শাহজাদপুরে যমুনা নদীতে ভাঙন, ৭ গ্রামের ২ শতাধিক বাড়ি-ঘর বিলিন হওয়ার পথে

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি


মাসুদ রানা সরকার :অসময়ে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের ৩টি ইউনিয়নে যমুনা নদীতে ভাংগন হওয়ার দেখা দিয়েছে। গত দুই মাসে নদীভাংগনে তিন ইউনিয়নের ৭ গ্রামের প্রায় ২ শতাধিক বাড়ি-ঘর ও ৩শত বিঘা ফসলি জমিসহ গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এদিকে, ভাঙণের কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদীরপাড়ের শত শত পরিবার। ভাঙ্গনে ঘর-বাড়ি হারিয়ে অনেকেই খোলা আকাশের নিচে বাস করছেন।সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারী/২৪ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভাঙ্গন কবলিত জালালপুর, খুকনি ও কৈজুরি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে হাটপাচিল পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে ভাঙ্গনের তাণ্ডব। এতে ব্রাহ্মণগ্রাম, আরকান্দি, পাড়ামোহনপুর, জালালপুর, পাকুরতলা, সৈয়দপুর ও হাটপাচিল গ্রামের ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।নদী ভাংগনে সহায় সম্বল হারানো জালালপুর গ্রামের আব্দুস সালাম, আব্দুল হাই, পাকুরতলা গ্রামের আশরাফ আলী বলেন, অসময়ে নদীতে ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই একের পর এক গ্রামে ভাঙ্গন চলছে। এতে নদীর পেটে চলে যাচ্ছে ফসলি জমিসহ বাড়ি-ঘর। ভাঙ্গনে এসকল গ্রামের মানুষেরা সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছে। অনেকের দিন কাটছে ভাঙন এলাকার খোলা আকাশের নিচে। অনেকে আবার অন্যত্র চলে যাচ্ছে জীবিকার তাগিদে।হাটপাচিল গ্রামের আব্দুল মজিদ ও নুরনবী বলেন, চোখের সামনে বাড়ি-ঘর রাক্ষসী যমুনার পেটে যাচ্ছে। দুচোখ দিয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করতে পারছি না আমরা। গত বর্ষা মৌসুমে স্থানীয় প্রভাবশালীরা নদী থেকে অতিরিক্ত মাত্রায় বালু উত্তোলন করায় এবং বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর উজান থেকে উত্তোলন করা বালুবাহী ২ শতাধিক বাল্কহেড উচ্চ গতিতে যমুনা নদীর এই স্থান দিয়ে চলাচল করায় তীব্র ঢেউয়ের আঘাতে নদীর পশ্চিম তীরের তলদেশে বালুর স্তর সরে যাওয়ায় এই ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। আমরা এসব বাল্কহেড চলতে নিষেধ করলে প্রভাবশালীরা আমাদের প্রাণনাশের হুমকিসহ নানাভাবে হয়রানি করে থাকে।ভাঙ্গংগন কবলিত এলাকারবাসী সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৩ বছর আগে ভাঙনরোধে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড ৪৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। কিন্তু গত ৩ বছরে নাম মাত্র কিছু সিসি ব্লক তৈরি ছাড়া কাজের আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। ফলে সময় ও অসময়ে ভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে স্থানীয়রা। ভাঙনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছিলে সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের সংসদ সদস্য চয়ন ইসলাম। তিনি ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে ও অসহায় মানুষের কষ্টের কথা শুনে দুঃখ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় সরকারের প্রকল্পের কাজ চলছে। তবে কিছু কিছু ঠিকাদার ঠিকমতো কাজ না করায় তাদের বিরুদ্ধে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তবে সিংহভাগ কাজ চলমান। আশা করি চলতি বছরের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের সংসদ সদস্য চয়ন ইসলাম বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন ও অসহায় মানুষের কষ্টের কথা শুনে পানি সম্পদমন্ত্রী ও সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই পানি উন্নয়ন বোর্ড ৪৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে ৩ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত সিসি ব্লক স্থাপন করে তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করবে। বাকি অংশের ভাঙনরোধে এ বছর ১০ হাজার জিওটেক্স টিউব ব্যাগ ফেলা হবে। পরবর্তী বছরে ওই অংশেও সিসি ব্লকের কাজ সম্পন্ন করা হবে। এ ছাড়া হাটপাচিল থেকে ঠুটিয়া স্কুল পর্যন্ত বাঁধ সংস্কার করা হবে। এ কাজ শেষ হলে আগামীতে শাহজাদপুরে কোনো ভাঙ্গণ থাকবে না ইনশাহ আল্লাহ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *