কম দামে পছন্দের শাড়ির জন্য মিরপুর বেনারসি পল্লী সুনাম কুড়ালেও এবার দাম শুনে ‘বেকুব’ বনছেন ক্রেতা। গতকাল গোটা পল্লী ঘুরে দেখা যায় প্রতিটি দোকানেই কমবেশি ক্রেতা দরদামে ব্যস্ত। বেশির ভাগ ক্রেতা শাড়ির বাড়তি দামে বাজেট সঙ্কুলানে বিব্রত হয়েছেন। তাদের ভাষ্য, প্রতি বছর এখানে শাড়ি কিনতে এসে দাম নিয়ে এমন টানাপড়েন হয়নি। এবারই প্রথম শাড়ির দামে তারা বেকুব বনে গেছেন।
বিক্রেতারা বলছেন, প্রতি বছর তারা ভালো ব্যবসা করলেও এবার ব্যবসা ভালো নেই। সব কিছুর দাম বাড়াতে শাড়ি তৈরিতেও খরচ বেড়েছে। ফলে এবার শাড়িতে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়তে হয়েছে।
তাদের ভাষ্য এই বাড়তি দামেও যে তারা খুব লাভ করছেন তা নয়। খরচ বাদ দিয়ে সামান্য পরিমাণ লাভ ধরেই দাম নির্ধারণ করেছেন। এতে করে দাম শুনে ক্রেতারা অবাক হয়ে তাকাচ্ছেন। আবার বেশির ভাগই দাম শুনেই চলে যাচ্ছেন। এভাবে করে ক্রেতা আসলেও বিক্রি হচ্ছে খুব কম। অথচ রোজা শেষের দিকে। ঈদ আসতেও খুব বেশি দেরি নেই।
একজন ব্যবসায়ী জানান, তাদের এখানে শতাধিক দোকান রয়েছে। দোকানগুলোতে বেনারসি ছাড়াও ঢাকাই মসলিন, জামদানি, টাঙ্গাইল তাঁত ও হাফ সিল্ক, রাজশাহী সিল্ক, জর্জেট, কাতানসহ নানা ধরনের বাহারি কাপড় পাইকারি এবং খুচরা বিক্রি হয়। তবে ঈদ উপলক্ষে মসলিন, বেনারসি, হাফসিল্কের শাড়ি বিক্রি হচ্ছে বেশি। মানভেদে এসব শাড়ির দাম ২ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত আছে।
বিয়ের জন্য শাড়ি কিনতে ধানমন্ডি থেকে আসা কবির আহমেদ জানান, তারা সব অনুষ্ঠানে শাড়ি এখান থেকেই কেনেন। তবে এবার এসে দাম শুনে তিনি বেকুব বনে গেছেন। তার ভাষ্য কোয়ালিটি ভেদে প্রতিটি শাড়িতে নিম্নে হলেও এবার হাজার টাকা দাম বাড়ানো হয়েছে। তাই শপিং করতে এসে বাজেট সঙ্কটে পড়েছেন বলেও জানান তিনি। এ বিষয়ে একজন ব্যবসায়ী জানান, সব কিছুর দাম বাড়াতে তারা বাধ্য হয়েই দাম বাড়িয়েছেন। অন্য দিকে বেচাকেনার ওপরে তাদেরকে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। অথচ ক্রেতারা ভ্যাট দিতে চায় না। যা তাদের নিজেদের পরিশোধ করতে হচ্ছে। শ্যামলি থেকে ঈদ শপিং করতে আসা লিমা ও লিসা জানান, প্রতি বছর তারা এখানে শাড়ি কিনতে আসেন। এবার ঘর থেকে অন্যান্য বছরের দাম হিসাব করে টাকা দেয়া হয়েছে। এখন মার্কেটে এসে শাড়ির দাম দেখে তারা অবাক। এক বছরের ব্যবধানে এত দাম বাড়বে এটা তারা কল্পনা করতে পারেননি। ফলে শপিং অসমাপ্ত রেখেই তারা বাসায় ফিরছেন। নাছির আল আরাফ। একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন। তার ভাষ্য, ‘ঈদে বাড়ি যাবো। তাই কয়েকটি শাড়ি কিনতে এসেছি। কিন্তু বিক্রেতার দাম শুনে ভাষা হারিয়েছি। যে দাম চাওয়া হয়েছে সে দামের মধ্যে কত দাম বলব তাও বুঝতে পারছি না’। এভাবে দিন দিন দাম বাড়ালে বেনারসি পল্লি ক্রেতা হারাবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, মানুষের যে পরিমাণ ব্যয় বাড়ছে তাতে করে এত দাম দিয়ে আর বেনারসি পরার শখ থাকবে না।
দাম নিয়ে একই অভিযোগ করলেন রাইসা। তার ভাষ্য ‘ভাই কি বলব। কয়েকটি দোকান ঘুরে দাম শুনে অন্য দোকানে যাওয়ার সাহস হারিয়ে ফেলেছি। কারণ আমার ধারণায় যে শাড়ির দাম ১২শ’ টাকা সে শাড়িতে এখানে দাম চাওয়া হচ্ছে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা। এতে করে এবার আর ঈদ বাজার সম্ভব না।’