টঙ্গী : এবারের বিশ্ব ইজতেমায় কয়েক হাজার ভিক্ষুক এসেছিল সারাদেশ থেকে। ময়দানে প্রবেশের, ছোট বড় ৬০ টি প্রবেশ পথেই ছিল শত শত ভিক্ষুক। এত বেশী ভিক্ষুক আগে কোন ইজতেমায় দেখেনি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিন ইজতেমা ময়দান ও আশপাশ এলাকায় ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
টঙ্গী স্টেশন রোডের চায়ের দোকানী সহিদ মিয়া বলেন, সারাদিন ভিক্ষুক থাকে। এবারের ইজতেমায় যে পরিমান ভিক্ষুক দেখলাম তা আগে কখনো দেখিনি।
টঙ্গী বাজারের কোকারিজ ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল বলেন, কাস্টমারের সাথে ভিক্ষুকও প্রবেশ করে। আমরা অতিষ্ঠ।
টঙ্গী নতুন বাজারের ফল ব্যবসায়ী সোহেল জানান, কস্টমার ফল কিনে টাকা দেয়ার সময় ভিক্ষুক হাত পেতে রাখে। এত কাস্টমার বিব্রত হন।
চেরাগ আলীর হোটেল মালিক ইদ্রিস মিয়া বলেন, কাস্টমার খাওয়ার সময় ভিক্ষুকরা চেয়ে থাকে। আবার বিল দেয়ার সময় ভিক্ষুক হাত পেতে রাখে। এটা আমাদের জন্য মারাত্মক ক্ষতি। এতে কাস্টমার অনিরাপদ ভেবে পরে আর আসতে চায় না।
ভিক্ষুক জিয়ারুল (৪৫)। রংপুর জেলার গঙাচরা থানার খাপিখাল গ্রামের আজিজার হোসেনের ছেলে। তার হাত পা কিছুই নেই। জন্ম থেকেই তিনি হাত পা ছাড়া। দুই ভাইয়ের মধ্যে এক ভাই সুস্থ আর জিয়ারুল জন্ম থেকে পঙ্গূ। দুই হাত ও দুই পা না থাকায় হামাগুড়ি দিয়ে চলতে হয় তাকে। এক নিকটাত্মীয় তাকে ইজতেমায় নিয়ে এসেছে। ইজতেমায় লাখ লাখ মানুষ হবে। এখানে বেশী টাকা পাওয়া যাবে, তাই তিনি ইজতেমায় এসেছেন।
বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দিন শনিবার রাতে টঙ্গীর ইজতেমা ময়দান সংলগ্ন কামার পাড়া রোডে জিয়ারুলকে পাওয়া যায়। তিনি লাখ লাখ মানুষের মাঝে হামাগুড়ি দিয়ে চলছেন। পথচারীরা তাকে যার যার সাধ্যমত সাহায্য করছেন। অনেকে আবার এই দৃশ্য মোবাইলে ক্যামেরা বন্দিও করছেন।
জিয়ারুল কালের জানান, প্রতি বছর তিনি ইজতেমায় আসেন। এখানে অনেক লোক এক সাথে পাওয়া যায়। তাই বেশী টাকা পাওয়া দেয়। তিনি বলেন, ইজতেমায় মানুষ ইবাদত বন্দেগী করতে আসে। আমি গরীব ও অচল মানুষ। তাই মুসল্লিরা আমাকে সাহায্য করবে এই আশায় আছি। ইজতেমা থেকে যা পাই তা দিয়ে কয়েক মাস ভাত খেয়ে বাঁচতে পারি।
এক হাত নেই আমেনা খাতুনের। বাড়ি জামালপুর জেলায়। প্রতি ইজতেমায় ভিক্ষা করতে আসেন। এক সাথে ১৬ জন এসেছেন তারা।
রংপুরের কাউনিয়ার হাদিস মিয়া (৫০)। দুই হাত নেই তার। রংপুর থেকে এক সাথে ১২ জন এসেছেন ইজতেমায়। প্রতি বছরই তারা দল বেঁধে আসেন ইজতেমায়।