শ্রীপুর প্রশাসনের নিরপেক্ষতা আরো স্পষ্ট করা উচিত!

Slider বাধ ভাঙ্গা মত


গাজীপুর: আগামীকাল ২১মে শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে দৃশ্যত তিন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করলেও লড়াই হচ্ছে দুই জনের মধ্যে। জামিল হাসান দুর্জয় ঘোড়া প্রতীক ও আ: জলিল আনারস প্রতীক। ইতোমধ্যে দুই প্রার্থী একাধিকবার আচরণ বিধি ভঙ্গ করেছেন। জরিমানা ও দন্ডও দুটোই হয়েছে। শ্রীপুর প্রশাসনের প্রতিবেদনে নির্বাচন কমিশন জামিল হাসান দুর্জয়ের প্রার্থীতা বাতিলও করেছে। উচ্চ আদালত সেই আদেশ স্থাগিত করে দুর্জয়কে নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে দিয়েছে। একাধিকবার আচরণ বিধি ভঙ্গের জন্য শ্রীপুর প্রশাসনের এই উদ্যোগ নিরপেক্ষতার দাবী রাখে। কিন্তু আরেকজন প্রার্থীর বেআইনী শোডাউনের গাড়ি চাপায় একজন শিশু মৃত্যুর ঘটনায় ২১০৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনে মামলা হলেও পুলিশ পাঁচ দিনেও তদন্তে কিছুই অগ্রগতি করতে পারেনি। গনমাধ্যমে শিশু নিহতের বিষয়ে যেসকল তথ্য প্রকাশিত হয়েছে সেগুলো বিচার বিশ্লেষন করে আগালে এক ঘন্টাল মধ্যেই তদন্তের অগগ্রতি সম্ভব। কিন্তু কেন পুলিশ এই স্পর্শকাতর মামলার তদন্তে গাফিলতি করছে, তা নানা ধরণের প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। কারণ এই মামলায় গণমাধ্যমের অসংখ্য প্রতিবেদনে উঠে আসা তথ্য উপাত্ত বলছে, এই শিশু হত্যায় আনারস প্রতীকের কেউ গ্রেপ্তার বা আনারস প্রতীকের কারো গাড়ি জব্দ হলে জলিলের প্রার্থীতা বাতিল হয়। আর সেই আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সুনিদিষ্ট অভিযোগ পেয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত শুরু করলেও দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় নানা প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। জাতির কাছে স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট তথ্য উপাত্ত থাকলেও পুলিশের কাছে কেন নেই তা বোধগম্য নয়। তাহলে কি পুলিশ অজ্ঞাত কারণে তদন্তে সময় ক্ষেপন করছে! আর নির্বাচন কমিশন তদন্তের রিপোর্ট কবে দিবেন! নির্বাচনের পর! সব কিছু নিয়েই নানা ধরণের জটিলতার মধ্যে কাল হচ্ছে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাচন।

এদিকে ১৫ মে শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচারণার সময় আনারস প্রতীকের শোডাউনের গাড়ি চাপায় ইয়াসিন নামে এক চার বছরের শিশু নিহত হয়। ১৬ তারিখ মামলাও হয়। কিন্তু পাঁচ দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ এই মামলার কোন অগ্রগতি করতে পারেনি। উদ্ধার করতে পারেনি ঘাতক গাড়ি ও গ্রেপ্তার করতে পারেনি ঘাতক চালক বা কোন আসামী। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেও নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ দৃশ্যমান তেমন কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে মনে হচ্ছে। আইন বলছে, এই শোডাউন থেকে শিশুটি খুন হয়ে থাকলে আনারস প্রতীকের প্রার্থী আ: জলিলের প্রার্থীতাও বাতিল হতে পারে।

আজ সোমবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে এ বিষয়ে জানতে শ্রীপুর থানার পরিদর্শক(তদন্ত) সাখাওয়াত হোসেনকে ফোন দিলে তিনি ব্রিফিং-এ আছেন, বলে জানান। তবে ব্রিফিং থেকেই সাখাওয়াত বলেন, শিশু ইয়াসিন মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত পরিবহন আইনের মামলার তদন্ত চলছে। দৃশ্যমান তেমন কোন অগ্রগতি নেই।

খবরে বলছে, আচরণ বিধি ভঙ্গ করে শোডাউন করার সময় গাড়ি চাপায় শিশু ইয়াসিন হত্যা ও এই কারণে আ: জলিলের প্রার্থীতা বাতিল চেয়ে করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে ১৮ মে বক্তব্য দিয়েছেন শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আ: জলিল ও তার মেয়ে ঝর্ণা আক্তার। এদিকে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনে শ্রীপুর থানায় মামলা( মামলা নং ২৩(০৫)২৪) করেছেন নিহতের মা মিমি আক্তার(২৮)।

