ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের একটি হলো রমজানের রোজা রাখা। এ মাসটি অন্য ১১টি মাসের তুলনায় বিশেষ গৌরবের অধিকারী। মুসলিম জাতির বিশেষ দিনগুলো আল্লøাহ রাব্বুল আলামিনের একেকটি নিয়ামত। তাই আল্লøাহর তরফ থেকে পবিত্র মাহে রমজান মুসলমানদের জন্য একটি বিশেষ রহমত। মহান আল্লøাহ এ মাসকে বিশেষভাবে সম্মানিত, মহিমান্বিত ও গৌরবান্বিত করেছেন। এ মাসকে তিনি মাগফিরাত ও নাজাতের মাস হিসেবে নির্বাচন করেছেন। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের কারণে এ মাসকে মুমিনের ইবাদতের বসন্তকাল বলা হয়। এই মাসে একজন রোজাদার সারা বছরের নেকি ও পুণ্যের ঘাটতি পূরণের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা ও সাধনা চালিয়ে যান।
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘মাহে রমজানের প্রতি রাতেই একজন ফেরেশতা ঘোষণা করতে থাকেন- ‘হে পুণ্য অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে পাপাচারী! থামো, চোখ খোলো। তিনি আরো ঘোষণা করেন- ‘ক্ষমাপ্রার্থীকে ক্ষমা করা হবে। অনুতপ্তের অনুতাপ গ্রহণ করা হবে। প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কবুল করা হবে।’
সাধারণত বলা হয়ে থাকে, রমজানের প্রথম দশকে আল্লøাহ তায়ালা তার বান্দাদের প্রতি রহমত বা দয়া বর্ষণ করতে থাকেন। দ্বিতীয় দশকে আল্লøাহ তায়ালা তার বান্দাদের ক্ষমা করতে থাকেন। তৃতীয় দশকে আল্লøাহ তায়ালা তার বান্দাদের জাহান্নাম থেকে নাজাত বা মুক্তি দিতে থাকেন।
আমাদের অস্তিত্বজুড়ে আল্লাহর রহমত। রহমত ছাড়া এক মুহূর্তও বাঁচার উপায় নেই। তবে পবিত্র রমজানের প্রথম দশকে রহমতের বারিধারা আরো প্রবল বেগে বইতে থাকে। বান্দা যখন সঠিক নিয়তে রোজা রাখে, রমজানের সব হক আদায় করে, সঠিকভাবে সংযমী হয়, হালাল রুজি দিয়ে সাহরি ও ইফতার করে, কারো হক নষ্ট না করে এভাবে সারা দিন কাটিয়ে দেয় তার জন্য রহমত প্রথম রমজান থেকেই শুরু হয়। যা রমজানের শেষ পর্যন্ত সে ধারা অব্যাহত থাকে।
রহমতের পরই মাগফিরাত দরজায় এসে কড়া নাড়ে। মুমিনকে জানান দেয় তার ক্ষমা চাওয়ার সময় এসে গেছে। আল্লøাহকে ভয় করার সময় এসে গেছে অর্থাৎ তার মুত্তাকি হওয়ার সময় এসে গেছে। রমজান হলো তাকওয়া অর্জনের জন্য প্রশিক্ষণের মাস। পবিত্র কুরআনে আল্লøাহ বলেছেন- ‘হে মুমিনরা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর; আশা করা যায় যে, তোমরা তাকওয়া অর্জন করবে।’ (সূরা বাকারাহ-১৮৩)
দুনিয়ার সব গুনাহগার মানুষের জন্য চিরস্থায়ী শান্তি ও মুক্তির দিশারি এ মাগফিরাতের দশক। এ দশকে বান্দার ক্ষমা লাভ আল্লøাহর বিশেষ অনুগ্রহ।
রমজান মাসের মাগফিরাত সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে যা বলা হয়েছে- মাগফিরাত শব্দের অর্থ হলো ক্ষমা। মহান আল্লøাহ রাব্বুল আলামিনের অসংখ্য গুণের অন্যতম হলো তিনি ক্ষমাশীল। এ জন্য আল্লøাহ তায়ালার অপর একটি নাম হলো ‘আল-গাফুর’। আর ‘গাফুর’ শব্দের বাংলা অর্থ হলো ‘ক্ষমাশীল’। বান্দা যেন তার সারা বছরের সব গুনাহ থেকে মুক্তি পেতে পারে, এ জন্য আল্লøাহ রাব্বুল আলামিন রমজান মাসের দ্বিতীয় দশককে মাগফিরাত তথা ক্ষমা লাভের সময় হিসেবে ধার্য করেছেন। রমজানের দ্বিতীয় ১০ দিন অর্থাৎ মাগফিরাতের ১০ দিন আমাদের করণীয় হলো- সর্বোচ্চ ক্ষমা কামনা করা। মহানবী সা: আরো বলেছেন, ‘সব মানুষ ভুলকারী। আর ভুলকারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো যারা তাওবাহকারী।’ (বায়হাকি)
মহান আল্লøাহ হাদিসে কুদসিতে বলেন, ‘তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার কাছে আসো এবং আমার সাথে কোনো কিছুকে শরিক না করে থাকো, তাহলে আমিও সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে আসব।’ (সুনানে তিরমিজি-৩৫৪০)
এ মাসে আল্লøাহর দরবারে মাগফিরাত কামনা করলে, গরিব-দুঃখীদের প্রতি দান-সদকার পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে, নিজে সবধরনের খারাপ কাজ পরিহার করলে, আল্লøাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ইবাদত-বন্দেগি, জিকির-আসকার, তাসবিহ-তাহলিল, কুরআন তিলাওয়াত ও দোয়া-ইস্তিগফার করলে, মহান আল্লøাহ তা অবশ্যই কবুল করেন এবং বান্দাকে ক্ষমা করে দেন।
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘এ মাসে চারটি কাজ অবশ্য করণীয়। দু’টি কাজ এমন যে, তার দ্বারা তোমাদের প্রতিপালক সন্তুষ্ট হন। অবশিষ্ট দু’টি এমন, যা ছাড়া তোমাদের কোনো গত্যন্তর নেই। এ চারটির মধ্যে একটি হলো কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করা, দ্বিতীয়টি হলো অধিক পরিমাণে ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করা। এ দু’টি কাজ আল্লøাহর দরবারে অতি পছন্দনীয়। তৃতীয় ও চতুর্থ হলো জান্নাত লাভের আশা করা ও জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের প্রার্থনা করা। এ দু’টি এমন বিষয়, যা তোমাদের জন্য একান্ত প্রয়োজন। (ইবনে খুজাইমা)
ক্ষমা লাভের বিশেষ দোয়া মাগফিরাতের দশকে ক্ষমা লাভের একটি দোয়া আমরা বেশি বেশি করতে পারি। তা হলো আল্লাহুম্মা হাব্বিব ইলাইয়্যা ফি-হিল ইহসান; ওয়া কাররিহ ফিহিল ফুসুক্বি ওয়াল ইসইয়ান; ওয়া হাররিম আলাইয়্যা ফি-হিস সাখাত্বা ওয়ান নিরানা বিআওনিকা ইয়া গিয়াছাল মুসতাগিছিন। অর্থ- হে আল্লøাহ! এ দিনে সৎকাজকে আমার কাছে প্রিয় করে দাও। আর অন্যায় ও নাফরমানিকে অপছন্দনীয় করো। তোমার অনুগ্রহের উছিলায় আমার জন্য তোমার ক্রোধ ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হারাম করে দাও। হে আবেদনকারীদের আবেদন শ্রবণকারী!
লেখক : শিক্ষার্থী, দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া