ছবি- (টঙ্গীর নিউ মন্নু ফাইন কটল মিলস লিমিটেড)
গাজীপুর : ২০০১ সালে তৎকালিন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রমিকদের মালিকানায় ৯ টি মিল হস্তান্তর করেন। এর মধ্যে টঙ্গীতে অবস্থিত নিউ মন্নু ফাইন কটন মিলস লিমিটেড একটি। শ্রমিক মালিকানায় আসলেও ২৩ বছরে চালু হয়নি মিলের কোন বিভাগ, নেই কোন শ্রমিকও।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে লোকসানের কারণে মিলটি বন্ধ করে দেয় বিটিএমসি। এর পর গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের আওতায় (স্বেচ্ছাবসর) সার্ভিস বেনিফিট দিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের বিদায় করা হয়। ২০০১ সালে ২১ মার্চ টঙ্গী টেলিফোন শিল্প সংস্থার মাঠে এক শ্রমিক জনসভার আনুষ্ঠানিকভাবে টঙ্গীর তৎকালিন মন্নু টেক্সটাইল মিলস ও ফাইন কটন মিলস লিমিটেডকে একত্র করে নিউ মন্নু ফাইন কটল মিলস লিমিটেডকে শ্রমিকদের মালিকানায় হস্তান্তর করেন তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের লক্ষ্য ছিল দায়দেনা পরিশোধ করে শ্রমিকরা মিলের মালিকানা পেয়ে স্বাবলম্বী হবেন এবং মিল সচল রেখে কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ দেশের বস্ত্র চাহিদা পূরণে অবদান রাখবেন। কিন্তু বিগত ২৩ বছরেও সরকারের লক্ষ্য বাস্তবায়ন হয়নি, সাধারণ শ্রমিকদের ভাগ্যেরও পরিবর্তন হয়নি। তবে ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে মিলটির পরিচালনা পর্ষদের এমডি, চেয়ারম্যানসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন গুটিকয়েক শ্রমিকনেতার। বর্তমানে মিলে ৮৭০ জন শ্রমিক শেয়ার হোল্ডার রয়েছেন। ১৪.১১ একর জায়গায় অবস্থিত এই মিলের বিক্রয় মূল্য ছিল ২৩ কোটি ২৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। এর সাথে যুক্ত হয় মিলটি হস্তান্তর করার আগে বিটিএমসির নেয়া এক কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যাংকের ঋণ যা বিক্রির সময় দাঁড়ায় ৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এই অংক বর্তমানে প্রায় ১৬ কোটি টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। মিলটি বিক্রির সময় সরকারের বিক্রিত মূল্য মোট ৩০ কিস্তিতে পরিশোধ করার কথা ছিল। কিন্তু ২৩ বছরে একটি কিস্তিও পরিশোধ করা হয়নি।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, টঙ্গীর নিউ মন্নু ফাইন কটল মিলস লিমিটেড বর্তমানে দৃশ্যত মৃত। এক সময় সচ্ছল এই মিলের কোন বিভাগই এখন আর চলমান নেই। অযত্ন অবহেলায় পরিচর্যার অভাবে সকল মূল্যবান যন্ত্রপাতি এখন ধ্বংসের পথে। এই অচল মিলটির পরিচালনায় আছে ১৫ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ। বর্তমানে এই মিলে কোন শ্রমিক নেই। কাগজে কলমে ৬০ জনের মত কর্মচারী আছে, যা বাস্তবে আরও কম। মিলে গোডাউন করার অনুমতি না থাকলেও মূল্যবান বড় বড় গাছ কেটে তৈরী হয়েছে বড় বড় গোডাউন ও বিভিন্ন স্থাপনা। আর তা ভাড়া দিয়েই চলছে পরিচালনা পর্ষদ। অভিযোগ রয়েছে, যত টাকা ভাড়া উঠে তার যতসামান্য জমা দেয়া হয়, বাকী টাকা লুটপাট হয়ে যায়। এই পদ্ধতিতে কোটি কোটি টাকা ভাড়া তোলে পরিচালনা পর্ষদ আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। এক সময় যারা এই মিলের শ্রমিক ছিলেন তাদের মধ্যে কতিপয় শ্রমিক নামধারী নেতারা পরিচালনা পর্ষদের সাথে থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছেন। বস্তিতে থাকা একাধিক কথিত শ্রমিক নেতা এখন বাড়ি গাড়ি ও বিরাট সম্পদের মালিক।
জানা গেছে, টঙ্গীর নিউ মন্নু ফাইন কটন মিলের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ কোন দিনও শ্রমিক ছিলেন না। জনৈক গনি মিয়া এই মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। ২০১৫ সালে গনি মিয়ার মৃত্যু হলে তার পালিত ছেলে হিসেবে হারুন অর রশিদ প্রভাব খাটিয়ে চেয়ারম্যান হন। তিনি এই প্রতিনিধিকে এমডির সাথে কথা বলতে বলেন।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক(এমডি) মো: মিজানুর রহমান বলেন, এগুলো নিয়ে লেখালেখি করিয়েন না। সরকার বিনা টাকায় মিলটি দেয়ার কথা দিলেও তা রাখেনি। সরকার যদি দেনা মওকুফ করতো তাহলে মিলটি সচ্ছল করা যেতো।
জানা গেলো মিলটির পরিচালনা পর্ষদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমানের ছেলে কাউছার গাজীপুর-২ আসনের বর্তমান সাংসদ ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের এপিএস। কাউছার এই প্রতিনিধিকে বলেন, আমি আমার বাবার সাথে আপনাকে বসিয়ে দিয়ে একটা ব্যবস্থা করছি। একটু অপেক্ষা করেন।
টঙ্গীর নিউ মন্নু ফাইন কটল মিলস লিমিটেডের শেয়ার হোল্ডার খোকন মিয়া বলেন, আমি একশটি শেয়ারের মালিক। আমি মিলের ভেতরে কোয়াটারে থাকি। প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা পরিচালনা পর্ষদকে আনুষাঙ্গিক খরচ দিতে হয়।
আরেক শেয়ার হোল্ডার আনোয়ার হোসেন জানালেন, আমি মিলের জায়গায় ঘর করে থাকি। মাটির ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে এক হাজার টাকা দেই।
শেয়ার হোল্ডার স্বপন জানান, মিল বন্ধ। স্কয়ার ফুট হিসেবে ভাড়া দিয়ে চলছে নিউ মন্নু ফাইন কটল মিলস।