রাত পোহালেই ঈদ—ঘরে ঘরে নেমন্তন্ন, সেমাই ও খুরমার সু-ঘ্রাণ। অলিতে-গলিতে শুভ্র পাঞ্জাবি, টুপিতে লোকে লোকারণ্য। কাঁধে জায়নামাজ, হাতে তসবি। বাহারি রঙে, ঢঙের টুপি। হাসিমুখে কোলাকুলি, করমর্দনের পর একে অপরে নিজের বাড়িতে টেনে নেওয়ার দিন। এই দিনের সবার মনের অজান্তেই মুখে গুণগুণিয়ে চলে আসে ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ…’।
দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর এসেছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। এটি মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব। সবাইকে সম্প্রীতির বন্ধনে বাঁধার সওগাত নিয়ে আসে ঈদ। এর আনন্দ থেকে ধনী-নির্ধন কেউ বঞ্চিত নন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়ে থাকে।
ঈদের সকালে সর্বস্তরের মুসলিমরা ঈদগাহে আসেন নামাজ পড়তে। সেখানে একে অপরে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এরপর ঘরে ঘরে চলে ফিরনি-পায়েসের আয়োজন। এর মধ্য দিয়ে সমাজে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন জোরদার হয়।
৩০ দিন সিয়াম সাধনার পর বাংলাদেশের মুসলিম সম্প্রদায় আগামীকাল ঈদ উদযাপন করবেন। সকালে দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায়ের মাধ্যমে ঈদ উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
ঈদুল ফিতর একই সঙ্গে উৎসব ও ইবাদতের আধ্যাত্মিক স্বাদ দিয়ে যায় প্রতিটি মুমিনের মনে। ধর্মীয় মূল্যবোধে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা শৃঙ্খলিত করে। ঈদের আনন্দ-চেতনার ছোঁয়া মানবিকতা জাগ্রত করে।
বাংলাদেশের আকাশে বুধবার (১০ এপ্রিল) শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও ব্যাপক উৎসাহ, আনন্দ ও উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে সারাদেশে মুসলমানরা এদিন ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা পবিত্র রমজানে পুরো এক মাস রোজা পালন করে এখন জামাতে ঈদের নামাজ আদায়ের প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন।
এদিকে রাজধানীসহ সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ঈদ জামাতের প্রস্তুতিও ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বুধবার থেকে ৩ দিনের সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে। সরকারি, আধা-সরকারি ভবন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ভবন ও সশস্ত্র বাহিনীর সকল স্থাপনাসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় পতাকা ও ‘ঈদ মোবারক’ খচিত ব্যানার মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ট্রাফিক আইল্যান্ড ও লাইট পোস্টে প্রদর্শন করা হয়েছে
এবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ব্যবস্থাপনায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৮টায়। আবহাওয়া প্রতিকূল বা অন্য কোনো অনিবার্য কারণে এ জামাত অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে সকাল ৯টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
ঈদের প্রধান জামাতে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ রুহুল আমিন ইমাম এবং বায়তুল মোকাররমের মুয়াজ্জিন ক্বারী মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মোকাব্বির হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
অপরদিকে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বুধবার থেকে ৩ দিনের সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে। সরকারি, আধা-সরকারি ভবন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ভবন ও সশস্ত্র বাহিনীর সকল স্থাপনাসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় পতাকা ও ‘ঈদ মোবারক’ খচিত ব্যানার মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ট্রাফিক আইল্যান্ড ও লাইট পোস্টে প্রদর্শন করা হয়েছে। ঈদুল ফিতরের আগের রাতে সরকারি ভবন সমূহসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহে আলোকসজ্জা করা হয়।
সারাদেশে বিভাগ বা জেলা, উপজেলা, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এবং বেসরকারি সংস্থাসমূহের প্রধানরা জাতীয় কর্মসূচির আলোকে নিজ নিজ কর্মসূচি প্রণয়ন করে ঈদুল ফিতর উদযাপন করবে। এছাড়াও বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি গণমাধ্যমসমূহ যথাযথ গুরুত্ব সহকারে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার ও সংবাদপত্রে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবে।
ঈদ উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, বৃদ্ধ নিবাস, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, আশ্রয় কেন্দ্র, সেইফ হোমস, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র, দুঃস্থ কল্যাণ ও মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ঈদের দিন সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের বিনা টিকেটে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন সকল শিশু পার্কে প্রবেশ এবং বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ঈদের দিন সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের বিনাটিকেটে যাদুঘর, আহসান মঞ্জিল, লালবাগের কেল্লা দর্শনীয় স্থান প্রবেশ এবং তা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে শিশুদের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।