নীলফামারীর ডোমার উপজেলার সোনারায়ের হাজিপাড়া এলাকার বর্গাচাষি মজিবর রহমান। এবার ৪ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে করেছেন বোরো ধান আবাদ। কিন্তু চলমান তাপপ্রবাহে জমিতে দেখা দিয়েছে পানিশূন্যতা। এতে জমির ধান চিটা হয়ে যায় কিনা সেই দুশ্চিন্তা নিয়ে দিন কাটছে এই বোরো চাষির। ফলন ভালো না হলে দাদনের খপ্পড়ে পড়তে হবে বলে তিনি জানান।
শুধু মজিবর রহমানের ক্ষেতই নয়, চিটার ঝুঁকিতে পুরো নীলফামারী জেলার বোরো ধানের আবাদ। কৃষি কর্মকর্তারা জমিতে সব সময় পানি ধরে রাখার পরামর্শ দিলেও কৃষক বলছেন- ক্রমাগত লোডশেডিং আর পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ব্যহত হচ্ছে টেকসই সেচ ব্যবস্থা। তাছাড়া ২৪ ঘণ্টায় তাপমাত্রার দ্রুত ওঠানামা আরও বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মজিবর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ধানের অবস্থা বাবা খুব খারাপ। এতো পানি দিচ্ছি পানি তো থাকে না। রোদের তাপে কোনো খাল-বিলে পানি নেই। কীটনাশক স্প্রে করেও কোনো কাজ হয় না। একটা জমিতে তিন চারবার স্প্রে করা লাগছে। এভাবে কৃষক বাঁচবে? জমির ধান বাঁচাইতে গেলে তো মহাজনের কাছ থেকে টাকা নিতে হবে। তা ছাড়া তো উপায় নেই।
ধানের ফুল আসার জন্য সর্বোচ্চ সহনীয় তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও আবহাওয়া অফিস বলছে- নীলফামারীর সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ওঠানামা করছে ৪০ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এ অবস্থায় ঝড় বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে শঙ্কা চাষিদের।
বোড়াগাড়ী এলাকার কৃষক জহিরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ধানের তো এখন ফুল ফুটতেছে। যে পরিস্থিতি আকাশের, সকালবেলা রোদের চাপ আবার বিকেলে কম। এভাবে রোদের তাপে ধানের ক্ষতি হচ্ছে। আর আকাশের যা অবস্থা ঝড় বৃষ্টি হলেও কী যে হবে পরিস্থিতি বলা যাচ্ছে না।
একই এলাকার কৃষক সলেমান আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগে ১ ঘণ্টা পানি দিলে এক বিঘা জমি সেচ হয়ে যেত। এখন দেড় ঘণ্টায়ও সেই পানি হয় না। পানি দিতেই নেই হয়ে যায়।
তাহেরুল ইসলাম নামে আরেক চাষি ঢাকা পোস্টকে বলেন, হঠাৎ বৃষ্টি হলে সমস্যা হতে পারে। কিন্তু এখন যে তাপমাত্রা, এটা এখনো ক্ষতি করেনি। এখন প্রতিদিন ধানে পানি দিতে হচ্ছে। তা না হলে ধানের ক্ষতি হতে পারে।
এ বছর নীলফামারী জেলায় ৮১ হাজার ৮৫৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। তাপ পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামীতেও এমন প্রাকৃতিক বৈকল্য বাড়বে। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গবেষণা জরুরি বলে মনে করছেন জেলার কৃষি কর্মকর্তা।
নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এস এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওপরের এবং নিচের তাপমাত্রা কত এটা জেনে তারপর পানি দিতে হবে। কিন্তু আমরা তো এখনো এগুলো গবেষণা করিনি। এখন আমাদের এ বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে।