রমজান আলী রুবেল শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ গাজীপুরের শ্রীপুরে মরণব্যাধি ক্যান্সার আক্রান্ত স্বাস্থ্য সহকারী শাহীন আক্তার। চাকুরী করেন উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা সহকারী পদে। বিগত সাতবছর পূর্বে সন্ত্রাসীদের হামলায় গুরুতর আহত হন তিন। একবছর চিকিৎসা জন্য হাসপাতালে বেডে। নিয়মনীতির জন্য একবছরের সরকারি ভেতনভাতা আটকে দেন সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। এরপর সুস্থ হয়ে পূনরায় যোগদান করেন কর্মস্থলে। কিন্তু আটকে যায় একবছরের ভেতনভাতা। আটকে থাকা একবছরের বেতনভাতা পেতে দৌড়াদৌড়ি শুরু হয় সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের ধারে ধারে। এই টেবিল থেলে ঐ টেবিল এই ভাবে চলে যায় কয়েকবছর। সর্বশেষ বিভাগীয় অনুমোদন মিললেও টাকা প্রাপ্তী আটকে গেছে উপজেলা পর্যায়ের বড় স্যারের টেবিলে। টাকার অভাবে চিকিৎসা আটকে গেছে মরণব্যাধি ক্যান্সার আক্রান্ত শাহীনা আক্তারের। বেতন ভাতার অর্ধেক টাকা বড় স্যারকে দিলে মিলবে বকেয়া বেতন। ঘুষ দিতে রাজি না হওয়ায় অনুমোদিত বেতনভাতার ৩ লাখ ১১ হাজার টাকা আটকে রয়েছে কয়েকমাস যাবৎ।
এমন ঘুষ দাবির অভিযোগ উঠেছে শ্রীপুর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. জামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে। তিনি শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন।
ভুক্তভোগী শাহীন আক্তার উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের নান্দিয়া সাঙ্গুন গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা মৃত সামসুদ্দিনের মেয়ে । তিনি শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরিবার পরিকল্পনা সহকারি পদে কর্মরত আছেন।
খোঁজখবর নিয়ে জানাযায়, বিগত ২০১৬ সালে সন্ত্রাসীদের হামলায় গুরুতর আহত হন ভুক্তভোগী শাহীন আক্তার। একবছরের বেশি সময় যাবৎ ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চিকিৎসার সকল ব্যবস্থা করেন। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালেই তিনি সন্তান প্রসব করেন। শারীরিক ভাবে মোটামোটি সুস্থ হয়ে কাজে ফিরলেও আটকা পড়ে একবছরের ভেতনভাতা। মাতৃত্বকালীন ভাতা। এরই মধ্যে তিনি আবার মরণবেদি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। এরই মধ্যে তিনি ২৫টি রেডিও থেরাপি এবং ৮টি কেমু থেরাপি। চিকিৎসকরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু অর্থের কারণে চিকিৎসা সেবা প্রায় বন্ধ। দীর্ঘ কয়েকমাস অফিসে দৌড়াদৌড়ি করেও একবছরের আটকে থাকা বেতনের টাকা পাচ্ছেন না ভুক্তভোগী শাহীন। স্যারের দাবিকৃত টাকা ঘুষ না দিলে বেতনে স্বাক্ষর করবে না বলে প্রতিনিয়ত ঘুরাচ্ছে।
ভুক্তভোগী শাহীন আক্তার অভিযোগ করে বলেন, জামাল স্যারকে বেতন-ভাতার ফাইলে স্বাক্ষর করে দেয়ার জন্য মিষ্টি খাওয়ার জন্য ছয় হাজার টাকা দিয়েছি। আমার মাতৃত্বকালীন ভাতার ২৭ হাজার টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন। গত ১১ ফেব্রুয়ারী টাকা আনতে অফিস যাই। মাতৃত্বকালীন ভাতাসহ ১ লাখ ৬৯হাজার টাকা কেশ হলেও, অফিস সহকারী মাসুদ আমাকে মাত্র পঞ্চাশ হাজার টাকা দেন। টাকা কম দেয়ায় বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বড় স্যারের কথা বলেন। এরপর আমি অফিসে দাড়িয়ে প্রতিবাদ করি। স্যারের দাবী অনুযায়ী অর্ধেক টাকা না দেয়ায় আমাকে কোন টাকা দেননি। জামাল স্যার ক্ষিপ্ত হয়ে আমার ছুটি বাতিল ও বেতন বন্ধের হুমকি দেন। তিনি এই বলে হুমকি দেন যে, কি ভাবে আমি চাকুরী করি সেটাও তিনি দেখে নেবেন। ১ লাখ ৪২ হাজার টাকার অপর একটি বিলও তিনি আটকে রেখেছেন তার টেবিলে। তিনি আরও জানান, এবিষয়ে আমি উর্ধতন কতৃপক্ষের বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের অফিস সহকারি গাজী মাসুদ সাজ্জাদ জানান, শাহিনের বিল পাশ হয়েছে। স্যার আমাকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিতে বলে ছিলেন। টাকা কম দেয়ায় তিনি টাকা নেননি। টাকা কেনো কম দিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমি বলতে পারবো না। স্যার বলতে পারবেন।
পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অভিযুক্ত মো. জামাল উদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কোন টাকা রাখা হয়নি। পুরা টাকাই পাবে। হিসাব রক্ষকের কাছে টাকা আছে। তার টাকা সেই পাবে। কেন টাকা দিতে দেরী করছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেরি হবে কেন ? অফিসে এলেই টাকা নিতে পারবেন। টাকা কম দিচ্ছেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন জবাব দেননি।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর গাজীপুরের উপপরিচালক ফৌজিয়া আসমত মোবাইল ফোনে বলেন, জামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের রিপোর্ট পেলে সে মোতাবেক তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।