আঞ্চলিক প্রতিনিধি. গাজীপুর: গাজীপুরে অনলাইনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটির চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে সিকিউরিটি এজেন্সির অফিসে আটকে রেখে নির্যাতন করে বিপুল অংকের মুক্তিপণ আদায় করার সাথে জড়িত প্রতারক চক্রের ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১। এসময় প্রতারক চক্রের বন্দিদশা থেকে ২৭ জনকে উদ্ধার করা হয়।
আজ বৃহসপসপতিবার (২১ মার্চ) বিকেলে র্যাব-১ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া অফিসার) সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ মাহফুজুর রহমান এই তথ্য জানায়। এর আগে বুধবার বেলা সাড়ে ১২টায় গাজীপুর মহানগরের গাছা থানার হারিকেন রোডের রশিদ মার্কেটে র্যাবের এ অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযান শেষে রাত ১০টায় ঘটনাস্থলে এক প্রেসব্রিফিংয়ে র্যাব কর্মকর্তারা এসব তথ্য তুলে ধরেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, নীলফামারী জেলার জলঢাকার শফিকুল ইসলামের ছেলে আস্তাকুল আমিন আনাম (৩০), নীলফামারী সদরের শফিকুল ইসলামের ছেলে তৌফিক (২৪) রাজশাহী বাঘমারার রনিছার রহমানের ছেলে ইমরান হোসেন (১৯), নাটোর সিংড়ার আব্দুল আজিজের ছেলে জুনায়েদ (২১), ময়মনসিংহ ভালুকার রমজান আলীর ছেলে রনি আহমেদ (২১), একই উপজেলার হালিমুদ্দিন সরকারের ছেলে সালাউদ্দিন সরকার (২০), পাবনা ঈশ্বরদীর ছানোয়ার হোসেনের ছেলে জিসান হোসেন (২১), কিশোরগঞ্জ তাড়াইলের চানরায় মিয়ার ছেলে রায়হান (১৮), চাপাইনবাবগঞ্জের মাসুদ রানার ছেলে আতিক হাসান (১৯), ময়মনসিংহ সদরের রফিকুল ইসলামের ছেলে আজিজুল হাকিম (২৩), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্চারামপুরের শাহজাহান মিয়ার মেয়ে সম্পা আক্তার (২৪), শেরপুর সদরের সারোয়ার হোসেনের মেয়ে বিউটি খাতুন (২১), যশোর কোতয়ালীর আকতারুজ্জামানের মেয়ে বর্ষা খাতুন (১৯) এবং বরিশাল সদরের জহিরুল ইসলামের মেয়ে তাহসিন আক্তার মীম (২০)।
র্যাব-১ জানায়, গত ১৯ মার্চ বেস্ট এ্যাকশন সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অনলাইনে চাকুরীর বিজ্ঞপ্তি দেখে ভিকটিম সাকিব হোসেন ও তার পূর্ব পরিচিত ফারজানা আক্তার পাখি চাকুরীর প্রত্যাশায় উক্ত কোম্পানীতে আসেন। এসময় কোম্পানীর লোকেরা তাদেরকে অফিসে আটকে শারিরীকভাবে নির্যাতন করে এবং ভিকটিমের পরিবারের কাছে ফোনে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করে। ভিকটিমের বাবা ছেলেকে উদ্ধারের জন্য র্যাব-১, সিপিএসসি, গাজীপুর এর নিকট আইনি সহায়তা কামনা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার সাড়ে ১২টায় র্যাব-১, সিপিএসসি, গাজীপুর এর একটি আভিযানিক দল তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গাজীপুর মহানগরের গাছা থানার হারিকেন রোডের বিভিন্নস্থানে অভিযান পরিচালনা করে । এসময় ভিকটিম সাকিব ও ফারজানা ছাড়াও সর্বমোট ২৭ জন ভিকটিমকে প্রতারক চক্রের অফিস কাম বন্দিশালা থেকে উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা বিভিন্ন প্রতারণার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে র্যাবকে জানায়, তারা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। দীর্ঘদিন যাবৎ বেস্ট এ্যাকশন সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠান এবং তাদের ব্যবহৃত মোবাইল নং-০১৭৯৬৮৭২৬৭১, ০১৭৩৩৩৪৮১৬১, ০১৭৫০১৬৬৭১১, ০১৭৬০১৩৫৯৬, ০১৭১৭৫০৬০২১ এর মাধ্যমে অনলাইনে ভুয়া চাকুরীর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল। চক্রটি প্রায় ৩ মাস যাবৎ এই প্রতারণা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এ চক্রের মোট সদস্য সংখ্যা ২০ জন এবং চক্রটির মূলহোতা ৫ জন। চক্রের অন্যান্য সদস্যরা বিভিন্ন এলাকার চাকুরী প্রত্যাশীদের অর্থের বিনিময়ে চাকুরী দেয়ার কথা বলে চক্রের মূলহোতা আস্তাকুল আমিন আনাম, তৌফিক, ইমরান হোসেন, জুনায়েদ ও রনি আহমেদের নিকট নিয়ে আসত। তারা চাকুরী প্রত্যাশীদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে এমনকি আটকে রেখে তাদের পরিবারের নিকট থেকে বিপুল অংকের নগদ অর্থ হাতিয়ে নিত। তারা প্রতারণার মাধ্যমে চাকুরী দেয়ার নামে অসংখ্য ব্যক্তির নিকট হতে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এছাড়াও চক্রটির স্থায়ীভাবে কোন অফিস ছিল না বিধায় আসামীরা গাছা থানার হারিকেন রোডের রশিদ মার্কেটে ভাড়া বাসাকে তারা অস্থায়ী অফিস হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল। আত্মগোপনের জন্য তারা প্রায়শই নিজেদের মোবাইল নম্বর বন্ধ রেখে নিকট আত্মীয় ও বন্ধু-বান্ধবের বাসায় অবস্থান করত।
গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবকে আরো জানায়, ভিকটিম সাকিব ও ফারজানা আক্তার উক্ত কোম্পানীতে চাকুরীর জন্য আসলে তারা তাদেরকে প্রথমে আটকে রেখে গাজীপুরের একটি অজ্ঞাত বাড়ীতে নিয়ে যায় এবং ভিকটিমদের পরিবারের নিকট ফোন করে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
প্রতারক চক্রের বন্দিদশা থেকে উদ্ধার হওয়া সাকিব হোসেন ইমন জানান, তিনি বরিশাল থেকে অনলাইনে চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখে গাজীপুরে এসেছিলেন। প্রতারক চক্রের অফিসে আসার পর তাকে একটি কক্ষে আটকে রেখে পরিবারের কাছে ৫ লাখ টাকার মুক্তিপণ দাবি করা হয় এবং দ্রুত টাকা আনার জন্য এ চক্রের অফিসের টর্চার সেলে তাকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। অফিসের একটি ছোট্ট প্রকোষ্ঠ টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার হতো। টয়লেট সদৃশ ওই প্রকোষ্ঠে কোন জানালা বা আলো-বাতাস ঢুকার ব্যবস্থা নেই।