প্রথমবারের মতো ২০১৪ সালে ভাইস চেয়ারম্যান হন জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোস্তাকিম মন্ডল। ভাইস চেয়ারম্যান পদে থাকা অবস্থায় তিনি তেমন সম্পদ করতে পারেননি। ২০১৯ সালে চেয়ারম্যান হওয়ার পর করেছেন সম্পদ, হয়েছেন কোটিপতি। শুধু তাই নয়, স্ত্রীর নামেও কিনেছেন ১১ বিঘা জমি।
নির্বাচন কমিশনে তার দেওয়া ২০১৪, ২০১৯ ও ২০২৪ সালের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
হলফনামার তথ্য মতে, ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ার আগে ২০১৪ সালে তিনি মাছ চাষ করতেন। সে সময় তিনি কৃষিখাতে বছরে আয় করতে ৮০ হাজার টাকা, আর ব্যবসা থেকে এক লাখ টাকা। তবে নির্ভরশীলদের নামে কোনো আয় ছিল না। অস্থাবর সম্পদে নগদ টাকা ছিল ২ লাখ। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ৫ ভরি স্বর্ণ ছিল, যার অর্জনকালীন মূল্য ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ইলেকট্রনিক সামগ্রীতে এক লাখ ও আসবাবপত্র বাবদ ২০ হাজার টাকা ধরা হয়েছিল। নির্ভরশীলদের মধ্যে মায়ের কাছে ২০ ভরি স্বর্ণ ছিল, আর তার দাম ধরা হয়েছিল ১০ লাখ টাকা। স্থাবর সম্পদে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া নিজ নামে ৮ বিঘা কৃষি জমি ছিল, যার দাম ধরা হয়েছিল ২০ লাখ টাকা। এক বিঘা বসতভিটাও পেয়েছিলেন পৈত্রিক সূত্রে। সেই সঙ্গে তার লিজ নেওয়া ১০ বিঘা মৎস্য খামার ছিল। আর মায়ের নামে কৃষি জমি ছিল ৫ বিঘা। তবে তার কোন দায়-দেনা ও কোনো মামলা ছিল না।
ভাইস চেয়ারম্যান থেকে প্রথমবারের মতো ২০১৯ সালে চেয়ারম্যান প্রার্থী হন মোস্তাকিম। সেসময়ও তার মৎস্য চাষের ব্যবসা ছিল। আর কৃষিখাতে বছরে আয় ছিল ৮০ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে বছরে আয় ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। নির্ভরশীলদের নামে কোনো আয় ছিল না। অস্থাবর সম্পদে নগদ টাকা ছিল ৮ লাখ টাকা। ২ লাখ ৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি মোটরসাইকেল, এক লাখ টাকা মূল্যের ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও ৫০ হাজার টাকার আসবাবপত্র ছিল। সেসময় তিনি বিবাহে ২০ ভরি স্বর্ণ পান। তবে স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের নামে কিছুই ছিল না। স্থাবর সম্পদে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া নিজ নামে কৃষি জমির পরিমাণ সঠিক রাখা হয়েছিল, তবে দাম ১৮ লাখ টাকা কমে ধরা হয়েছিল ২ লাখ টাকা। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ২৩ শতক জমির ওপর পাকা বাড়ি ছিল তার। তবে স্ত্রী, নির্ভরশীল, যৌথ মালিকানার ক্ষেত্রে কিছুই ছিল না। সেসময়ও তিনি ঋণ ও মামলা মুক্ত ছিলেন।
২০১৯ সালে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর সম্পদ বেড়ে যায় মোস্তাকিমের। নগদ টাকা, মোটরসাইকেল, কৃষি ও অকৃষি জমি, দালাল এবং স্ত্রীর নামে জমিও দেখানো হয়েছে। ২০২৪ সালের হলফনামায় তিনি মৎস্য চাষ ব্যবসার কথা উল্লেখ করেছেন। তার কৃষিখাত থেকে বছরে আয় দেড় লাখ টাকা, বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট বা দোকান বা অন্যান্য ভাড়া থেকে ২ লাখ টাকা, ব্যবসা থেকে ৩ লাখ টাকা বছরে আয় করার কথা উল্লেখ আছে। এবারও নির্ভরশীলদের নামে কোনো আয় নেই। অস্থাবর সম্পদে নগদ টাকা ১২ লাখ, ৫ লাখ টাকা মূল্যের তিনটি মোটরসাইকেল, ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও ৩ লাখ টাকা আসবাবপত্র দেখানো হয়েছে। আর স্ত্রীর নামে শুধু স্বর্ণ দেখানো হয়েছে। ২০১৯ সালের হলফনামায় বিবাহে ২০ ভরি স্বর্ণ পাওয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও এবার স্ত্রীর নামে ২৪ ভরি স্বর্ণ দেখানো হয়েছে।
স্থাবর সম্পদে ২০১৯ সালের হলফনামার চেয়ে এবার ২ দশমিক ৫০ বিঘা জমি বেড়েছে, আর মোট ১০ দশমিক ৫০ বিঘা জমির মূল্য ধরা হয়েছে ৯ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬৬ টাকা। এবার ১০ লাখ টাকা মূল্যের অকৃষি ৫০ শতক জমি দেখানো হয়েছে। ৯৫ লাখ টাকা মূল্যের ৮ দশমিক ৫০ শতক দালান জমি দেখানো হয়েছে। এই জমি মায়ের কাছ থেকে দান পেয়েছেন বলে উল্লেখ রয়েছে। তবে এই জমি তিনি কৌশলে মায়ের নামে কিনে পরে নিজের নামে দান করে নিয়েছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। তার নামে দুইটি মৎস্য খামার রয়েছে। নিজের নামে সম্পদ করা ছাড়া তিনি স্ত্রীর নামে করেছেন ১১ বিঘা জমি। যা তার পূর্বের কোনো হলফনামাতে উল্লেখ ছিল না। এবারও তার নামে কোনো মামলা নেই। তবে ৩৫ লাখ টাকার ঋণ রয়েছে। তিনি চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করার সময় যে ভাতা পেয়েছেন সেটিও উল্লেখ নেই তার হলফনামায়।
এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে মোস্তাকিম মন্ডল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার স্ত্রীর নামে যে সম্পদ দেখানো হয়েছে, তা স্ত্রীর বাবার দেওয়া। কিন্তু সেটি হলফনামায় উল্লেখ করা হয়নি। চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় ভাতা পেয়েছি, সেটি অনেকেই বলেছে উল্লেখ করতে হবে না, তাই সেটিও উল্লেখ করা হয়নি। আর চেয়ারম্যান মার্কেট (৯৫ লাখ টাকার সম্পদ) মা কেনার পর আমাকে দান করে। সুকৌশলে মায়ের নামে কেনার পর নিজের নামে দান হিসেবে নেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অনেকেই তো অনেক কথা বলবে। আমার টাকায় নয়, মায়ের টাকায় সেটি কেনা।
স্নাতক পাশ করা মো. মোস্তাকিম মন্ডল ক্ষেতলাল উপজেলার বাখেড়া কোমলগাড়ী গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো ক্ষেতলাল উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরের বার ২০১৯ প্রথমবারের মতো তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত দলীয় প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে নির্বাচিত হন। এবার ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি আবারও উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হয়েছেন। মোস্তাকিম মন্ডল ক্ষেতলাল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদে দায়িত্ব পালন করছেন।