বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের প্রস্তুতি চলছে জোরেশোরে

Slider জাতীয়
Exif_JPEG_420

টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি : নজিরবিহীন নিরাপত্তায় শান্তিপূর্ণভাবে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শেষ হয়েছে গত রোববার। অনেকটা অগোছালো অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে কাল শুক্রবার শুরু হচ্ছে দিল্লির নিজামউদ্দিন মারকাজের মাওলানা সা’দ আহমদ কান্ধলবী অনুসারিদের বিশ্ব ইজতেমা। এটি ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দফা। এজন্য গতকাল মঙ্গলবার থেকেই টঙ্গী তুরাগ নদের তীরের বিশাল ময়দানে দ্বিতীয় পর্বের প্রস্তুতি কাজ জোরেশোরে শুরু করা হয়েছে। চলছে ময়দান পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ। প্রথম পর্বের লাখো লাখো মুসল্লিদের ফেলে যাওয়া উচ্ছিষ্ট, কাগজ, পলিথিন, বিছানার হোগলা ইত্যাদি এক জায়গায় জড়ো করে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা হচ্ছে। ঝাড়-মুছ করা হচ্ছে ১৬০ একর ময়দানে তৈরী সুবিশাল সামিয়ানার নিচ। ইজতেমা ময়দানের চারপাশে তৈরি করা হাজার হাজার কাঁচা-পাকা বাথ রুম, ওজু-গোসল ও রান্না-বান্নার স্থান ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করা হচ্ছে। এছাড়া ছিড়ে যাওয়া, খসে পড়া চট ঠিক করে বাধাসহ নতুন করে সাজানো হচ্ছে। পুরো ময়দানকে ৮৯ খিত্তায় সাজানো হচ্ছে। এসব কাজগুলো জামাতবন্দী মুসল্লিরা স্বেচ্ছাশ্রমে করছেন।

বুধবার বিকাল থেকে শুরু হয়েছে ইজতেমা ময়দানমুখো মুসল্লিদের ঢল। ট্রেন, বাস, ট্রাক, ট্যাক্সি, পিকআপ, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার যোগে এবং যানজট এড়াতে আশপাশের এলাকা থেকে পায়ে হেঁটে হেঁটে, নৌ পথে এবং আকাশ পথে (বিদেশী মেহমান) ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে সমবেত হচ্ছেন। গত পর্বের ন্যায় এবারো ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের সমাগমে টঙ্গীর ছোট্ট এই শিল্প শহরটি যেন জনসমুদ্রে পরিণত হতে চলেছে। ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ২ সহ¯্রাধিক বিদেশি মুসল্লি বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের বিদেশি নিবাসে এসে অবস্থান নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়কারী মোহাম্মদ সায়েম।

ইজতেমা ময়দানে লাখো মুসল্লির সমাগমকে কেন্দ্র করে টঙ্গী, উত্তরা, তুরাগ, কামারপাড়া, আব্দুল্লাহপুরসহ বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ভাসমান দোকানপাট ও হোটেল-রেস্তোরাঁ। কাল শুক্রবার থেকে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই বয়ান শুরু হবে। আগামী রবিবার আখেরি মোনাজাত পর্যন্ত তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় দেশি-বিদেশি মাওলানা ও বুজুর্গ মুরুব্বিরা বিভিন্ন ভাষায় পর্যায়ক্রমে মূল্যবান বয়ান করবেন। রবিবারের আখেরি মোনাজাতে ২০/২৫ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশ নেবেন বলে আয়োজকদের ধারণা।

