গণমাধ্যমকে দেশের ইতিবাচক দিক বহির্বিশ্বে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, গণতান্ত্রিক দেশে সরকারের সমালোচনা অবশ্যই হবে। তবে দেশ বিধ্বংসী সমালোচনা কাম্য নয়। নিজের দেশকে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরার মধ্যে কোনো কৃতিত্ব নেই। বাংলাদেশ নিয়ে কোনো নেতিবাচক খবর বিদেশী গণমাধ্যম যত বড় করে প্রকাশ করে, তার চেয়ে কয়েকগুণ বড় করে প্রকাশ করে দেশের গণমাধ্যম। এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক কোনো ভুঁইফোড় সংগঠন বাংলাদেশ নিয়ে নেতিবাচক খবর করলে দেশীয় গণমাধ্যম সেটি ফলাও করে প্রচার করে। সংবাদ অবশ্যই প্রকাশ করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে সেটি যেন নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে।
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনির্মাণে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ বিষয়ক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস রিপোর্টার্স ফোরাম (আইআরএফ) আয়োজিত আলোচনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
বিএনপি দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাদের দলের নেতা বিদেশে থেকে পেইড এজেন্টের মাধ্যমে দেশ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালায়। আর দেশের মানুষ সেটি দেখে বিভ্রান্ত হয়। তারা পদ্মা সেতু নিয়ে গুজব ছড়িয়েছিল, করোনার টিকা নিয়ে অপপ্রচার চালিয়েছিল। এখন আবার শুরু করেছে ভারতীয় পণ্য বর্জন। এগুলোর বিরুদ্ধে মূল ধারার গণমাধ্যমকে সোচ্চার হতে হবে।
মন্ত্রণালয়ে নিয়মিত মাসিক সমন্বয় সভার নির্দেশ : নিজ মন্ত্রণালয়ে নিয়মিতভাবে মাসিক সমন্বয় সভা আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন পরিচালিত ‘সিনিয়র অফিশিয়ালস মিটিং’য়ে তিনি এ নির্দেশনা দেন। অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব ড. নজরুল ইসলাম ও সব উইংয়ের মহাপরিচালকরা সভায় অংশ নেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাজের জন্য বিদেশ ভ্রমণ শেষে দ্রুততম সময়ে প্রতিবেদন জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা, দূতাবাসগুলোর পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন দফতরের সাথে সমন্বয়, প্রবাসী সেবার মান বৃদ্ধি, বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোর বাণিজ্য লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন ও ইন্সপেক্টর জেনারেল অব মিশনসের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিদর্শন, ফরেন এলাউন্স বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তাসহ মন্ত্রণালয় ও এর মিশনগুলোর নানা কার্যক্রমের ওপর কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করেন ও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন।
বাংলাদেশ সবার জন্য স্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বদ্ধপরিকর : শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, সবার জন্য আমরা একটি সুন্দর কাজের পরিবেশ ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারি। কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা ও শ্রমিকের অধিকার রক্ষা বাস্তবায়ন দেশকে এগিয়ে নিতে ও উন্নত করতে পারে। শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন কাজ করেছেন। বাংলাদেশ সবার জন্য স্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে বদ্ধপরিকর।
গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে ‘সামাজিক ন্যায়বিচারের অগ্রগতিতে শালীন কাজের এজেন্ডা প্রচার’ বিষয়ক জাতীয় সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) যৌথভাবে এ সংলাপের আয়োজন করে। সংলাপের মূল উদ্দেশ্য ছিল শ্রম খাতের অংশীজনদের একত্রিত করা এবং মানসম্পন্ন কর্মসংস্থান এবং শোভন কাজের সুযোগ সৃষ্টির আহ্বান জানানো।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো পাঁচ বছরের মধ্যে সবার জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। গত জুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইএলও সোশাল জাস্টিস সামিটে নারী ও তরুণদের মেধা ও কর্মশক্তিকে সর্বোচ্চ কাজে লাগানোর প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।
শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় শুধু কথায় নয়, বরং বাস্তবায়নের ভিত্তি স্থাপন করে গেছেন। শ্রমিকদের অধিকার, সুষ্ঠু কাজের পরিবেশ বাস্তবায়নের কৌশল প্রণয়নে আাইএলও’র সাথে আমরা দীর্ঘদিন সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছি।
আইএলও কান্ট্রি ডিরেক্টর তুমো পুতিয়ানিন বলেন, বাংলাদেশ গত ৫৩ বছরে অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করেছে। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে আসবে। আর এর প্রধান শক্তি হলো শ্রমিকদের অবদান।