মাসুদ রানা সরকার, বগুড়া জেলা প্রতিনিধি ঃ বগুড়ার গাবতলীতে বিরল প্রজাতির তক্ষকসহ লেবু মিয়া (৫৫) নামের ব্যক্তিকে আটক করেছে গাবতলী মডেল থানা পুলিশ। এই তক্ষকের দাম প্রায় ১ কোটি টাকা হতে পারে বলে জানান সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (গাবতলী সার্কেল) নিয়াজ মেহেদী ও থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ। গত রবিবার,১৯ ফেব্রুয়ারিতে রাত আনুমানিক ৯.৩৫pmটার দিকে গাবতলী পৌরসভাধীন পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত শামসুল ফকিরে ছেলে লেবু মিয়ার বাড়ি থেকে তক্ষকসহ তাকে আটক করা হয়। তক্ষকটির দৈর্ঘ্য অনুমান ১১ইঞ্চি এবং ওজন ২০০গ্রাম। সংবাদ সম্মেলনে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (গাবতলী সার্কেল) নিয়াজ মেহেদী জানান, গোপন সংবাদ পাওয়া যায় যে, গাবতলী পূর্বপাড়ার একটি বাড়িতে বিপন্ন প্রজাতির তক্ষক চড়া মূল্যে কেনা-বেচা হচ্ছে। উক্ত সংবাদ পেয়ে থানার একটি চৌকস দল ওই গ্রামের লেবু মিয়ার বাড়ীতে উপস্থিত হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ওই বাড়ী থেকে বেশ কয়েক জন পালিয়ে গেলেও লেবু মিয়াকে ১টি তক্ষক সদৃশ বন্যপ্রাণীসহ আটক করা হয়। আটক লেবু মিয়াকে তার হেফাজতে পাওয়া তক্ষকের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে কোন সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি। তখন খাচাসহ তক্ষকটি জব্দ করা হয়। আটককৃত লেবু মিয়া কোন চোরাচালান চক্রের হোতা। বিরল প্রজাতির এই বন্যপ্রাণী নাকি আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা ও আধুনিক চিকিৎসার ঔষুধ তৈরিতে ব্যবহার হয়। হাঁপানি, এইডস ও ক্যান্সারের ঔষুধ তৈরিতে এর জনশ্রুতি থাকায় সুদুর চীন দেশে এর চাহিদা নাকি সবচেয়ে বেশি। আটককৃত লেবু মিয়াকে গতকাল সোমবার বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়েছে এবং আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে তক্ষকটি বন বিভাগের নিকট হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ, ওসি (তদন্ত) শুকুর আলীসহ এসআই ও এএসআইবৃন্দ। এদিকে জব্দকৃত এই তক্ষক নিয়ে গুগলে একটু অনুসন্ধানে বেরিয়ে এলো অন্যরকম তথ্য। তক্ষক দিয়ে ক্যান্সারের মূল্যবান ওষুধ তৈরি হয়; তক্ষক ঘরে থাকলে লাখ লাখ টাকা আসে; প্রতিবেশী দেশে এর ব্যাপক চাহিদা; মাথার ম্যাগনেটের দাম কোটি টাকা এমন গুজবের ওপর ভর করে দেশজুড়ে সংঘবদ্ধ চক্র নির্বিচারে তক্ষক ধরছে। কেউ কেউ তক্ষকের কঙ্কাল বিক্রি করে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। বন্যপ্রাণী অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ইউনিট প্রায়ই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তক্ষক উদ্ধার করছে। গুজবে ভর করে বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী তক্ষক শিকার অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে অনেক জনপদ তক্ষকশূন্য হয়ে পড়েছে। ২০০ গ্রাম ওজনের তক্ষকের দাম এক কোটি টাকা এমন গুজবের ওপর ভর করে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার স্বপ্নে অনেকেই এখন তক্ষকের পিছু ছুটছে।
এ ব্যাপারে প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের একজন প্রফেসর জানিয়েন, ‘টিকটিকির চেয়ে বড় এই প্রাণীটি সরীসৃপ। এর ডাকনাম তক্ষক। আরেক নাম সান্ডা। আর বৈজ্ঞানিক নাম বেশশড় মবপশড়। প্রাণীটি নিশাচর, টক টক শব্দ করে ডাকে বলে এর নাম হয়েছে তক্ষক। প্রাণীটি ঝোপঝাড়, গাছের গুঁড়ি, দালানের ভগ্নস্তুুপে দলবদ্ধভাবে বাস করে। এরা পোকামাকড় খায়। কিন্তু এরা মহামূল্যবান প্রাণী নয়। তক্ষক বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী। প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তক্ষকের দাম কোটি টাকা নয়। এর দাম পাঁচ-দশ টাকাও হবে না। কারণ তক্ষকে মূল্যবান কিছুই নেই। বরং সমানে তক্ষক নিধনের কারণে প্রাণীটির বিলুপ্তি ঘটবে। ক্যান্সারের ওষুধ কিংবা কেমো— কোনো কিছুই তক্ষক দিয়ে তৈরি হয় না।