গেলো শনিবার সকাল ১০টার দিকে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাচন অফিসে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির সামনে যথাসময়ে হাজির হন আ: জলিল ও তার মেয়ে ঝর্ণা আক্তার। তারা তাদের বক্তব্য পেশ করেন। এসময় অভিযোগের বাদী আশিক বিন ইদ্রিছও তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন। উভয় পক্ষের বক্তব্য নিয়ে তদন্ত কমিটি পুলিশের সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।

এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির কোন সদস্য কোন মন্তব্য করেননি। তবে দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, মামলায় কাউকে আসামী করা হয়নি। কিন্তু গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে শিশু ইয়াসিন হত্যার ঘটনায় আসামীদের পরিচিতি ও বিভিন্ন সূত্র পর্যালোচনা করে এই মামলার আসামী গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ। একই সাথে মামলার আসামী আনারস প্রতীকের শেডাউনের লোক হলে গাড়ির চালক সহ সহযোগী আসামীদের গ্রেপ্তার ও আচরণ বিধি লঙ্গনের অভিযোগে প্রার্থীর বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ব্যববস্থা গ্রহনের প্রক্রিয়া চলছে। তদন্ত রিপোর্ট প্রাপ্তী সাপেক্ষে নির্বাচন কমিশন খুব দ্রুতই তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে বলে সূত্রের দাবী।

১৫ মে শ্রীপুরের মুলাইদ এলাকায় সকাল সাড়ে ১০টায় আনারস প্রতীকের শোডাউন চলাকালে ইয়াসিন(৪) নামে একটি শিশু শোডাউনের গাড়ি চাপায় নিহত হয়। এই ঘটনায় ১৬ মে আ: জলিলের বিরুদ্ধে আচরণ বিধি ভঙ্গ করে হত্যাকান্ডের ঘটনায় প্রার্থীতা বাতিল ও ফৌজদারী আইনে হত্যা মামলা দায়েরের জন্য আবেদন করা হয়। এ্ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, রিটার্নিং অফিসার ও ইলেকট্রোরাল ইনকুয়ারী কমিটির নিকট একটি আবেদন করেন শ্রীপুর উপজেলার ভিটিপাড়া গ্রামের আশিক বিন ইদ্রিছ। এই অভিযোগের ভিত্তিতে ১৮ মে সকাল ৯টায় শ্রীপুর উপজেলা নির্বাচন অফিসে আ: জলিলকে হাজির হয়ে জবাব দেয়ার কথা বলা হয়।

আবেদনে বলা হয়, ১৫ মে সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে শ্রীপুরে গাড়ি বহর যোগে শব্দের মাত্রা বর্ধনকারী অন্যবিধ যন্ত্র ব্যবহার করে আনারস প্রতীকের পক্ষে রাস্তায় শোডাউন করার সময় গাড়ির ধাক্কায় ইয়াসিন(৪) নামে একটি শিশু মারা যায়। এতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালা ২০১৩ এর ১৩ এবং ২১(২) ধারা লংঘন হয়েছে যা ৩৩ ধারা মোতাবেক জনাব আ: জলিলের প্রার্থীতা বাতিল হতে পারে। একই সঙ্গে হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা দায়ের হতে পারে।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালা ২০১৩ এর ১৩ ধারায় বলা হয়েছে, প্রচারকার্যে যানবাহন ব্যবহার সংক্রান্ত বাধা-নিষেধ: কোন প্রার্থী বা তাহার পক্ষে কোন রাজনৈতিক দল, অন্য কোন ব্যাক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান (ক) কোন ট্রাক, বাস, মোটরসাইকেল, নৌযান, ট্রেন কিংবা অন্য কোন যান্ত্রিক যানবাহন সহকারে মিছিল বা মশাল মিছিল বা অন্য কোন প্রকারের মিছিল বাহির করিতে পারিবে না কিংবা কোনরুপ শোডাউন করিতে পারিবে না।

নির্বাচনী আচরণ বিধিমালার ২১(২) ধারায় বলা হয়েছে, কোন নির্বাচনী এলাকায় মাইক বা শব্দের মাত্রা বর্ধনকারী অন্যবিধ যন্ত্রের ব্যবহার দুপুর দুই ঘটিকার পূর্বে এবং রাত আট ঘটিকার পরে করা যাইবে না। এই বিধান লংঘন করলে ৩৩ ধারা মোতাবেক তদন্ত সাপেক্ষে নির্বাচন কমিশন প্রার্থীতা বাতিল করতে পারে।

শ্রীপুর প্রশাসনের প্রতিবেদনে একজন প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিল হয় আর অন্য প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ও সম্ভাব্য জড়িত থাকার মামলা তদন্তেই আটকে থাকে এটা হওয়া উচিত নয়। নির্বাচন কমিশন ও বাংলাদেশ পুলিশের শ্রীপুর উপজেলা প্রশাসনে কর্মরতদের এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে আরো নিরপেক্ষতার পরিচয় দেয়া উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *