দেখতে হবে। এটা আমাদের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নরসিংদীর নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় ইন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, নদীতে ঘের করে যারা মাছ চাষ করে তারা প্রচুর পরিমাণে কচুরিপানা ব্যবহার করে। ফলে নদীতে সেগুলোর প্রভাব পড়ে। ঘের করে মাছ চাষ অবৈধ। ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ঘের মালিকদের দন্ড দেওয়া উচিত।