এদিকে প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমা যেভাবে পরিচালিত হয়েছে একইভাবে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমাও পরিচালিত হবে বলে ইজতেমা পরিচালনা কমিটিসহ স্থানীয় জেলা প্রশাসক, সিটি করপোরেশনের মেয়র, স্বাস্থ্য অধিদফতর, ফায়ার সার্ভিস, আইন-শৃঙ্খখলা বাহিনী- র‌্যাব, পুলিশ, সিটিএসবি, ডিএসবিসহ বিভিন্ন অধিদফতর জানান। ইজতেমা চলাকালীন ট্রাফিক ও যাতায়াত ব্যবস্থা আগের মতোই থাকবে বলে জানা গেছে।
দ্বিতীয় পর্বে খিত্তাওয়ারি মুসল্লিদের অবস্থান : এবছর দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা যেসমস্ত খিত্তায় অবস্থান করবেন তা হলো- মিরপুর (খিত্তা-১, ২), সাভার (খিত্তা-৩ ও ৪), টঙ্গী (খিত্তা-৫), উত্তরা (খিত্তা-৬), উত্তরখান, দক্ষিনখান (খিত্তা-৭), মহাখালী, বাড্ডা (খিত্তা-৮), তেজগাঁও, রামপুরা (খিত্তা-৯), বনশ্রী, বাসাবো, মুগদা (খিত্তা-১০), পল্টন, গুলিস্থান, কাকরাইল (খিত্তা-১১), গেন্ডারিয়া, সূত্রাপুর (খিত্তা-১২), লালবাগ (খিত্তা-১৩), বুয়েট মেডিকেল, ধানমন্ডী (খিত্তা-১৪), মোহাম্মদপুর (খিত্তা-১৫), যাত্রাবাড়ি (খিত্তা-১৬), ডেমড়া (খিত্তা-১৭), মিকাইল (খিত্তা-১৮), কেরানীগঞ্জ (খিত্তা-১৯), ধামরাই (খিত্তা-২০) নবাবগঞ্জ (খিত্তা-২১), দোহার (খিত্তা-২২), রাজবাড়ি (খিত্তা-২৩), গোপালগঞ্জ (খিত্তা-২৪), ফরিদপুর (খিত্তা-২৫), মাদারীপুর (খিত্তা-২৬), শরীয়তপুর (খিত্তা-২৭), নরসিংদী (খিত্তা-২৮), কিশোরগঞ্জ (খিত্তা-২৯), নারায়নগঞ্জ (খিত্তা-৩০), মানিকগঞ্জ (খিত্তা-৩১), টাঙ্গাইল (খিত্তা-৩২), মুন্সিগঞ্জ (খিত্তা-৩৩), গাজীপুর (খিত্তা-৩৪), দিনাজপুর (খিত্তা-৩৫), নাটোর (খিত্তা-৩৬), মৌলভীবাজার (খিত্তা-৩৭), জয়পুরহাট (খিত্তা-৩৮), নওগাঁ (খিত্তা-৩৯), সিরাজগঞ্জ (৪০), খুলনা (খিত্তা-৪১), সিলেট (খিত্তা-৪২), চাপাইনবাবঞ্জ (খিত্তা-৪৩), রাজশাহী (খিত্তা-৪৪), বি.বাড়ীয়া (খিত্তা-৪৫), চাঁদপুর (খিত্তা-৪৬), কুমিল্লা (খিত্তা-৪৭), খাগড়াছড়ি (খিত্তা-৪৮), নেত্রকোনা (খিত্তা-৪৯), ময়মনসিংহ (খিত্তা-৫০), জামালপুর (খিত্তা-৫১), সুনামগঞ্জ (খিত্তা-৫২), হবিগঞ্জ (খিত্তা-৫৩), শেরপুর (খিত্তা-৫৪), কক্সবাজার (খিত্তা-৫৫), রাঙ্গামাটি (খিত্তা-৫৬), বান্দরবন (খিত্তা-৫৭), চট্টগ্রাম (খিত্তা-৫৮), নোয়াখালী (খিত্তা-৫৯), ফেণী (খিত্তা-৬০), লক্ষ্মীপুর (খিত্তা-৬১), পিরোজপুর (খিত্তা-৬২), বরগুনা (খিত্তা-৬৩), ঝালকাঠি (খিত্তা-৬৪), পটুয়াখালী (খিত্তা-৬৫), ভোলা (খিত্তা-৬৬), বরিশাল (খিত্তা-৬৭), কুষ্টিয়া (খিত্তা-৬৮), চুয়াডাঙ্গা (খিত্তা-৬৯), বাগেরহাট (খিত্তা-৭০), নড়াইল (খিত্তা-৭১), বগুড়া (খিত্তা-৭২) যশোহর (খিত্তা-৭৩), মাগুড়া (খিত্তা-৭৪), ঝিনাইদহ (খিত্তা-৭৫), সাতক্ষীড়া (খিত্তা-৭৬), মেহেরপুর (খিত্তা-৭৭), নীলফামারী (খিত্তা-৭৮), পাবনা (খিত্তা-৭৯), রংপুর (খিত্তা-৮০), লালমনিরহাট (খিত্তা-৮১), ঠাকুরগাঁও (খিত্তা-৮২), গাইবান্ধা (খিত্তা-৮৩), পঞ্চগড় (খিত্তা-৮৪) ও কুড়িগ্রাম (খিত্তা-৮৫)। এছাড়া ৮৬, ৮৭, ৮৮ ও ৮৯ নং খিত্তাগুলো সংরক্ষিত খিত্তা হিসেবে রাখা হয়েছে এবং তুরাগ নদের পশ্চিম পাড়ে ১০টি অতিরিক্ত খিত্তা করা হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা তাদের নিজ নিজ খিত্তায় অবস্থান নিয়ে ইবাদত বন্দেগী ও আল্লাহুর জিকিরে মশগুল থাকবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *