বাংলাদেশ সত্যিকারের গণতন্ত্রের দেশ নয়। গণতন্ত্র পালিয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, ইসলামপন্থি বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে খুব বেশি ব্যবধান নেই। ভারতের তেহেলকা ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক নিবন্ধে এসব কথা লিখেছেন বাংলাদেশের বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। ‘আইডিওক্রেসি ওভারটেকস ডেমক্রেটিক ডিসেন্ট’ শীর্ষক ওই নিবন্ধে তিনি আস্তিক-নাস্তিক নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি লিখেছেন যারা মুক্ত চিন্তা করেন অথবা প্রগতিশীল তাদেরকে নাস্তিক হিসেবে দেখা হয়। আনসিভিলাইজড ও অশিক্ষিতরা সেখানেই থেমে থাকে না। তারা দৃঢ়তার সঙ্গে বিশ্বাস করে নাস্তিকদের জন্য মৃত্যু ছাড়া অন্য কোন পুরস্কার নেই। ৩০ বছর আগে আমি কলম তুলে নিয়েছিলাম তাদেরকে একত্রিত করতে ও আলোকিত করতে। এখনও দেখতে পাই অশিক্ষিতরা তার চেয়েও বেশি খারাপ অবস্থায় রয়েছে। আমার কলম সম্ভবত একটি পুরো জাতিকে শিক্ষিত করতে পারে না। এরপরেই তিনি লিখেছেন, অনেক বছর হলো বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতার দিকে দেশ কতখানি এগিয়েছে? এখন তার অবস্থান কোথায়? তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশ গণতন্ত্রের দেশ নয়। একটি আদর্শ গণতন্ত্রে কোন ধর্ম থাকে না। কিন্তু বাংলাদেশে আছে। যতদিন সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম বাদ দেয়া না হবে ততদিন নাস্তিক বা অবিশ্বাসী শব্দটি টিকে থাকবে এবং ততদিন বাংলাদেশ সত্যিকার গণতন্ত্র অর্জন করতে পারবে না। দীর্ঘ ওই নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, ধর্ম নিরপেক্ষ দল হিসেবে এখনও মানুষ আওয়ামী লীগের ওপর আস্থা রাখে। এর বিপরীত চিত্র দেশের ইসলামপন্থি দলগুলোর জন্য। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। শোনা গেছে, আওয়ামী লীগের নেতারা হেফাজতে ইসলামের আমীর মাওলানা আহমদ শফির আর্শীবাদ পেতে নিয়মিত সফর করেন চট্টগ্রাম। তাই আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে বড় ধরনের কোন পার্থক্য নেই। তসলিমা লিখেছেন, যখন আমি দেশ নিয়ে ভাবি তখন এক রকম হতাশা বোধ করি। ইসলামিক কট্টরপন্থা ও সন্ত্রাসের শৃংখলে জাতিকে অবরুদ্ধ করে ফেলবে রাজনৈতিক দলগুলো। এক্ষেত্রে জনগণ নীরব দর্শক। যেভাবে ধর্মীয় পছন্দ-অপছন্দ বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে দৃশ্যত, বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তন হয়ে ‘দারুল ইসলাম’ বা ইসলামের ভূমিতে পরিণত হবে।