ঢাকা: ২১ মে অনুষ্ঠিতব্য গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী আ: জলিলের প্রার্থীতা বাতিল চেয়ে ও প্রচারণার সময় গাড়ি চাপায় নিহত শিশু হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা দায়েরের আবেদন হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার, গাজীপুর জেলা রিটার্নিং অফিসার এবং জেলা ইলেকট্রোরাল ইনকুয়ারী কমিটির নিকট এই আবেদন হয়।
আজ বৃহসপতিবার এই আবেদন করেন শ্রীপুর উপজেলার ভিটিপাড়া গ্রামের ইদ্রিছ আলীর ছেলে আশিক বিন ইদ্রিছ।
আবেদনে বলা হয়, গতকাল ১৫ মে সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে শ্রীপুরে গাড়ি বহর যোগে শব্দের মাত্রা বর্ধনকারী অন্যবিধ যন্ত্র ব্যবহার করে আনারস প্রতীকের পক্ষে রাস্তায় শোডাউন করার সময় গাড়ির ধাক্কায় ইয়াসিন(৪) নামে একটি শিশু মারা যায়। এতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালা ২০১৩ এর ১৩ এবং ২১(২) ধারা লংঘন হয়েছে যা ৩৩ ধারা মোতাবেক জনাব আ: জলিলের প্রার্থীতা বাতিল হতে পারে। একই সঙ্গে হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা দায়ের হতে পারে।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালা ২০১৩ এর ১৩ ধারায় বলা হয়েছে, প্রচারকার্যে যানবাহন ব্যবহার সংক্রান্ত বাধা-নিষেধ: কোন প্রার্থী বা তাহার পক্ষে কোন রাজনৈতিক দল, অন্য কোন ব্যাক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান (ক) কোন ট্রাক, বাস, মোটরসাইকেল, নৌযান, ট্রেন কিংবা অন্য কোন যান্ত্রিক যানবাহন সহকারে মিছিল বা মশাল মিছিল বা অন্য কোন প্রকারের মিছিল বাহির করিতে পারিবে না কিংবা কোনরুপ শোডাউন করিতে পারিবে না।
নির্বাচনী আচরণ বিধিমালার ২১(২) ধারায় বলা হয়েছে, কোন নির্বাচনী এলাকায় মাইক বা শব্দের মাত্রা বর্ধনকারী অন্যবিধ যন্ত্রের ব্যবহার দুপুর দুই ঘটিকার পূর্বে এবং রাত আট ঘটিকার পরে করা যাইবে না।
এই বিধান লংঘন করলে ৩৩ ধারা মোতাবেক তদন্ত সাপেক্ষে নির্বাচন কমিশন প্রার্থীতা বাতিল করতে পারবে।
আইনজ্ঞরা বলছেন, আচরণ বিধিমালায় যেহেতু শোডাউন নিষিদ্ধ এবং বেলা দুইটার আগে শব্দযন্ত্র ব্যবহার নিষেধ, তাই সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে আনারস প্রতীকের পক্ষে শব্দের মাত্রা বর্ধধনকারী হ্যান্ড মাইক ব্যবহার করে চেয়ারম্যান প্রার্থী আ: জলিল আচরণ বিধিমালা লঙন করেছেন। একই সঙ্গে আচরণ বিধিমালা লঙন করতে গিয়ে একটি হত্যাকান্ড সংঘটিতও হয়েছে। আচরণ বিধিমালা প্রতিপালন করলে হয়ত হত্যাকান্ডটি সংঘটিত নাও হতে পারত। এই ক্ষেত্রে অসাবধানতা বশত শব্দটির জায়গায় সচেতনভাবে আইন ভেঙ্গে হত্যাকান্ড সংঘটন করা হয়ে থাকতে পারে বলা যাবে কি না, তা তদন্ত সাপেক্ষ বিষয়। বিষয়টি তদন্ত করে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা না নিলে সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ বাক্যটি অর্থহীন হয়ে যাবে। কারণ আচরন বিধি লঙন করে হত্যাকান্ড গুরুতর অপরাধ এবং তা আইনে প্রমানিতও বটে। এই ক্ষেত্রে নিহত শিশুটির পক্ষে তার পরিবার মামলা করলেন কি করলেন না সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়। নিহতের পরিবার মামলা না করলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে এটাই আইনের বিধান। প্রসঙ্গত: গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল জলিলের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় মাইক্রোবাসের চাপায় এক শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
আবেদনকারী আশিক বিন ইদ্রিছ বলেন, আমি সিইসি, জেলা ইলেকট্রোরাল ইনকুয়ারী কমিটি ও গাজীপুর জেলা রিটার্নিং অফিসারের নিকট আবেদন করেছি। এখন উচ্চ আদালতে যাচ্ছি।
প্রসঙ্গত: গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল জলিলের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় মাইক্রোবাসের চাপায় এক শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বুধবার(১৫ মে) সকাল পৌনে ১১টার দিকে গাজীপুরের শ্রীপুর থানাধীন মুলাইদ এলাকার শফিকের মোড়ে মজিবুরের বাড়ীর সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শিশুর নাম ইয়াসিন (৪)। সে গাজীপুর মহানগরীর হাতিয়াব এলাকার কাতার প্রবাসী জহিরুল ইসলামের ছেলে। শিশুটি তার মায়ের সাথে শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ গ্রামের নানার বাড়ীতে বেড়াতে গিয়েছিল।