ছবি( টঙ্গীর বিসমিল্লাহ -২ ভবন)
টঙ্গী : বেইলী রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের মৃত্যুর পর সারাদেশে চলছে ভবন নির্মানে সরকারী নিয়ম প্রতিপালন নিয়ে হৈ চৈ। চলছে অভিযান। ঠিক এই সময় শিল্পনগরী টঙ্গীতে পাওয়া গেলো সাত বছর আগে নির্মিত ১২ তলা ভবন। ভবনে অগ্নিনির্বাপনের কোন ব্যবস্থা নেই। ফায়ার সার্ভিস নোটিশ দিলেও ছাড়পত্র নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই। এরকম অনেক বহুতল ভবন আছে যেগুলোতে ফায়ার সেফটি নেই।
সরেজমিন টঙ্গীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায় এসব তথ্য।
টঙ্গীর মধুমিতা রোড, আরিচপুর, আউচপাড়া, এরশাদনগর মিলগেট, স্টেশন রোড, হোসেন মার্কেট, সাতাইশ, বনমালা সহ অধিকাংশ জায়গায় গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন। এসব অধিকাংশ ভবনে সরকারি নিয়ম নীতি মানা হয়নি। স্থানীয় প্রভাব ও অনেকজন মিলে বহুতল ভবন নির্মাণ করায় ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত না হওয়াই আইন অমান্যের কারণ। বেশ কিছু জায়গায় গিয়ে দেখা যায়, অনেক ভবন সরকারী রাস্তা দখল করেও গড়ে উঠেছে। দেখভাল করার যেন কেউ নেই। অনেক ক্ষেত্রে আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি পর্যন্ত যাবে না এমন অনেক রাস্তা রয়েছে।
টঙ্গীর গাজীবাড়ি এলাকায় বিসমিল্লাহ -২ নামের ১২ তলা ভবনে গিয়ে দেখা যায়, বহুতল এই আবাসিক ভবনে একটি মাত্র সিঁড়ি। ফায়ার সেফটির কোন ব্যবস্থা নেই।
কাজী বাড়ি এলাকা গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের একটি পুকুর রয়েছে। কাজী বাড়ি পুকুর নামেই এই জায়গার পরিচিতি। পুকরের এক পাশে বিসমিল্লাহ -১ ও আরেক পাশের সামান্য দূরত্বে বিসমিল্লাহ-২ নামের দুটি বহুতল ভবন। ১২ তলা বিশিষ্ট এই দুটি ভবন সাত বছর আগে নির্মান করা। বিসমিল্লাহ -২ ভবনে গিয়ে জানা যায়, ৪৪ জন মিলে সাত বছর আগে ১২ তলা বিশিষ্ট এই ভবন নির্মাণ করেছেন। সরকারী নিয়ম নীতি যথাযথভাবে প্রতিপালনের জন্য স্থানীয় কাউন্সিলরকে একটি ফ্ল্যাট দেয়া হয়েছে। নকশা, ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র, সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব সহ সরকারী বিষয়গুলো তিনি দেখভাল করবেন। দেখা যায়, বহুতল ভবনে একটিমাত্র সিঁড়ি ও গেটের সামনে রাস্তার কিছু অংশও দখল করা। বড় যানবাহন এই রাস্তা দিয়ে সহজে চলাচল করতে পারবে না।
এই ভবনের একটি ফ্ল্যাটের মালিক আঃ আলিম বলেন, আমাদের এই ভবনের ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র নেই। এই বিষয়গুলো দেখভাল করেন ভবন পরিচালনা কমিটি। এছাড়া স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হোসেনের একটি ফ্ল্যাট আছে এখানে। জানা গেলো এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল হোসেন একজন জনপ্রিয় নেতা। বার বার তিনি কাউন্সিলর নির্বাচিত হচ্ছেন। এই কাউন্সিলরকে মোঠোফোনে ফোন দিলে বিসমিল্লাহ -২ ভবনে তার একটি ফ্ল্যাট আছে প্রথমে তিনি মনে করতে পারেননি। তথ্য প্রমান দিলে তিনি বলেন, হ্যাঁ ওই ভবনে আমার একটি ফ্ল্যাট আছে। ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র ও ফায়ার সেফটি নেই কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা কমিটি দেখে, আমি না।
বিসমিল্লাহ-২ ভবনের দারোয়ান রাজু মিয়া বলেন, ফায়ার সার্ভিস আবার কি! আমি কয়েক মাস হলো চাকুরীতে আসছি। এমন নাম শুনিনি।
এ বিষয়ে বিসমিল্লাহ -২ ভবনের পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন মুঠোফোনে বলেন, আমাদের ভবনে ফায়ারের লাইসেন্স বা ছাড়পত্র নেই। নোটিশ পেয়েছি কি না জানা নেই।
টঙ্গী ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের ফায়ার ফাইটার নুরুল হুদা বলেন, বিসমিল্লাহ -২ বহতল ভবনে নোটিশ দেয়া হয়েছে। তারা তোয়াক্কা করে না।
টঙ্গী ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবু মোহা: সাজূেূুদুল কবির জোয়ারদার বলেন, আাবাসিক ভবন ছয় তলার উপরে হলে ছাড়পত্র লাগবে। ভবনে অবশ্যই দুটি সিঁড়ি থাকতে হবে। অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা পর্যাপ্ত থাকতে হবে। এছাড়া অনেক জায়গায় আমাদের গাড়ি পর্যন্ত প্রবেশ করে না। এতে আগুন নেভাতে বেশী বেগ পেতে হয়।