পূর্বাচলে স্ত্রীকে পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আসামি উবার চালক মিজানুর রহমান সুমনকে (২৮) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১।
মঙ্গলবার (২১ মে) সন্ধ্যায় গাজীপুরের বাসন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব বলেছে, রোববার মিজানুর রহমান তার দ্বিতীয় স্ত্রী বিলকিস বেগমকে পূর্বাচলের ২৪ নম্বর সেক্টরের জঙ্গলে নিয়ে তার গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে।
বুধবার (২২ মে) দুপুরে র্যাব-১ এর উত্তরার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১-এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোস্তাক আহমেদ।
তিনি বলেন, সুমনের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে হলেও প্রথম স্ত্রী শিমু ও দেড় বছরের ছোট মেয়ে এবং মাসহ তুরাগ থানার রানাভোলা নামক স্থানে ভাড়া থাকতেন। আনুমানিক দেড়-দুই বছর আগে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার বিলকিস (২৬) কে তার অভিভাবকের অগোচরে বিয়ে করেন। পরে রানাভোলা থেকে আনুমানিক দুই কিলোমিটার দূরে নয়াপাড়া নামক স্থানে অন্য একটি বাসা ভাড়া করে তাকে সেখানে রাখেন।
উবারে গাড়ি চালিয়ে স্বল্প আয়ে তাকে দুটি সংসার চালানোর দায়িত্ব নিতে হয়। গত তিন-চার মাস ধরে দ্বিতীয় স্ত্রী বিলকিস তার কাছে একটু বেশি টাকা দাবি করা শুরু করে। ফলে উভয়ের মধ্যে তিক্ততা শুরু হয়। একপর্যায়ে হত্যাকারী সুমন তার দ্বিতীয় স্ত্রী বিলকিসকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। মাঝে মধ্যে সে বিলকিসকে নিয়ে পূর্বাচল এলাকায় ঘুরতে যেতেন এবং সুযোগ খুঁজতেন।
র্যাব-১ অধিনায়ক বলেন, হত্যার উদ্দেশ্যে গত ১৯ মে দুপুরের পর সুমন তার স্ত্রী বিলকিসকে নিয়ে পূর্বাচল এলাকায় ঘুরতে যায়। সেখানে জায়গা ও সুযোগ খুঁজতে থাকেন তিনি। বিকেল আনুমানিক ৪টার পর ২৪ নং সেক্টরে একটি জঙ্গলে নিয়ে যায়। জায়গাটা খুবই নিরিবিলি দেখে সেখানে গাড়ি থামায়। বিলকিস গাড়িতে বসে থাকে এবং সুমন গাড়ি থেকে বের হয়ে পাইপ দিয়ে পেট্রোল বের করে একটি বোতলে ভরে। গাড়িটি তখনও চালু অবস্থায় ছিল। কিছুক্ষণ পর বিলকিস গাড়ি থেকে বের হয়। তখন সুমন বোতলের পেট্রোল বিলকিসের গায়ে ছিটিয়ে দেয় এবং ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়ে দ্রুত গায়ে ছুঁড়ে মারে। আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। বিলকিস বাঁচার জন্য জোরে জোরে চিৎকার শুরু করে।
তিনি বলেন, এরপর হত্যাকারী সুমন গাড়ি নিয়ে দ্রুত সরে পড়ে। বিলকিসের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসে এবং বিলকিসকে একটি ড্রেনের মধ্য হতে উদ্ধার করে প্রথমে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত তাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরের দিন ২০ মে সকাল ৯টায় অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে মারা যায়।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর সুমন আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে এই হত্যাকাণ্ডের আসামিকে আইনের আওতায় আনার জন্য র্যাব-১ এর অভিযানিক দল ছায়াতদন্ত শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২১ মে সন্ধ্যা ৬টার সময় গাজীপুর জেলার বাসন থানায় অভিযান চালিয়ে সুমনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১।