গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের কর্মকর্তা ওসামা হামদান হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন যে রাফায় ইসরাইলের সামরিক আগ্রাসন অব্যাহত থাকলে কোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তি হবে না।
বৈরুতে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে হামদান এই মন্তব্য করেন। তিনি যখন সংবাদ সম্মেলন করছিলেন, তখন হামাসের একটি প্রতিনিধিদল দোহা থেকে কায়রো গেছে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অংশ নিতে।
হামদান বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বলছি যে ইসরাইল যদি রাফায় সামরিক অভিযান পরিচালনা করে, তবে তা ইসরাইলি সেনাবাহিনীর জন্য কোনো পিকনিক হবে না।’
তিনি বলেন, ‘বল এখন নেতানিয়াহুর কোর্টে।’ তিনি হামাসের সম্মত হওয়া সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব সম্পর্কে বলেন যে ‘আমাদের জনগণ এবং আমাদের প্রতিরোধ আন্দোলনের দাবিগুলোর প্রতি এতে ন্যূনতম পর্যায়ে সাড়া দেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘রাফা ক্রসিং পুরোপুরিভাবে মিসরীয়-ফিলিস্তিন ক্রসিং হিসেবে আছে, এবং থাকবে।’
নেতানিয়াহুকে আবারো সতর্ক করলেন বাইডেন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাফায় অভিযানের বিষয়ে নেতানিয়াহুকে আবারো সতর্ক করেছেন।
এই সতর্কতা সত্ত্বেও ইসরাইল রাফায় অভিযান চালানোর বিষয়ে অনড় রয়েছে এবং ফিলিস্তিনিদের এলাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ জারি করেছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, হামাস গাজায় পণবন্দী মুক্তির বিনিময়ে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র হামাসের রাজি হওয়ার বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখছে বলে জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইয়ের পরিচালক বিল বার্নস আরব মিত্রদের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্যে মধ্যপ্রাচ্য সফর করছেন।
এদিকে জো বাইডেন এপ্রিলে নেতানিয়াহুকে হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন, রাফায় অভিযান চালানো হবে ভুল।
এছাড়া মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিঙ্কেন গত সপ্তাহে জেরুসালেমে বলেছেন, রাফায় আশ্রয় নেয়া ১০ লাখেরও বেশি বেসামরিক নাগরিকের কারণে সেখানে কোনো অভিযান চালানো উচিত হবে না।
হোয়াইট হাউসের এক ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, বাইডেন সোমবার আবারো রাফা নিয়ে তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনো বিশ্বাসযোগ্য ও বাস্তবায়নযোগ্য কোন মানবিক পরিকল্পনা দেখছে না।
সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, আমরা মনে করি রাফায় এ মুহূর্তে অভিযান চালালে ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্ভোগকে রাতারাতি বাড়িয়ে তুলবে এবং বেসামরিক প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে যাবে।
কিন্তু বাইডেন ও নেতানিয়াহুর ফোনালাপের কয়েক ঘণ্টা পরই ইসরাইল রাফা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরে যেতে দ্বিতীয় দফায় নির্দেশ জারি করে বলেছে, তারা সেখানে স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এদিকে ইসরাইল সোমবার রাতে রাফা এলাকায় বিমান হামলা জোরদার করেছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, ইসরাইলি বিমান সোমবার রাফায় ৫০টিরও বেশি সন্ত্রাসী স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে।
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে আকস্মিক বড় ধরনের হামলা চালায়। এ সময়ে তারা প্রায় এক হাজার ১৭০ ইসরাইলিকে হত্যা এবং ২৫০ পণবন্দীকে আটক করে। এখনও তাদের কাছে ১৫০ পণবন্দী আটক রয়েছে।
এদিকে ৭ অক্টোবর ইসরাইল গাজায় প্রতিশোধমূলক পাল্টা হামলা শুরু করে যা এখনো চলছে। গাজায় ইসরাইলের অব্যাহত হামলায় ৩৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। এদের বেশিভাগ নারী ও শিশু।
সূত্র : রয়টার্স ও এএফপি